ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য পান।
সাতই মার্চের ভাষণ
সাতই মার্চের ভাষণ
স্থানাঙ্ক: ২৩.৭৩৩০৬৬° উত্তর ৯০.৩৯৮৪৩৭° পূর্ব
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
৭ই মার্চের ভাষণ
৭ই মার্চে রেসকোর্সে ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান
তারিখ ৭ মার্চ ১৯৭১
সময় ২:৪৫ অপরাহ্ন — ৩:০৩ অপরাহ্ন
ভেন্যু রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), পূর্ব পাকিস্তান
অবস্থান রমনা, ঢাকা
স্থানাঙ্ক ২৩.৭৩৩০৬৬° উত্তর ৯০.৩৯৮৪৩৭° পূর্ব
ধরন ভাষণ
স্বীকৃতি বিশ্ব স্মৃতির আন্তর্জাতিক নিবন্ধন
সাতই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।[১]এই ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণের একটি লিখিত ভাষ্য অচিরেই বিতরণ করা হয়েছিল। এটি তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক কিছু পরিমার্জিত হয়েছিল। পরিমার্জনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।[১] ১৩টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়। ১৩ তম হিসাবে মাহাতো নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়, যা নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষায় ১ম অনুবাদ।[২] ম্যাগাজিন শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে উল্লেখ করে।[] ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৩]
পটভূমি
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।[৪]
ভাষণ
বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে:
তিনি ভাষণে কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করেন:
সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা
পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত
সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো
অত্যাচার ও সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য বাঙালিদের আহ্বান জানানো
দাবী আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান
নিগ্রহ ও আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান এবং বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা
ভাষণ রেকর্ড
পাকিস্তান সরকার ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ভাষণটি প্রচার করার অনুমতি দেয় নি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৎকালীন পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একইসঙ্গে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাঁচ আসনে সংসদ সদস্য এম আবুল খায়ের ভাষণটি ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদের এ কাজে সাহায্য করেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের, যিনি ভাষণের ভিডিও ধারণ করেন। তাদের সঙ্গে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিবিদ এইচ এন খোন্দকার ভাষণের অডিও রেকর্ড করেন।[৫]
অডিও রেকর্ডটি এম আবুল খায়েরের মালিকানাধীন রেকর্ড লেবেল বিকশিত এবং আর্কাইভ করা হয়। পরে, অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের একটি অনুলিপি শেখ মুজিবকে হস্তান্তর করা হয় এবং অডিওর একটি অনুলিপি ভারতে পাঠানো হয়। সেই সাথে অডিওর ৩০০০ অনুলিপি করে তা সারা বিশ্বে ভারতীয় রেকর্ড লেবেল এইচএমভি রেকর্ডস দ্বারা বিতরণ করা হয়।[৫]
স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া
২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ভাষণটি সহ মোট ৭৭ টি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে একইসাথে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউনেস্কো পুরো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিলকে সংরক্ষিত করে থাকে। ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে (এমওডব্লিউ) ’ ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭ টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত হয়েছে।[৬]
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ‘ইতিহাসের প্রতিশোধ’ হিসেবে তুলনা করেছেন। কারণ স্বাধীন দেশে দীর্ঘসময় এই ভাষণের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।[৭]
শাবিপ্রবির শিক্ষক জাফর ইকবাল প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
বঙ্গবন্ধু নয় বরং ইউনেস্কোই এই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত হয়েছে। কারণ এখন তাদের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণটি আছে, এমনটা তারা বলতে পারবে।[৮]
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
"শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি। তার এই সতর্ক কৌশলের কারণেই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা করতে পারেনি।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ: এক তর্জনীতে সেদিন জেগে উঠেছিল পুরো বাঙালি জাতি
বাঙালির শত বছরের শত সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই...
