if you want to remove an article from website contact us from top.

    এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম

    Mohammed

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    এই সাইট থেকে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম পান।

    ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’

    108501 | ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১...

    /

    আজকের আলোকিত বাংলাদেশ

    / প্রথম পাতা

    ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’

    নিজস্ব প্রতিবেদক

    ০০:০০, ০৭ মার্চ, ২০২২

    ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

    দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন।

    দিবসটি উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল বাঙালির নয়, বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।’ অন্যদিকে বাণীতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে জাতির পিতার মহান আদর্শ অনুসরণ করে তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারি

    সেøাগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পৎ পৎ করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লক্ষ শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে। ওই দিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনও মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। তিনি দরাজ গলায় তার ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেনÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..., এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

    মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকা-ের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

    বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধান মন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধান মন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলামÑ রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’

    তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাই, আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’

    বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।’

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্রে রূপ নেয়। এ ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এছাড়া এ ভাষণটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

    একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এর পরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাক্সিক্ষত মুক্তির লক্ষ্যে।

    ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয়, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

    দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

    এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া, এদিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন।

    আওয়ামী লীগের সব শাখা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণ করবে।

    আজকের পত্রিকা আরও পড়ুন -

    সূত্র : www.alokitobangladesh.com

    এবারের

    প্রকাশন তারিখ : 2022-03-06 ক্লিক করুন

    Wellcome to National Portal

    বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন

    অফিসের ধরণ

    বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

    মেনু নির্বাচন করুন Text size A A A Color C C C C

    কনটেন্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন

    Share to Facebook Share to Messenger Share to WhatsApp Share to Twitter Share to LinkedIn Share to Gmail Share to Print Share to More

    National Portal Bangladesh

    পোর্টাল সাবস্ক্রাইব করুন

    পোলিং মতামত দিন

    সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ মার্চ ২০২২

    এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

    প্রকাশন তারিখ :

    ক্লিক করুন

    কনটেন্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন

    Share to Facebook Share to Messenger Share to WhatsApp Share to Twitter Share to LinkedIn Share to Gmail Share to Print Share to More

    National Portal Bangladesh

    পোর্টাল সাবস্ক্রাইব করুন

    পোলিং মতামত দিন চেয়ারম্যান

    জনাব এস. এম. ফেরদৌস আলম (অতিরিক্ত সচিব)

    চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটিসি

    বিস্তারিত

    এই দপ্তরের ডিজিটাল সেবাসমূহ

    অভ্যন্তরীণ ই-সেবাসমূহ

    বিআইডব্লিউটিসি ডিজিটাল স্টোর

    বিআইডব্লিউটিসি ডিজিটাল ইনডেন্ট

    বিআইডব্লিউটিসি এমপ্লয়ী ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

    অনলাইনে চাকরির আবেদন

    ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম

    সকল

    স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

    নির্দেশিকা ফটোগ্যালারী

    গুরুত্বপূর্ণ লিংক

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (PMO)

    রাষ্ট্রপতির কার্যালয়

    জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (MOPA)

    নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় (MOS)

    জাতীয় তথ্য বাতায়ন সকল লিংক

    কেন্দ্রীয় ই-সেবা

    জাতীয় সংগীত

    সরকারি অফিস সংযুক্তির ফরম

    জরুরি হটলাইন

    সেবা সহজিকরণ

    ইনোভেশন কর্নার

    ইনোভেশন টিম

    ইনোভেশন কর্মপরিকল্পনা

    সামাজিক যোগাযোগ

    সূত্র : www.biwtc.gov.bd

    একজন নীরব সাধকের কীর্তিগাথা

    হোম প্রথম পাতা 3 Shares শেয়ার করুন

    যেভাবে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’

    পাভেল হায়দার চৌধুরী | ৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০

    ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। ১৮ মিনিটের কালজয়ী এ ভাষণের শেষ কটি শব্দমালা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক ভাষণের আটটি শব্দের শেষ দুটি লাইন হয়ে গেল সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা। হয়ে গেল মুক্তিকামী বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র।

    দিনটি ছিল রবিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপেক্ষায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। তিনি আসলেন মহাসমুদ্রে আর শুরু হলো গগণবিদারী স্লোগান, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ এই সেøাগানগুলো জনতার কাছ থেকে আসল। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, তার আগেই মুক্তিপাগল কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা এ স্লোগান তুলে ধরল।

    ২টা ৪৫ মিনিটে ডায়াসে এসে দাঁড়ালেন ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুহূর্তেই মহাসমুদ্রের গর্জন থেমে পিনপতন নীরবতা। মাইকে বজ্রকণ্ঠে রাজনীতির কবি যখন সম্বোধন করলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’, আবার রেসকোর্সের মহাসমুদ্র সেস্লোগানে স্লোগানে গর্জন তুলল, মহানায়ক বজ্রকণ্ঠে শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা যেমন দিলেন, দিয়ে গেলেন নির্দেশনাও।

    বক্তব্যের শেষে তিনি বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’, কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেল তার বজ্রকণ্ঠের ধ্বনি; কিন্তু মহাসমুদ্রে উপস্থিত কৃষক, শ্রমিক ছাত্র জনতা থামল না; তাদের গগনবিদারী গর্জন আরও বেড়ে গেল। মুক্তিকামী বাঙালি জানান দিল বজ্রকণ্ঠে আরও কিছু শুনতে চায় তারা। অতৃপ্ত বাঙালির আকাক্সক্ষা বুঝেই থেমে যাওয়া বজ্রকণ্ঠ বেজে উঠল আবার। বঙ্গবন্ধু শোনালেন পরের লাইন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে কয়েকটি শব্দমালায় গাঁথা দুটি লাইন অপ্রতিরোধ্য দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে।

