আখ চাষের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি কোনটি
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে আখ চাষের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি কোনটি পান।
আখ চাষ পদ্ধতি
আখ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। এটি চিনি উৎপাদনের মূল ফসল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আখ উৎপাদন অনেক কম। এর কারণও অনেক। যেমন- সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বৈচিত্র্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি ফলের বাগান তৈরী ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রসে
মূলপাতা > ডিসেম্বর ২০১৭ > ক্ষেত-খামার
আখ চাষ পদ্ধতি
2698 বার পঠিতআখ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। এটি চিনি উৎপাদনের মূল ফসল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আখ উৎপাদন অনেক কম। এর কারণও অনেক। যেমন- সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বৈচিত্র্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি ফলের বাগান তৈরী ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রসে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান। পরিপক্ক আখে শতকরা ৮০ ভাগ পানি, ৮-১৬ ভাগ সুক্রোজ, ০.৫-২ ভাগ রিডিউসিং সুগার এবং ০.৫-১ নন সুগার থাকে।
মাটি নির্বাচন : প্রায় সব ধরনের জমিতে আখের চাষ করা যায়। তবে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমে থাকে না। তাছাড়া আখ উৎপাদনের উপযুক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল, দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।জাত নির্বাচন : আমাদের দেশে আখের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঈশ্বরদী ২/৫৪, ঈশ্বরদী ১৬, ২০, ৩২-৪০, বিএসআর আই আখ ৪১-৪৪ অমৃত ইত্যাদি।জমি প্রস্ত্তত : আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি, লম্বা ও ঘন শেকড় বিশিষ্ট ফসল। সেজন্য আখের জমি গভীর করে ৫/৬টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরী করতে হবে। এসময় একরপ্রতি ৪ টন গোবর বা আর্বজনা সার দেওয়া ভাল।রোপণের সময় : অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে চারা রোপণের উত্তম সময় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। হেক্টর প্রতি ৩০-৩৫ হাযার কাটিং বা সেট বীজ প্রয়োজন হয়।সারের পরিমাণ : প্রতি জমি ইউরিয়া ১২০-১৫০ কেজি, টিএসপি ৮০-১১০ কেজি, এমওপি ১১০-১৪০ কেজি, জিপসাম ৫০-৬০ কেজি, জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি, ডলোচুন ১০০-১৫০ কেজি, জৈব সার ৫-৬ টন প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া অন্যান্য সব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি রোপণ নালায় দিতে হবে। বাকী ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের পর কুঁশি গজানো পর্যায়ে (১২০-১৫০ দিন) উপরি প্রয়োগ করতে হবে।রোপণ পদ্ধতি : আমাদের দেশে সাধরণত দু’ভাবে আখ রোপণ করা হয়।১. প্রচলিত পদ্ধতি : তিন চোখ বিশিষ্ট আখখন্ড নালার মধ্যে একই লাইনে মাথায় মাথায় স্থাপন করে অথবা দেড়া পদ্ধতি বা দু’সারি পদ্ধতিতে আখ চাষ করা যায়। আখখন্ড স্থাপনের পর ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি মাটি দিয়ে আখখন্ড ঢেকে দিতে হবে।