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ: এক তর্জনীতে সেদিন জেগে উঠেছিল পুরো বাঙালি জাতি
ড. কাজী এরতেজা হাসান
| প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫২
বাঙালির শত বছরের শত সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু বাঙালি নয় সারাবিশ্বের স্বাধীনতাকামী নিপীড়িত মানুষের অনুপ্রেরণার আধারে পরিণত হয়েছে। আজ সেই ঐতিহাসিক ভাষণের অর্ধশত বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর পর ঐতিহাসিক এ ভাষণেরও ৫১ বছর পূর্ণ হওয়ার ঘটনা বাঙালির জাতীয় জীবনের জন্য অন্যরকম এক তাৎপর্য বহন করছে। এবার দ্বিতীয় বারের মতো এ দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ আমাদের সব সংকট-দুর্বিপাকে বার বার এসেছে দিশা হয়ে; এসেছে প্রেরণাদায়ী শক্তি হয়ে। ঐতিহাসিক এ ভাষণের মধ্য দিয়ে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটিকে বাঙালি নিজেদের করে পেয়েছিল। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতা ‘স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’-তে লিখেছেন- শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।/তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিল জল/হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/গণসূর্য্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:/‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’/সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক তর্জনীতে সেদিন জেগে উঠেছিল পুরো বাঙালি জাতি। এ দিনটি জাতীয় জীবনের অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন। আজ যখন লিখতে বসেছি তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর বছরে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চেরও সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে সশরীরে দেখিনি। কিন্তু তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল দেখছি। আমরা খুব গর্ববোধ করি, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে করোনা মহামারিতে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রথম বিশ্বের সকল নেতারাই এখন বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি বিশ্বনেতায় পরিণত হওয়া শেখ হাসিনার সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন। বাংলাদেশের সকল অর্জনের সহায়ক শক্তির নাম এখন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিমগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সৃষ্টির পটভূমি থেকে আজকের এই সুদৃঢ় অবস্থানে আসার পথটা কুসুমার্স্তীণ ছিল না। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বীজ বুনে দীর্ঘ সময় লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে লাল সবুজের পতাকা উপহার দিয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের ২৩ বছরের শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিরস্ত্র এক জাতিকে যুদ্ধের ময়দানে নামানোর মহানায়ক হলেন বঙ্গবন্ধু। আর একাত্তরের উত্তাল মার্চে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের নানা ষড়যন্ত্র ভেদ করে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হিসাবে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে ছিল আমাদের স্বাধীনতার মূল প্রেরণাদায়ী মন্ত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধকালে সকলের জন্য উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাই আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মহান মুক্তিযুদ্ধে এই ভাষণের অবদান অপরিসীম। আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকুতোভয় নেতৃত্ব, অপরিসীম আত্মত্যাগ, বিচক্ষণ দূরদৃষ্টি, সাহসিকতা, প্রগতিশীল মনোভাব, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলী প্রভৃতি ফুটে উঠেছিল।
বাঙালির ইতিহাসে অনেকগুলো দিন আছে, যা আমাদের মনে রাখতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দিয়েছিলেন। ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক-মেশিনগানের হুমকির মুখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই দিন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কী পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ইতিহাসখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন? ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৩টি মহিলা আসনসহ জাতীয় পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ৩১৩টি (৩০০+১৩=৩১৩)। এর মধ্যে অবিভক্ত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল-পূর্ব পাকিস্তানের আসন ছিল ১৬৯টি (১৬২+৭=১৬৯)। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন। ওই নির্বাচনে বহু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সামরিক আইনের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পাওয়ার পর বাকি ২টি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জেড এ ভুট্টো এবং পাকিস্তান সামরিক চক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের পুতুলে পরিণত হলেন সামরিক প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া খান। ৭১-এর পহেলা মার্চ ১টা ৫ মিনিটে আকস্মিক এক বেতার ঘোষণায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। অধিবেশন স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান)।
৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলেও আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দেবেন। যে কোনমূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ই মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তীতে কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন। ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে আন্দোলন এগিয়ে চলে। সেই আন্দোলনমুখর পরিস্থিতিতে ঘনিয়ে এলো ৭ মার্চ। সবার দৃষ্টি ৭ই মার্চের দিকে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কী বলবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাবিয়ে তুলল পাকিস্তান সামরিক চক্রকেও। কারণ তারা বুঝে গেছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদের আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশ পরিচালিত হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। এই অবস্থায় ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যদি রেসকোর্স জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন!
৭ মার্চের ভাষণ ধারণ, সংরক্ষণ ও বিশ্ব ঐতিহ্য হলো যেভাবে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য। ইউনাইটেড নেশান্স এডুকেশন, সাইন্স অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন-ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য...
