আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য কী
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য কী পান।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
৮ মার্চ, ১৯১৪ সালে নারী দিবসের বিজ্ঞাপনচিত্র
পালনকারী বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারীগণ
ধরন আন্তর্জাতিক
তাৎপর্য জনসচেতনতা দিবস
নারী ও কন্যা দিবস
তারিখ ৮ মার্চ (বার্ষিকভিত্তিতে)
সম্পর্কিত মা দিবস, বিশ্ব শিশু দিবস, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ( পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়।[১] সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদ্যাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্যাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।ইতিহাস[সম্পাদনা]
এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আধুনিক সংস্কৃতি[সম্পাদনা]
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে - আফগানিস্তান,[২] আর্মেনিয়া,[৩] আজারবাইজান,[৪] বেলারুশ,[৫] বুরকিনা ফাসো,[৬] কম্বোডিয়া,[৭] কিউবা,[৮] জর্জিয়া,[৯] গিনি-বিসাউ,[২] ইরিত্রিয়া,[২] কাজাখস্তান,[১০] কিরগিজিস্তান,[১১] লাওস,[১২] মলদোভা,[১৩] মঙ্গোলিয়া,[১৪] মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া,[২] তাজিকিস্তান,[২] তুর্কমেনিস্তান,[২] উগান্ডা,[২] ইউক্রেন,[২] উজবেকিস্তান,[১৫] ভিয়েতনাম[১৫] এবং জাম্বিয়া।[১৬]
এছাড়া, চীন,[১৭] মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,[১৮] নেপালে[২] শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটির দিনভোগ করেন।
নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য[সম্পাদনা]
বছর জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য[১৯]
১৯৯৬ অতীত উদ্যাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
১৯৯৭ নারী এবং শান্তি
১৯৯৮ নারী এবং মানবাধিকার
১৯৯৯ নারী প্রতি সহিংসতামুক্ত পৃথিবী
২০০০ শান্তি স্থাপনে একতাবদ্ধ নারী
২০০১ নারী ও শান্তি : সংঘাতের সময় নারীর অবস্থান
২০০২ আফগানিস্তানের নারীদের বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ
২০০৩ লিঙ্গ সমতা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
২০০৪ নারী এবং এইহ আই ভি/ এইডস২০০৫ লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে নিরাপদ ভবিষ্যত২০০৬ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী২০০৭ নারী ও নারী শিশুর ওপর সহিংসতার দায়মুক্তির সমাপ্তি২০০৮ নারী ও কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ২০০৯ নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারী-পুরুষের একতা২০১০ সমান অধিকার, সমান সুযোগ- সকলের অগ্রগতি২০১১ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ২০১২ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সমাপ্তি২০১৩ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়২০১৪ নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা২০১৫ নারীর ক্ষমতায়ন ও মাবতার উন্নয়ন২০১৬ অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান[২০][২১]২০১৭ নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব কর্মে নতুন মাত্রা।২০১৮ সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা২০১৯ সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো[২২]২০২০ প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার২০২১ করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব২০২২ যত্নসই আগামীকালের জন্য আজ লিঙ্গ সমতাতথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
↑ "Origins and Evolution: Perspectives of Two International Days"। ৮ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৮।
↑ ঝাঁপ দিন: [১]Angola.
↑ Armeniainfo.am ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে.
↑ MSNtour.az ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে.
↑ (রুশ) President's decree on public holidays in Belarus আর্কাইভইটে আর্কাইভকৃত ৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে, 1998.
↑ Visarequest.co.za[].
↑ Cambodiaevisa.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে.
↑ [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মার্চ ২০১২ তারিখে.
↑ [৩][]. ↑ E.gov.kz.
↑ "Kyrgyz and American Holidays (In Russian)"। । ৯ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১২।
↑ Laoyp.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ আগস্ট ২০০৮ তারিখে.
↑ (রোমানীয়) Article 111 (1c) of the work codex of Moldova ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে, PDF, page 53 যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েব আর্কাইভে আর্কাইভকৃত ১২ জুন ২০১১ তারিখে "Article 111. Non-working holidays. (1) in Moldova, non-working holidays, maintaining the average salary, are: (...) c) March 8 - International Women's Day; (...)".