২. এক বা দু’চোখ বিশিষ্ট আখখন্ড পলিব্যাগ বা বীজতলায় চারা তৈরী করে জমিতে রোপণ। আখ চাষের এ পদ্ধতিটি এখন পর্যন্ত আধুনিক। সাধারণত একমাস বয়সের আখের চারা রোপণ করতে হয়। এক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩ ফুট বা ৯০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ ফুট বা ৬০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা : আখগাছ বড় হ’লে যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য আখ গাছ কয়েকটি মিলেয়ে বেঁধে দিতে হবে। আখের শুকনা পাতা ঝরে পড়ে না বলে শুকনা পাতা ছিঁড়ে কেটে ফেলতে হবে। মাটিতে বাতাস চলাচলের জন্য মাঝে মাঝে মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং ২/৩ বার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের বয়স ৭/৮ সপ্তাহ হ’লে প্রথমবার এবং ১২-১৪ সপ্তাহ হ’লে কান্ডে ২-১টি গিঁট দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার মাটি দিতে হবে। প্রয়োজন হ’লে বাঁশের সাহায্যে আখ গাছ ঠেস দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে প্রতিটি আড় শুকনা পাতা দিয়ে বেঁধে পাশাপাশি দুই সারির ৩-৪ টি ঝাড় একত্রে বেঁধে দিতে হবে। আখ দীর্ঘজীবি ফসল বিধায় জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ দিতে হবে।পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা : পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। ডগার মাজরা পোকা দমনের জন্য কার্বোফুরান জাতীয় কীটনাশক ফুরাডান ৫ জি কিংবা কুরাটার ৫ জি অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। কান্ডের মাজরা পোকা দমনের জন্য কারটাপ গ্রুপের রাজেক্স ৪ জি এবং গোড়ার মাজরা পোকা দমনের জন্য ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের লরসবান ১৫ জি ব্যবহার করা যায়। উঁইপোকা দমনে ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের ডারসবান জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আখের লাল পঁচা রোগ দমনে গরম পানিতে বীজ শোধন বা ব্যাভিস্টিন নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা ৩০ মিনিট শোধন করতে হবে। উঁইপোকা রোপণকৃত আখখন্ড খেয়ে ফেলে, ফলে চারা গজাতে পারে না। গাছে আক্রমণ করলে গাছ শুকিয়ে যায়। দমনের জন্য মুড়ি আখ চাষ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। উঁইপোকার ঢিবি ভেঙ্গে রাণী খুঁজে মেরে ফেলাসহ পাটকাঠির ফাঁদ দিতে হবে। ভিটাশিল্ড/লিথাল ২০ ইসি প্রয়োগ করতে হবে।ফসল সংগ্রহ : আখ পরিপক্ক হ’তে সাধারণতঃ ১২-১৫ মাস সময় লাগে। পরিপক্ক আখ ধারালো কোদাল দিয়ে মাটি সমতলে কাটা উচিত।ফলন : হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৪০-৬৫ টন।\ সংকলিত \
এ বিভাগের আরও প্রবন্ধ
পানির উপর সবজি চাষ পদ্ধতি
নারিকেল গাছের পরিচর্যা
বিদ্যুৎবিহীন হিমাগারে শাক-সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণ
সম্ভাবনাময় ফল লটকন
ডাটা শাকের ওজন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি
বিচিহীন কুল চাষে সফল মাগুরার নাছির
রাজস্থানের দুম্বা-ছাগলে বদলে গেছে সোহেলের স্বপ্ন
পানি কচু চাষ পদ্ধতি ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি
১২ মাসী শসা চাষ পদ্ধতি
কাঠের বাক্সের চাইতে ডিজিটাল মৌ-বাক্সে দ্বিগুণ মধু পাওয়া যায় (সম্ভাবনার ডিজিটাল মৌ-বাক্স)
সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় কাকড়া চাষ
সর্বশেষ প্রবন্ধ
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল
আল-কুরআনে বিজ্ঞানের নিদর্শন (৩য় কিস্তি)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ভালবাসা (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পুলছিরাত : আখেরাতের এক ভীতিকর মনযিল
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (২য় কিস্তি)
বাংলা বানান রীতি ও আমাদের প্রস্তাবনা
শবেবরাত
আল-কুরআনে বিজ্ঞানের নিদর্শন (২য় কিস্তি)
চিন্তার ইবাদত (শেষ কিস্তি)
পুরাতন সংখ্যা
মার্চ ২০২৩
ফেব্রুয়ারী ২০২৩
জানুয়ারী ২০২৩
রোপা
রোপা পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষ (STP) বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইক্ষু চারা উৎপাদন, চারার পরিচর্যা ও মূল জমিতে রোপণ। সরাসরি মাঠে বীজখন্ড রোপণের পরিবর্তে চারা তৈরী করে ইক্ষু চাষ
Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
অফিসের ধরণ
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মেনু নির্বাচন করুন Text size A A A Color C C C C