    এ ভাষণের ব্যাখ্যায় প্রবীণ রাজনীতিকরা দাবি করেন, মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘোষণা বঙ্গবন্ধু মূলত পরোক্ষভাবে দেন। কীভাবে জয়ী হতে হবে সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতিকরা বলেন, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকা অথচ লিখেছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ৫ মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার ও ৬ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়ে প্রতিবেদন ছাপে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় দেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিকের সঙ্গে। একজন হলেন তৎকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফের) অন্যতম সদস্য সিরাজুল আলম খান ও তৎকালীন বাম রাজনৈতিক নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। প্রবীণ রাজনীতিক সিরাজুল আলম খান ওতপ্রোতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভেতরে-বাইরে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতেন।

    ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এনডব্লিউ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চান ৭ মার্চের ভাষণে যুদ্ধের ঘোষণা আপনি দেননি কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে, তাই ভাষণে আমি ঘোষণা করি যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’

    ফ্রস্ট প্রশ্ন করেন, আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি বললে কী ঘটত? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশেষ করে ওইদিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কারণ, বিশ^কে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চাইনি। এমন কিছু হলে পাকিস্তান বিশ্বের সমর্থন পেত বাঙালির ওপর আঘাত হানার, সেই সুযোগটি তারা নিত। আমি চেয়েছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক, জনগণ তো প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। ওই ভাষণের ১৮ দিন পর ২৫ মার্চ আঘাত হানে পাকিস্তান। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি তা প্রতিরোধ করে। ওই ভাষণই বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।’

    ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে আলোচনায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পর্বের শেষ ধাপ হলো ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। আমি মনে করি এর আগে গণজাগরণ ঘটে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকা- শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান যখন বলে দিলেন ৩ তারিখ সংসদ বসবে না; তখন আওয়ামী লীগের প্রেস কনফারেন্স করছিলেন বঙ্গবন্ধু পূর্বাণী হোটেলে। প্রেস কনফারেন্স অর্ধসমাপ্ত রেখে তারা রাস্তায় নেমে পড়লেন। ৩ মার্চ সংসদ না বসার বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে মুখে মুখে রটে গেল, জনতার মধ্যে ছড়িয়ে গেল, জনারণ্য হয়ে গেল, মানুষ নেমে গেল রাস্তায়।’

    তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এত সহজ-সরল ও সাদামাটা ছিল যে, সবার হদয়ে গ্রথিত হয়ে গেল। উজ্জীবিত-উদ্বেলিত করল শেষ দুটি লাইন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম... তারপর থেমে গেল বজ্রকণ্ঠ। অতৃপ্ত মুক্তিপাগল বাঙালি থামেনি, গর্জন উঠল। আবার বাজল এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জনসমুদ্রের আকাক্সক্ষা বুঝেই বঙ্গবন্ধু শেষ লাইনটি বলে জয় বাংলা দিয়ে শেষ করলেন অমর কবিতা।’

    পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। এসব স্লোগানে মেতে উঠল চারদিক। এই স্লোগানগুলো জনতা থেকে এলো। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, দেওয়ার আগেই মানুষ এই স্লোগান ধরে ফেলল। ভুট্টোর মুখে লাথি মার এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়া অবস্থা আমার জীবনে ওই প্রথম দেখেছিলাম। সে জন্য আমি বলছি এটা গণজাগরণের ঊর্ধ্বতন ধাপ, গণঅভ্যুত্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। সরকারি দলের একপক্ষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন আমরা শুনলাম। সেদিনের মহাসমুদ্রে আমি সহস্রাধিক ন্যাপকর্মীসহ উপস্থিত ছিলাম।’

    সিরাজুল আলম খান এক ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৪/৫ ও ৬ মার্চ পর্যন্ত ২/৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড ও বিএলএফ হাইকমান্ডের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করতেন। প্রতিটি বৈঠকেই প্রসঙ্গ থাকত ৭ মার্চের বক্তৃতা। ৬ মার্চ সন্ধ্যায় বিএলএফ বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি করে, ভাষণে সংক্ষেপে অতীত ইতিহাস, অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে পরিচালনা করা ও স্বাধীনতার আহ্বান উল্লেখ করে বক্তৃতা শেষ করা। তবে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড স্বাধীনতার সংগ্রাম লাইনটি বলার বিষয়ে আপত্তি তোলে।’ বিএলএফের অন্যতম এ নেতা বলেন, ‘৫ মার্চ ৭ মার্চের ভাষণের বিষয় নিয়ে বিএলএফের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোদের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সঙ্গে আলাপ করেছি”। ভাষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বিএলএফ সদস্যরা অনুরোধ করেন এ ভাষণ খুবই আবেগময় হতে হবে। তারা সে সম্পর্কিত তিনটি ভাগ করে দিলেন।’

    সূত্র : www.deshrupantor.com

    আপনি উত্তর বা আরো দেখতে চান?
    Mohammed 23 day ago
    4

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    উত্তর দিতে ক্লিক করুন