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
নাজনীন বেগম
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য
প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ মার্চ ২০১৭
AddThis Sharing Buttons
Share to Facebook Share to Twitter Share to WhatsApp Share to LinkedIn Share to Print Share to More
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর সমঅধিকার, মর্যাদা এবং অসম শ্রম মজুরির প্রতিবাদের ক্ষেত্রে দিনটির তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৫৭ সালে কর্মজীবী নারীদের শিল্প-কারখানা শ্রম সময় কমানো, মানবিক আচরণ-বিধির প্রয়োগ, শ্রম মজুরির বৈষম্য দূরীকরণসহ আরও অন্যবিধ স্বাধীনতা প্রদানকে কেন্দ্র করে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। আর এসবের সূচনা করা হয় নিউইয়র্কের সুতা কারখানার অসংখ্য নারী শ্রমিকের পক্ষ থেকে। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই ঐক্যবদ্ধ মিছিলে সরকারী বাহিনীর দমন-পীড়ন সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সামনেও চলে আসে। নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ এবং অধিকার হরণের করুণ আখ্যান। নারীর এই ন্যায্য দাবি এবং বঞ্চনার ইতিহাসে বিক্ষুব্ধ হয় বিভিন্ন দেশের নারী নেত্রীরাও। সম্মিলিতভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারী নেত্রীরাও। সম্মিলিতভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারীর প্রতি এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকে বিশ্বের অসংখ্য নারী শ্রমিক। ঘটনার পথপরিক্রমায় কেটে যায় আরও অর্ধশত বছর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নারী শ্রমিকরা সংগঠিত হতে থাকে এবং একটি সুদৃঢ় আন্দোলনের কাঠামোও প্রস্তুত হয়ে যায়। এই বিরাট কালপর্বে নারীর প্রতি অসাম্য, বৈষম্যের মাত্রা তো কমেইনি বরং আরও বাড়তে থাকে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে মালিকানার মূল শক্তিটা যাদের হাতে থাকে তারাই সামগ্রিক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার এই আধিপত্য বিস্তারকারী মালিক পক্ষ সমাজের সংক্ষিপ্ত একটি গোষ্ঠী। আর সিংহভাগ হলো সাধারণ শ্রম বিনিয়োগ শ্রেণী যারা পুরো উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি। আর এই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর প্রায়ই অর্ধাংশ নারী। উৎপাদনের মূল কর্মক্ষম শক্তি হিসেবে শোষণ আর বঞ্চনার শিকার নারী-পুরুষ সবাই। কিন্তু সামাজিক অব্যবস্থার কারণে দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া অংশ হিসেবে নারীরা এক্ষেত্রে অনেকখানিই এগিয়ে। ফলে নামেমাত্র শ্রম মজুরির ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের বিভাজন দৃষ্টিকটূ এবং অমানবিক। প্রযুক্তি বিদ্যাসহ পুঁজির অব্যাহত বিকাশ উৎপাদনশীলতায় যে গতি সঞ্চার করেছে তা অবশ্যই যুগান্তকারী। পাশাপাশি শ্রমবাজারে শ্রমিকদের মজুরিতে যে ধরনের অনিয়ম এবং অবিচারের মাত্রা যোগ করা হয়েছে সেটাও কোন মতেই চলমান গতি নির্ণয়ে সহায়ক হয়নি। কারণ শ্রম ঘণ্টা হিসাব করে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয় শ্রমিকদের সে তুলনায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় অনেক বেশি। ফলে বঞ্চনার শিকার হতে হয় অসংখ্য শ্রমিককে। যান্ত্রিক সভ্যতার বদৌলতে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু শ্রমিকের শ্রম সময় সেই ১২ ঘণ্টাই। সুতরাং পণ্য উৎপাদন হচ্ছে আরও বেশি, কিন্তু সে তুলনায় মজুরির ন্যূনতম অংশও বাড়াতে চায় না মালিক পক্ষ। সেই প্রেক্ষাপটে শ্রম সময় ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে জোর আন্দোলনে শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। আর বৈষম্যপীড়িত নারী শ্রমিকরাও তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় তোলে। বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করে তাদের এই দাবি আদায়ের লক্ষ্য ক্রমেই জোটবদ্ধ হতে থাকে। এরই জোরালো উদ্যোগ হিসেবে ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জার্মানির সমাজতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক কর্মী ক্লারা জেটকিন। তিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির একজন অন্যতম স্থপতি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সমাবেশে সারা বিশ্ব থেকে প্রায়ই ১০০ জন নারী নেত্রী অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হয় ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার। পর্যায়ক্রমে ১৯১১ সালের ৮ মার্চ নারীদের সমঅধিকার দিবস পালন করা হয়। এরই অনিবার্য পরিণতিতে ১৯১৪ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মর্যাদা দেয়া হয়। আজ অবধি নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতা আদায়ের দিন হিসেবে ৮ মার্চকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশও ১৯৭১ সাল থেকে এ দিবসটির তাৎপর্য অনুধাবন করে পরিপূর্ণ মর্যাদায় পালন করছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশ এই ৮ মার্চকে সরকারী ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। তবে দিবসটির তাৎপর্য কোন নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিদিনের কর্মযাত্রায় নারীরা যদি তাদের সম্মান, অধিকার এবং ন্যূনতম বাঁচার পথকে অবারিত করতে না পারে তাহলে দিনটির গুরুত্ব কতখানি হাল্কা হয়ে যায় তাও বিবেচনায় আনতে হবে। কর্মক্ষেত্রে বঞ্চিত নারীদের ন্যায্য দাবি হরণের যে করুণ আখ্যান তা থেকে যদি তারা বেরিয়ে আসতে না পারে সে দিনটির মূল বৈশিষ্ট্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা ভাবাও বোধ হয় সময়ের দাবি। উন্নয়নের গতিধারায় আজকের বাংলাদেশে নারীরা যেভাবে উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের সমর্পণ করেছে তা যেমন সমৃদ্ধির নিয়ামক একই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রারও চালিকাশক্তি। কৃষি, শিল্প- কারখানা, অবকাঠামোগত নির্মাণ, অফিস-আদালতসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে নারীর কর্মক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায় শ্রমবাজারে নারীরা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এবং এগিয়ে। সেটা যেমন স্বীকার্য একইভাবে আর্থিক অসঙ্গতির দুর্বিপাকে পড়ে বঞ্চিত হওয়ার দুঃসহ যন্ত্রণাও নারী-কর্মীদের নিত্য সঙ্গী। বঞ্চনার এই নির্মম অভিঘাতের আবর্তে পড়া শ্রমজীবী নারীরা আজও নারী দিবসের যথার্থ সুফল থেকে অনেকটাই দূরে। দেশের পোশাক শিল্প যা দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার নিয়ন্ত্রক সেখানে নারীদের যুগান্তকারী ভূমিকাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সরকারী কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নেই বললেই চলে। বিভিন্ন আইনানুগ প্রতিষ্ঠা নিয়ম বিধিবহির্ভূত কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা সুসংহত প্রথাকে ভেঙ্গে দেয়ার সুযোগও থাকে না। ফলে সেখানে আইন এবং বিধান অনুযায়ী শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বলে কাউকেই অনৈতক অবস্থার শিকার হতে হয় না। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদনশীলতায় নারীরা যেভাবে বৈষম্যের দুর্বিপাকে পড়ে তা যেমন একজন সক্ষম কর্মজীবীর ওপর নগ্ন আক্রমণ একইভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনেরও চরম লঙ্ঘন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু এবং বহুতল ভবন নির্মাণে নারী শ্রমিকের ন্যায্য পাওনাকে যেভাবে কমিয়ে দেয়া হয় পুরুষের তুলনায় তা যেমন দৃষ্টিকটূ একইভাবে নীতিবহির্ভূতও। শ্রম সময় ও ধরনের বেলায় কোন ফারাক থাকে না। কিন্তু অর্থমূল্যে কেন এই বিভাজন! যে কোন নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে তার মূল্যবান সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করে কিন্তু মজুরি আদায়ে তারা ভোগান্তির কবলে পড়ে। একইভাবে কৃষি জমিতেও নারী কৃষকের ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানের সার্বিক পরিচর্যা করে ঘরে তোলা পর্যন্ত নারীরা যেভাবে পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেটা কোনভাবেই একজন পুরুষ কৃষকের চাইতে কম নয়। সেখানেও ভিন্ন শ্রম মজুরি। আর অবকাঠামো নির্মাণে শত শত নারী শ্রমিক এই বিভাজন থেকে মোটেও মুক্ত নয়। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব অনিবার্য। যে কোন শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। সেখানে যদি আবার লিঙ্গ বৈষম্য সামনে চলে আসে তাহলে পিছিয়ে পড়া শ্রমজীবী নারীরা কিভাবে এগিয়ে যাবে? তাদের জীবনযাত্রার মানও কিভাবে অভাব-অনটনের কবল থেকে বাঁচাবে? নারীরা শুধু যে দেশের উৎপাদনশীলতায় উদয়াস্ত খাটা কাটনি করে তা নয় গৃহস্থালীয় যাবতীয় কাজকর্মও একজন গৃহিণীকেই সামলাতে হয়। সে শ্রমের মূল্য তো ধরাই হয় না। মনে করা হয় পারিবারিক এবং সাংসারিক কাজের দায় তো শুধুমাত্র মহিলাদের। উপার্জনক্ষম মহিলারা এই দায়বোধ থেকে নিজেকে বাঁচাতেও চায় না। অন্যদিকে কেউ এসে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশেও দাঁড়ায় না। তাই শুধু ৮ মার্চের মধ্যে দিনটির গুরুত্ব আটকে রাখলে দিবসটি তার মর্যাদা হারাতে পারে। প্রতিদিনের কর্মযোগে নারীরা যতক্ষণ না তার যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা অর্জন করতে পারবে সেই অবধি দিবসটির তাৎপর্য সত্যিকার অর্থে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
সূত্র : www.dailyjanakantha.com
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের তাৎপর্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা সংক্ষেপে আইডব্লিউডি নামেও পরিচিত। দিনটিকে আন্তর্জাতিক করার ধারণাটি এসেছে ক্লারা জেটকিন নামে এক মহিলার কাছ থেকে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের তাৎপর্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের তাৎপর্য
Table of Contents
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কিভাবে শুরু হল?
আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা সংক্ষেপে আইডব্লিউডি নামেও পরিচিত, শ্রমিক আন্দোলন থেকে বের হয়ে জাতিসংঘের (ইউএন) একটি স্বীকৃত বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯০8 সালে এর বীজ রোপণ করা হয়েছিল, যখন ১৫,০০০ নারী নিউ ইয়র্ক সিটির মধ্য দিয়ে কর্মঘণ্টা, ভালো বেতন এবং ভোটের অধিকারের দাবিতে মিছিল করেছিলেন। আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দলই এক বছর পর প্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে।
দিনটিকে আন্তর্জাতিক করার ধারণাটি এসেছে ক্লারা জেটকিন নামে এক মহিলার কাছ থেকে। তিনি 1910 সালে কোপেনহেগেনে কর্মরত মহিলাদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন। সেখানে ১ 17 টি দেশ থেকে ১০০ জন মহিলা ছিলেন এবং তারা সর্বসম্মতিক্রমে তার পরামর্শে সম্মত হন।
এটি প্রথম 1911 সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে উদযাপিত হয়েছিল। শতবর্ষ 2011 সালে উদযাপিত হয়েছিল, তাই এই বছর আমরা প্রযুক্তিগতভাবে 110 তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করছি। 1975 সালে যখন জাতিসংঘ দিবসটি উদযাপন শুরু করে তখন জিনিসগুলি আনুষ্ঠানিক করা হয়েছিল। জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত প্রথম থিম (1996 সালে) “অতীত উদযাপন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা”।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সমাজে, রাজনীতিতে এবং অর্থনীতিতে নারীরা কতদূর এসেছে তা উদযাপন করার একটি তারিখ হয়ে উঠেছে। যখন রাজনৈতিক শিকড়, অব্যাহত বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ আমরা এখনো সেখানে নেই। আইডব্লিউডি একটি দিন যা আমরা স্বীকার করি যে আমরা লিঙ্গ সমতার দিকে কতদূর এসেছি, এবং আমরা কতদূর যেতে বাকি রয়েছি। 1911 সালে, মাত্র আটটি দেশে মহিলাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সমান কাজের জন্য সমান বেতনের কথা শোনা যায়নি-যদি মহিলাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়-এবং প্রজনন অধিকার ছিল না।
আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। যেখানে একসময় নারীরা ভোট দিতে পারত না, আমরা এখন দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমরা যেখানে একসময় কাজ করতাম সেখানে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হলেও আমরা এখন কর্পোরেশন চালাচ্ছি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে আমাদের অধিকার আছে আমাদের দাদীরা কেবল স্বপ্ন দেখে থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের এখনও সম্পূর্ণ সমতা নেই। এবং বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীরা আমাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি কোথাও নেই। ১০০ বছরেরও বেশি আগে, সেই প্রথম পদযাত্রা ছিল কর্মক্ষেত্রের ক্ষতিকর অবস্থার সমাপ্তি, সম অধিকার, সমান বেতন এবং শোষণের অবসান। এবং দুlyখজনকভাবে, সেই লক্ষ্যগুলি আজও প্রাসঙ্গিক।
