if you want to remove an article from website contact us from top.

    অতঃপর কবি এসে দাড়ালেন জনতার মঞ্চে

    Mohammed

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    এই সাইট থেকে অতঃপর কবি এসে দাড়ালেন জনতার মঞ্চে পান।

    স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো

    একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-...

    দশদিক

    স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো

    প্রকাশ: ০৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০

    স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো

    নির্মলেন্দু গুণ

    একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে

    লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে

    ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-

    'কখন আসবে কবি?' 'কখন আসবে কবি?'

    এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

    এই বৃক্ষে- ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,

    এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।

    তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

    তাহলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,

    ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?

    জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে

    হয়েছে উদ্যত কালো হাত।

    তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ

    কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,

    বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,

    উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,

    মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ...।

    হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,

    শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি

    একদিন সব জানতে পারবে,- আমি তোমাদের কথা ভেবে

    লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।

    সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর;

    না পার্ক না ফুলের বাগান,- এসবের কিছুই ছিল না,

    শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে রকম, সে রকম দিগন্ত প্লাবিত

    ধু-ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।

    আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশে ছিল

    এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।

    কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল

    কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে

    এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে

    এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক, হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে

    এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা,

    ভবঘুরে আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

    একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের।

    'কখন আসবে কবি?' 'কখন আসবে কবি?'

    শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

    তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,

    হৃদয়ে লাগিল দোলা,

    জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা- ;

    কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?

    গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর

    অমর কবিতাখানি:

    'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

    এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

    সেই থেকে 'স্বাধীনতা' শব্দটি আমাদের।

    'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো' কবিতার প্রেক্ষাপট

    ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণটি মঞ্চের সামনে থেকে শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি একটি পত্রিকার জন্য রিপোর্ট লিখতে সেখানে গিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাসবিকৃত হওয়া শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে এমনভাবে নিয়ে আসা হয়, যেন জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন! তখন আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কবিতাটি লেখার তাগিদ অনুভব করি।

    আসলে আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল একটি কবিতা। এই ভাষণটি কাব্যসমৃদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে মার্কিন সাপ্তাহিক 'টাইমস' পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর 'পয়েট অব পলিটিকস' শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ স্টোরি করেছিল। এমনকি মার্কিনরাও এই ভাষণ স্টাডি করে তার মধ্যে কবিতার সন্ধান পেয়েছিল। ভাষণটি স্বয়ং একটি কবিতা হওয়ায় তা নিয়ে কবিরা খুব বেশি কোনো কবিতা লেখেননি। এই ভাষণে ১০৩টি লাইন আছে। ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্য। ভাষণটি তিনি এমন চমৎকারভাবে দিয়েছিলেন, প্রথমেই 'ভায়েরা আমার' বলে যে সম্বোধন করলেন, মনে হলো, যেন হাজার বছরের বাঙালির যে ভালোবাসার তৃষ্ণা এবং যে প্রত্যয় নির্ভরতা, যার স্বপ্ন দেখেছে সে, সেই নেতা এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১০ লাখ লোক একসঙ্গে লাফিয়ে উঠছিল। সব মানুষ যেন আনন্দে উত্তেজনায় একাকার। তাদের নেতার উপস্থিতিতে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করছিল তারা। এটি একটি অবিস্মরণীয় ভাষণ।

    শ্রুতলিখন : মাহমুদ শাওন

    টপিক

    স্বাধীনতা সম্পর্কিত খবর

    হিজাব নিষিদ্ধ ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন : যুক্তরাষ্ট্র, অভ্যন্তরীণ বিষয় : ভারত

    ১ বছর আগে

    ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাওয়া হাকিমিকে দুয়ো দিল ইসরায়েলের দর্শকরা!

    ৫ মাস আগে

    মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

    ১১ মাস আগে

    অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৭ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ

    ১ বছর আগে

    সর্বশেষ সংবাদ

    হত্যার পর রাজীবের মরদেহ গাছে বেঁধে রাখা হয়

    শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের মালামাল ফিরিয়ে দেওয়া হোক : হিরো আলম

    মানিক অধ্যায় শেষ, মোহামেডানের কোচ আলফাজ

    ফুড ব্লগার আর ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে রাঁধুনীর বারবিকিউ পার্টি

    বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যা বললেন মেসি

    বিজেপি চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না : রাহুল গান্ধী

    বেইলি ব্রিজ ভেঙে ট্রাক নদীতে, সাজেকের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

    সীতাকুণ্ডের কেশবপুর গ্রামটিই যেন গ্যাস চেম্বার

    সূত্র : www.kalerkantho.com

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন

    শান্তা আক্তার : একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের/ কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি?/ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। কবি নির্মলেন্দু গুনের এই কবিতাটি স্মরণ করিয়ে দেয় এক রাজনৈতিক কবিতার কথা। এই কবিতাটি দৃপ্ত কন্ঠে শুনিয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত ...