কনটেন্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন
1 SHARES Share to Facebook Share to Messenger Share to WhatsApp Share to Twitter Share to LinkedIn Share to Gmail Share to Print Share to More
National Portal Bangladesh
পোর্টাল সাবস্ক্রাইব করুন
পোলিং মতামত দিন
সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
রোপা পদ্ধতিতে (STP) আখ চাষঃ
রোপা পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষ (STP)
বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইক্ষু চারা উৎপাদন, চারার পরিচর্যা ও মূল জমিতে রোপণ।
সরাসরি মাঠে বীজখন্ড রোপণের পরিবর্তে চারা তৈরী করে ইক্ষু চাষ করাকে রোপা আখ চাষ বলে। রোপা পদ্ধতিতে ধানের মত বীজ তলায় চারা উৎপাদন করে সেই চারা মূল জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করা হয়। সরাসরি বীজখণ্ড মাঠে রোপণের পরিবর্তে চারা উৎপাদন করে রোপণ করায় চারাগুলির মধ্যে সুনির্দিষ্ট ও সমান দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাড়াইযোগ্য ইক্ষু উৎপাদনের মাধ্যমে ইক্ষুর ফলন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা রোপা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য।
সুবিধা :
প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় মাত্র চার ভাগের এক ভাগ বীজের প্রয়োজন হয়।
নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণের ফলে জমিতে প্রয়োজনীয় গাছের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়।
বছরের যে কোন সময় ইক্ষু রোপণ করা যায়।
উৎপাদনকাল কমিয়ে আনা সম্ভব।
অতিরিক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
অল্প খরচে অধিক ফলন ও মুনাফা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইক্ষু চারা উৎপাদন ঃ
পলি ব্যাগ/ চটের ব্যাগ চারা পদ্ধতি
সাধারন বীজতলা পদ্ধতি
গাছ চারা বা রাইউনগান পদ্ধতি
ল্যাটারাল সুট পদ্ধতি
স্টকলেস পদ্ধতি
চোখ চারা/ বাডচিপ পদ্ধতি
ব্যাগ চারা পদ্ধতি :
রোপা আখ চাষ পদ্ধতি সমূহের মধ্যে ব্যাগ চারা পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল। এই পদ্ধতিতে পলিথিন বা চটের তৈরী ব্যাগে মাটি ও গোবর মিশ্রন ভর্তি করে তাতে একচোখ বিশিষ্ট বীজ খন্ড স্থাপন করে চারা উৎপাদন করা হয়। সেচের সুবিধা নেই এমন বৃষ্টি নির্ভর অবস্থায়ও এ পদ্ধতিতে রোপা আখের চাষ করা যায়।
সাধারন বীজতলা পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে বীজতলা বা বেডে চারা উৎপাদন করা হয়। চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরী করে তার উপর আখের পাতা/ ধানের খড়/ কচুরী পানা বিছিয়েও বেড তৈরী করা যায়। বীজতলায় এক বা দুই চোখ বিশিষ্ট বীজ খন্ড পাশাপাশি স্থাপন করে চারা উৎপন্ন করা হয়। বেডে পর্যাপ্ত রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হয়। বেডে আখের চারা গজানোর পর কিছুদিন পর পর পাতা ছেঁটে চারা ছোট রাখা প্রয়োজন। সুস্থ রোগমূক্ত ও সবল চারা ৪০-৪৫ দিন বয়স বা চারা ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে মূল জমিতে রোপন উপযোগী হয়।
গাছ চারা (রাইউনগান) পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে জমিতে দন্ডায়মান আখেই চারা উৎপন্ন করা হয়। মূল জমিতে চারা রোপনের প্রায় ৩০-৪৫ দিন পূর্বে নির্বাচিত বীজ ক্ষেতে আখের মাথা কেটে দিতে হবে। এর ফলে পার্শ্বকুশি গজাবে। পাশ্বকুশি যাতে খুব লম্বা না হয় তার জন্য মাঝে মাঝে পাতা ছেঁটে দিতে হবে। এ সমস্ত পার্শ্বকুশি আখের সাথে সংযুক্ত স্থানে আলাদা আলাদা করে কেটে স্টক সহ বা স্টকলেস অবস্থায় প্রয়োজনীয় হরমোন শোধন করে মূল জমিতে রোপন করা হয়।