৭ মার্চের ভাষণ ধারণ, সংরক্ষণ ও বিশ্ব ঐতিহ্য হলো যেভাবে
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ০০:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক অ অ প্রিন্ট
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য। ইউনাইটেড নেশান্স এডুকেশন, সাইন্স অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন-ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য গৌরব ও আনন্দের। এ স্বীকৃতির ফলে কালোত্তীর্ণ ভাষণটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ন্যায় এবং মুক্তির পথে এগিয়ে চলতে উজ্জীবিত করবে।
সরকারের সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ৭ মার্চের ভাষণ ও এর ইতিহাস সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। তিনি এর ওপর একটি প্রামাণ্য পুস্তিকাও প্রকাশ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি হন।
সম্পর্কিত খবর
বিএনপি ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিলো: কাদের
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ মার্চ উদযাপনের নির্দেশ
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে ইউনেস্কোতে প্রস্তাব পাঠান। একই সময়ে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খানও ইউনেস্কোতে আলাদা প্রস্তাব পাঠান। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, তথ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তৎকালীন পররাষ্টমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি শহীদুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর তথ্য মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে পরামর্শ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম দালিলিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোতে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন প্রস্তাব পাঠায়। এসব প্রস্তাব দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
এই ভাষণ বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরণা যোগাবে। বিশ্ববাসী যুগের পর যুগ বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ভাষণ। এটি ধারণ ও সংরক্ষণে তৎকালীন ফিল্ম ডিভিশন, বর্তমানের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চলচ্চিত্র শাখার কর্মকর্তা মহিব্বুর রহমান খায়ের (প্রয়াত অভিনেতা আবুল খায়ের), আমজাদ আলী খন্দকার, জি. জেড. এম. এ. মবিন, এম. এ. রউফ ও এস. এম. তৌহিদ বাবু ৭ মার্চের ভাষণটি ধারণ করতে সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সাহসী ভূমিকার কারণে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অডিও-ভিডিও ধারণ করা সম্ভব হয়। ৭ মার্চের ভাষণ, জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য যে সব ভাষণের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়, তার প্রায় সবগুলোই চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের চলচ্চিত্র শাখার কলাকুশলিদের ধারণ করা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের পর চলচ্চিত্র বিভাগের তৎকালীন পরিচালক/কম্পট্রলার মহিব্বুর রহমান খায়ের আশঙ্কা করেন যে, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ৭ মার্চের ভাষণটির কপি নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই তিনি ভাষণের মূলকপি ও অডিও রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেন। এ সময়ে ফিল্ম ডিভিশনের অফিস ছিল সচিবালয়ের ভেতরের টিন শেডে। এপ্রিল মাসের শুরুতে এসব গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ ও অন্যান্য ডকুমেন্ট ৪২ইঞ্চি মাপের একটি স্টিলের ট্রাংকে নিয়ে তিনি সহকারি চিত্রগ্রাহক আমজাদ আলী খন্দকারকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে জনাব আমজাদ আলী খন্দকার ১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল ভাষণের অডিও-ভিডিও ফুটেজসহ স্টিলের ট্রাংকটি বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে নেওয়ার উদ্দেশে বেবিট্যাক্সিতে করে সোয়ারিঘাটে যান। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কড়া টহলের মধ্যেও জনাব আমজাদ আলী খন্দকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জিঞ্জিরা হয়ে মুন্সিগঞ্জের জয়পাড়ায় মজিদ দারোগা বাড়িতে ট্রাংকটি নিয়ে যান।
পেছন পেছন যান মহিব্বুর রহমান খায়েরও সেখানে যান। তারা ভাষণের রিল ও অন্যান্য ডকুমেন্ট ভর্তি ট্রাংকটি অত্যন্ত সাবধানে সেখানে লুকিয়ে রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখান থেকে ট্রাংকটি এনে আবারও মূল অফিসের স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ষড়যন্ত্রকারীরা ৭ মার্চের ভাষণের রিল নষ্ট করতে চলচ্চিত্র বিভাগে তল্লাশি চালায়। চলচ্চিত্র শাখার কর্মীরা ভাষণের মূল পিকচার নেগেটিভ ও সাউন্ড নেগেটিভসহ অন্যান্য ফুটেজ ভিন্ন একটি ছবির ক্যানে ঢুকিয়ে ফিল্ম লাইব্রেরিতে লুকিয়ে রাখেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ৭ মার্চের ভাষণ মনে করে অন্য রিল নষ্ট করে চলে যায়। আর এভাবেই রক্ষা পায় ঐতিহাসিক এই ভাষণের দলিল।
এছাড়া ৭ মার্চের ভাষণ ধারণের স্মৃতিবাহী শব্দধারণ যন্ত্র বা নাগ্রা মেশিন এবং টু-সি ক্যামেরাটি এখনো চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে সংরক্ষিত আছে।
পূর্ব পশ্চিম/জেআর নিউজ ট্যাগ:৭ মার্চ
AddThis Sharing Buttons
Share to Facebook Share to Messenger Share to Twitter Share to WhatsApp Share to Copy Link
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?