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন

    প্রকাশের সময় : মার্চ ৭, ২০১৯ ৭:১৭ অপরাহ্ণ

    6 SHARES Share to Facebook Share to Twitter Share to Print Share to Email Share to More শান্তা আক্তার :

    একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের/ কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি?/ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। কবি নির্মলেন্দু গুনের এই কবিতাটি স্মরণ করিয়ে দেয় এক রাজনৈতিক কবিতার কথা। এই কবিতাটি দৃপ্ত কন্ঠে শুনিয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমান। এই কবিতায় মোহমুগ্ধ বাঙালি উদ্দীপ্ত হয়েছিলো শোষণের বিরুদ্ধে জেগে উঠার মুলমন্ত্রে।

    আজ ৭ মার্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ উজ্জীবিত করেছে বাঙালিকে। তিনি শুনিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণের ১০৩ লাইন, ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রতিটি শব্দই ছন্দে ছন্দে হয়ে উঠেছে পুরো একটি কবিতা। কবি নির্মলেন্দু গুন এই ভাষণকে বলছেন, এটি সাধারণ কোন ভাষণ নয়, এটি একটি কবিতা। এই ভাষণটি সত্যিই ছিল কাব্যসমৃদ্ধ। এই ভাষণকে মার্কিন সাপ্তাহিক পত্রিকা টাইমস ‘বঙ্গবন্ধুর পয়েট অব পলিটিকস’ শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ স্টোরি করেছিল। মার্কিনিরা এই ভাষণকে স্টাডি করে এতে পেয়েছিলেন কবিতার সন্ধান।

    নেতার উপস্থিতি আর কাব্যময়ী ভাষণে উজ্জীবিত জাতি পরবর্তীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে। নির্মলেন্দু গুন বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ যেমন বাঙালির কবি, বঙ্গবন্ধু তেমন বাঙালির রাজনৈতিক কবি। নির্মলেন্দু গুনের কবিতার ভাষায়……..

    স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’

    একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে

    লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে

    ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-

    ‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’

    এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

    এই বৃক্ষে- ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,

    এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।

    তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

    তাহলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,

    ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?

    জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে

    হয়েছে উদ্যত কালো হাত।

    তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ

    কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,

    বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,

    উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,

    মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ…।

    হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,

    শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি

    একদিন সব জানতে পারবে,- আমি তোমাদের কথা ভেবে

    লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।

    সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর;

    না পার্ক না ফুলের বাগান,- এসবের কিছুই ছিল না,

    শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে রকম, সে রকম দিগন্ত প্লাবিত

    ধু-ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।

    আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশে ছিল

    এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।

    কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল

    কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে

    এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে

    এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক, হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে

    এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা,

    ভবঘুরে আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

    একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের।

    ‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’

    শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

    তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,

    হৃদয়ে লাগিল দোলা,

    জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা- ;

    কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?

    গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর

    অমর কবিতাখানি:

    ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

    এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

    সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।

    সূত্র : culturalyard.com

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন...

    দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব বাংলা পরিণত হয় একটি অগণতান্ত্রিক–স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে। দীর্ঘ ২৩ বছর চলতে থাকে এভাবে। অবশেষে সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় বঙ্গবন্ধুর দল। তিনি রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। পাকিস্তান সরকার কোনোভাবেই এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। প্রতিদিন খারাপ হতে থাকে দেশের অবস্থা। এমন একটি পরিস্থিতিতে ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়া ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সামনে আর কোনো উপায় থাকে না। ৭ মার্চ তিনি স্মরণকালের এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন।

    নাগরিক সংবাদ

    অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন...