ল্যাটারাল স্যুট পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতেও গাছ চারার ন্যায় জমিতে দন্ডায়মান আখ গাছেই চারা উৎপন্ন করা হয়, তবে একই চারা বারবার কেটে একটি বাড থেকে অনেকগুলো চারা উৎপাদন করা হয়। মূল জমিতে চারা রোপনের প্রায় ৪৫-৬০ দিন পূর্বে নির্বাচিত বীজ ক্ষেতে আখের মাথা কেটে দিতে হয়। এর ফলে পার্শ্ব কুশি গজাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে গজানো পার্শ্ব কুশি ১০-১২ দিন পরে আবার কেটে দিতে হবে। এভাবে মূল জমিতে চারা রোপনের একমাস আগ পর্যন্ত কয়েকবার গজানো পার্শ্ব কুশি কেটে কেটে একটি বাড থেকে অনেকগুলো (৮-১০ টি) চারা উৎপন্ন করা যায়। এ সমস্ত পার্শ্বকুশি আখের সাথে সংযুক্ত স্থানে আলাদা আলাদা করে কেটে স্টকলেস অবস্থায় মূল জমিতে রোপন করা হয়।
স্টকলেস পদ্ধতিতে রোপা আখ চাষ :
এ পদ্ধতিতে বীজতলায় অথবা গাছে উৎপাদিত চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সে স্টক (মাতৃকান্ড) থেকে আলাদা এবং পাতা ছাটাই করে মূল জমিতে রোপন করা হয়। স্টকলেস চারায় দ্রুত শিকড় গজানোর জন্য শিকড়ের দিক এক লিটার পানিতে ৫ এম এল ন্যাপথালিন এসিটিক এসিডে ২৪-৭২ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে/ ২৪-৩৬ ঘন্টা পানিতে চুবিয়ে রেখে মূল জমিতে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পরপরই ১টি বা প্রয়োজন বোধে ২ টি জীবনী সেচ প্রয়োগ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে রোপনকৃত চারার মৃত্যূ হার তুলনামূলক কম।
চোখ চারা/ বাডচিপ পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে আখের কান্ড থেকে চোখ সংগ্রহ করে পলিব্যাগ/ চটের ব্যাগ/ বীজতলায় উৎপাদিত চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সে মূল জমিতে রোপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় বীজের পরিমান অন্যান্য যে কোন পদ্ধতির চেয়ে কম। তবে চারা উৎপাদন এবং মূল জমিতে রোপনের সময় বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন চারা নষ্ট না হয়ে যায়।
চারার পরিচর্যা :
ব্যাগ এবং বেড চারার ক্ষেত্রে চারা যেন শুকিয়ে না যায় তারজন্য মাঝে মধ্যে ঝাজরি দিয়ে পানি দিতে হবে।
চারা যাতে আলো বাতাস পায় এবং লিকলিকে না হয়ে যায় তার জন্য ৪-৫ পাতা হওয়ার পর মাঝে মধ্যে পাতা গুলো কেটে দিতে হবে।
চারাগুলো হলদে বা দূর্বল মনে হলে ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে চারার উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে কয়েকদিনের মধ্যে চারা সতেজ ও সবুজ হয়ে উঠবে।
পোকার আক্রমন হলে হাতে নাতে অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করতে হবে।
সাদা পাতা বা অন্য যে কোন রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে সরিয়ে ফেলতে হবে।
অনেক সময় চারা গরু ছাগলে নষ্ট করে দিতে পারে সে জন্য চারার বেড গুলোকে ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
মূল জমিতে রোপণ :
জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে নির্দিষ্ট দুরত্বে ১ মিটার পর পর লাঙ্গল/ ট্রেঞ্চার/ কোদাল দিয়ে নালা তৈরী করতে হবে। নালায় সব ধরনের সার দিয়ে নালার মাটিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সার মিশিয়ে দিতে হবে। ব্যাগ চারার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুরত্বে ৪০-৫০ সে. মি. পর পর নালায় চারা রোপন করতে হবে। রোপনের পর চারার গোড়ার মাটি ভাল ভাবে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে যাতে চারাটি বাতাসে নড়ে বা সেচ দেওয়ার সময় উঠে না যায়। রোপনের পর পরই ১ টি অথবা প্রয়োজন বোধে ২ টি জীবনী সেচ প্রয়োগ করতে হবে।বেড অথবা যে কোন গাছ চারার ক্ষেত্রে নালায় সার মিশিয়ে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে নালায় পানি দিয়ে রোপা ধানের মত আখের চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে ৩০-৪৫ সে. মি. পর পর রোপন করতে হবে, এতে চারার মরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং জমিতে গ্যাপ কম হয়।
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : প্রথম পর্ব
বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪...