কারণ আমাদের অধিকারগুলো নিরাপদ নয়।
অগ্রগতি রৈখিক হওয়া উচিত, তবে এটি প্রায়শই এক ধাপ পিছনে থাকে। কখনও কখনও, এমনকি একবার আইন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও, সেগুলি যেভাবেই হোক উপেক্ষা করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ:
গার্হস্থ্য সহিংসতা আইন, জনসচেতনতা এবং আইনি সুরক্ষায় প্রবেশাধিকার সত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়ান পুরুষরা এখনও সপ্তাহে এক হারে নারী অংশীদার বা বহিষ্কৃতদের হত্যা করছে। প্রজনন অধিকার একটি রাজনৈতিক ফুটবল। এখানে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাক্সেস রাজ্যের দ্বারা পরিবর্তিত হয়, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে মহিলাদের সিদ্ধান্তের পিছনে কারণ যাই হোক না কেন, সমাপ্তিকে অ্যাক্সেসযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০২০ সালের একটি প্রধান প্রতিবেদন অনুযায়ী। কেস স্টাডিতে ছিল গৃহপালিত নির্যাতন, মানব পাচার, যৌন নিপীড়ন এবং নারী পরিবেশ অধিকার রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা।
আইডব্লিউডি বছরে একবার সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্য যে কেউ দেখছে যে মহিলারা কোথাও যাচ্ছে না, এবং আমরা আমাদের মানবাধিকার অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
কারণ অগ্রগতি সমান হয়নি।
কিছু মহিলা মনে করেন যে তারা বৈষম্য বা হয়রানির মুখোমুখি হননি, অথবা তাদের সাফল্যের জন্য পদ্ধতিগত বাধার সম্মুখীন হননি, কিন্তু এটি সব মহিলাদের অভিজ্ঞতা নয়। আইডব্লিউডি হল রঙের মহিলাদের, প্রতিবন্ধী মহিলাদের, এবং কৌতূহলী বা ট্রান্স মহিলাদের সম্মুখীন জটিল চ্যালেঞ্জগুলি স্বীকার করার এবং তাদের সাথে অংশীদারিত্বের জন্য দাঁড়ানোর একটি সুযোগ। এটি এমন দেশগুলিতে বসবাসকারী আমাদের বোনদের সাথেও সংহতি প্রদর্শন যারা তাদের নিরাপত্তার জন্য ভয়ে বের হতে পারে না।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা মনে রাখি যে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন নারী বৈষম্য, হয়রানি, অসমতা বা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়, আমরা সবাই করি।
কারণ মাঝে মাঝে আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা একা নই।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং পাবলিক হেডলাইনের মধ্যে এটা মনে হতে পারে যে আমরা লিঙ্গ সমতার কাছাকাছি পাচ্ছি না, অথবা চ্যালেঞ্জিং সামাজিক নিয়মকানুনগুলি রাখা খুব বেশি (এবং ক্লান্তিকর)। হয়তো আমরা একই যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। IWD হল পুনরায় অনুপ্রাণিত বা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায়, অথবা আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সেখানে লক্ষ লক্ষ নারী আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, এবং আমরা সবাই একই যুদ্ধের মুখোমুখি-এবং জিতেছি।
কোন রং আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতীক?
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুসারে বেগুনি, সবুজ এবং সাদা হল আইডব্লিউডির রং। “বেগুনি ন্যায়বিচার এবং মর্যাদার প্রতীক। সবুজ আশার প্রতীক। সাদা বিশুদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করে, যদিও একটি বিতর্কিত ধারণা। রঙগুলি 1908 সালে যুক্তরাজ্যের উইমেন্স সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন (WSPU) থেকে উদ্ভূত হয়েছিল,” তারা বলে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশ্বব্যাপী দিবস যা নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সাফল্য উদযাপন করে। দিনটি লিঙ্গ সমতা ত্বরান্বিত করার জন্য কর্মের আহ্বানকেও চিহ্নিত করে। বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য ক্রিয়াকলাপ দেখা যায় কারণ সবাই মহিলাদের সাফল্য উদযাপন ও সমতার জন্য সমাবেশ করার জন্য এক সাথে হয়।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?