    আশফাকুজ্জামান

    প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১১: ৪০

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি সংগৃহীত

    দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব বাংলা পরিণত হয় একটি অগণতান্ত্রিক–স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে।

    দীর্ঘ ২৩ বছর চলতে থাকে এভাবে। অবশেষে সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় বঙ্গবন্ধুর দল। তিনি রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। পাকিস্তান সরকার কোনোভাবেই এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। প্রতিদিন খারাপ হতে থাকে দেশের অবস্থা। এমন একটি পরিস্থিতিতে ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়া ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সামনে আর কোনো উপায় থাকে না। ৭ মার্চ তিনি স্মরণকালের এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। এটি ছিল এমন একটি ভাষণ, যা বাংলার কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়।

    ১৯৩৪ সাল। তখন শেখ মুজিবুর রহমান সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ সময় হার্ট ও চোখের সমস্যায় তাঁর পড়াশোনা বন্ধ থাকে প্রায় চার বছর।

    এলাকায় তখন ঘরে ঘরে স্বদেশি আন্দোলন। ইংরেজ–আতঙ্ক। রোজ সভায় যান শেখ মুজিবুর রহমান। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। এ দেশে তাদের থাকার অধিকার নেই, আনতে হবে স্বাধীনতা। তখনই তাঁর এই চিন্তা। এভাবেই ছাত্ররাজনীতির শুরু। এ সময় গোপালগঞ্জের এসডিও বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে তাঁর দাদাকে হুঁশিয়ারি দেন।

    ১৯৩৭ সালে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে। ১৯৩৮ সাল, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শ্রমমন্ত্রী। দুজনই এক জনসভায় গোপালগঞ্জ আসবেন। সে কী উত্তেজনা! দুজনই এলেন। বিভিন্ন শঙ্কার মধ্যেও শান্তিপূর্ণ সভা হলো। পাবলিক হল দেখতে গেলেন হক সাহেব। আর সোহরাওয়ার্দী এলেন মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হয় সোহরাওয়ার্দীর।

    ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি: সংগৃহীত

    তিনি বঙ্গবন্ধুকে খুব পছন্দ করেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও বুদ্ধিজ্ঞানে মুগ্ধ হন।

    লিখে নেন নাম–ঠিকানা। চলতে থাকে যোগযোগ। এভাবেই একদিন বঙ্গবন্ধুর ছাত্ররাজনীতির সূচনা হয়েছিল। তাঁর অসীম সাহস দেখে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সেদিন অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। তখন কে জানত, এই সাহসী সন্তানই একদিন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন।

    নদীবিধৌত এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেও শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছেন বিশ্বমানব। উপমহাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদের একজন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এ ভাষণ এখন আর বাংলার মানুষের একার নয়, এটি পৃথিবীর নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। দেশ ও পৃথিবীর মানুষের কাছে এ ভাষণ এক বিস্ময়।

    বিশিষ্টজনেরা এ ভাষণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দারুণ সব মন্তব্য করেছেন। সেগুলো হলো:

    বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ একটি নিরস্ত্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। ১৮ মিনিটের ওই ভাষণ ছিল অলিখিত। তিনি সারা জীবন যা বিশ্বাস করতেন, সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাঁকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি। তাঁর এই সতর্ক কৌশলের কারণেই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা করতে পারেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও শেখ মুজিবকে বুদ্ধিমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেল, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’

    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি: পিআইডি

    কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘শুধু আমি নই, পশ্চিমা বিশ্বও বঙ্গবন্ধুকে পোয়েট অব পলিটিক্স বলেছে।’ কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে দেখেছেন অমর কবিতা হিসেবে। আর কবি হিসেবে অভিহিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। তিনি তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে ‘কবি’ বলেছেন। এ কবিতার প্রায় শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘কখন আসবে কবি’। একেবারে শেষে পঙক্তিতে লিখেছেন, ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন...। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

    প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে একবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু নয়, বরং ইউনেসকোই এই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত হয়েছে। কারণ, এখন তাদের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণটি আছে। এমনটা তারা বলতে পারবে।’

    আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘বাঙালির শ্রেষ্ঠ কাব্য চর্যাপদ নয়, বৈষ্ণব গীতিকা নয়, সোনার তরী কিংবা গীতাঞ্জলি কোনোটা নয়, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগীতি হলো “আর দাবায়া রাখতে পারবা না”।’

    বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকো ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ স্বীকৃতি দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে গেল। এটা শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি নয়, দেশের জন্যও এক বড় স্বীকৃতি। এখন এটাকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি বিশ্বের নির্যাতিত–নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন।

    ২০১৫ সালে কানাডার একজন অধ্যাপক সারা বিশ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে একটা গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানেও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল। তখন একাডেমিক স্বীকৃতি পেলেও এবার পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি৷’

    সূত্র : nagorik.prothomalo.com

    আপনি উত্তর বা আরো দেখতে চান?
    Mohammed 25 day ago
    4

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    উত্তর দিতে ক্লিক করুন