কৃষি ও প্রকৃতি
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : প্রথম পর্ব
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭
আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-
আখের জাতবিজ্ঞাপন
গুড় উপযোগী, আগাম পরিপক্ক, মধ্যম পরিপক্ক, বন্যা খরা লবণ সহিষ্ণু, মুড়ি আখের জন্য উপযুক্ত এবং চিবিয়ে খাওয়া জাতসহ বেশকিছু জাত রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ঈ-১৬, ঈ-১৮, ঈ-১৯, ঈ-২০, ঈ-২১, ঈ-২২, ঈ-২৪, ঈ-২৫, ঈ-২৬, ঈ-২৭, ঈ-২৮, ঈ-২৯, ঈ-৩০, ঈ-৩১, ঈ-৩২, ঈ-৩৩, ঈ-৩৪, ঈ-৩৫, ঈ-৩৬, ঈ-৩৭, ঈ-৩৮ ঈ-২/৫৪, সিও-২০৮, অমৃত, বারঙ, গ্লোরী, কাজলা, মিশ্রিমালা, তুরাগ ও লতারিজবা ‘সি’।
বীজ নির্বাচনবিজ্ঞাপন
রোপণের জন্য বীজ আখগুলো রোগমুক্ত, পরিপুষ্ট এবং প্রত্যায়িত হতে হবে। ভাল অঙ্কুরোদগম, গাছের বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই সুস্থ-সবল, রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত আট-দশ মাস বয়সী সতেজ আখ বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বীজ আখ শিকড়মুক্ত হতে হবে। প্রয়োজনে আখের গোড়ার এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিয়ে উপরের দুই-তৃতীয়াংশ বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বীজ আখ সংগ্রহের ৪-৫ সপ্তাহ আগে হেক্টরপ্রতি ১শ’ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করে বীজ আখের গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়। পটাশ ঘাটতি এলাকায় ইউরিয়ার সাথে একরপ্রতি ১৫-২০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজখণ্ড তৈরিবীজ আখ কাটার পর পাতাসহ পরিবহন করতে হবে। ধারালো এবং জীবাণুমুক্ত দা, হাসুয়া, বিএসআরআই উদ্ভাবিত বীজ কাটা যন্ত্র বা বাডচিপস কাটার দিয়ে প্রয়োজনমতো এক, দুই বা তিন চোখবিশিষ্ট বীজখণ্ড বা বাডচিপস তৈরি করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- ফল গাছের জন্য মাটির গুণাবলিবীজ শোধনএকবিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমির জন্য বীজখণ্ডকে ২৫ গ্রাম ছত্রাকনাশক ওষুধ ২৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে তৈরি দ্রবণে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
জমি নির্বাচনউঁচু কিংবা মাঝারি উঁচু, সমান এবং একদিকে সামান্য ঢালু হলে ভালো হয়। নির্বাচিত জমি অবশ্যই জলাবদ্ধতা মুক্ত হতে হবে। মাটি এঁটেল দো-আঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির হলে ভালো হয়।
জমি তৈরিবিজ্ঞাপন
লাঙল দিয়ে ৬-৮ ইঞ্চি গভীর আড়াআড়ি ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। আখ রোপণের জন্য ১.৫ থেকে ৩.৫ ফুট দূরত্বে ৯-১০ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করতে হবে। নালার ভেতর বেসালডোজ সার ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
আখ রোপণসনাতন পদ্ধতিতে আখ রোপণ: এ পদ্ধতিতে আখের বীজখণ্ডগুলো সরাসরি মূল জমিতে রোপণ করা হয়। ভালোভাবে জমি তৈরির পর কোদাল বা লাঙল দিয়ে নালা করে নালার ভেতর বেসালডোজ সার ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দুই বা তিন চোখবিশিষ্ট বীজখণ্ড সরাসরি মাথায় মাথায় স্থাপন করে তার উপর প্রায় ২ ইঞ্চি মাটির আবরণে ঢেকে দিতে হবে। বীজ খণ্ডগুলোকে নালায় এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে চোখগুলো দুই পাশে থাকে। মাটিতে জো বেশি থাকলে বা আগাম রোপণে বীজখণ্ডের ওপর মাটি কম এবং জো কম থাকলে বা শীতের সময় বীজখণ্ডের ওপর মাটি বেশি দিতে হবে।
রোপা পদ্ধতিতে আখ রোপণ: এ পদ্ধতিতে আখের চারা তৈরি করে চারাগুলো মূল জমিতে নালার ভেতর রোপণ করা হয়। আখের চারা তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এরমধ্যে পলিব্যাগে চারা তৈরি, বীজতলায় চারা তৈরি এবং গাছচারা তৈরি পদ্ধতি প্রধান। চারা তৈরির জন্য বীজখণ্ডগুলো বিশেষ যত্নের সাথে তৈরি করা হয়। উৎপাদিত চারা স্টকলেস চারা করে সহজেই কম খরচে ধানের চারার মত দূর-দূরান্তে পরিবহন করা যায়।
আরও পড়ুন- কোন জেলায় কী ফল গাছ লাগাবেনরোপা আখ চাষের সুবিধাপ্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৬০% কম বীজ প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা রোপণের ফলে জমিতে ফাঁকা জায়গা থাকে না। গোছাপ্রতি বেশি কুশি উৎপাদিত হওয়ায় মাড়াইযোগ্য আখের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রায় ১:৩০ হারে দ্রুত বীজ বর্ধন করা যায়। কম সময়ে ও দ্রুত উচ্চ চিনিযুক্ত নতুন জাত বিস্তার করা যায়। বীজতলায় রোগাক্রান্ত চারা বাছাই করে শুধু সুস্থ চারা রোপণ করা যায়। আগাম আখ রোপণ নিশ্চিত করা যায়। জোড়া সারি পদ্ধতিতে রোপা আখের সাথে দুটি সাথীফসল চাষ করা যায়। প্রথম ফসল আলু চাষ করার পরও দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন মুগডাল, ডাঁটা, কলমি শাক, পুঁইশাক ও সবুজ সার আবাদ করা সম্ভব।
চারা উৎপাদনের সময়শ্রাবণ- আশ্বিন মাস চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। এসময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় চারা বেশি গজায়। আশ্বিনের পরে অঙ্কুরোদগম কমে এবং চারা উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। আশ্বিন মাসে চারা উৎপাদন করে শীতের পরেও জমিতে রোপণ করা যায়।
পলিব্যাগে চারা তৈরি: এক একর জমির জন্য ৪-৫ ইঞ্চি আকারের ০.০২ মিলিমিটার পুরু ১২ হাজার ব্যাগ (ওজনে প্রায় ৮ কেজি) প্রয়োজন হয়। ৫০ ভাগ বেলে দো-আঁশ ও ৫০ ভাগ গোবর বা কম্পোস্ট সার মিশ্রিত করতে হবে। উঁইপোকা ও মাজরা পোকা দমনের জন্য ২৫০ গ্রাম লরসবান বা ডারসবান এবং ১ কেজি ফুরাডান ৫জি মাটির মিশ্রণের সাথে মেশাতে হবে। মিশ্রিত ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ব্যাগের ৩-৪ ভাগ ভরতে হবে। চোখের ওপর ১ ইঞ্চি এবং চোখের নিচে ২ ইঞ্চি আখ রেখে তৈরি বীজখণ্ডগুলো একটি করে পলিব্যাগে চোখ উপর দিকে রেখে খাড়াভাবে স্থাপন করতে হবে। যাতে বীজখণ্ডটি ব্যাগের উপর থেকে আধা ইঞ্চি নিচে থাকে। ব্যাগের বাকি অংশ মাটি দিয়ে ভরে চাপ দিয়ে ব্যাগের মাটি এঁটে দিতে হবে। ব্যাগের মধ্যে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে চারা পঁচে না যায়, সে জন্য ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। এ জন্য ব্যাগে মাটি ভরার আগেই কাগজ ছিদ্র করার পাঞ্চিং মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?