কাদিয়ানী কি
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে কাদিয়ানী কি পান।
আহ্মদীয়া
আহ্মদীয়া
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আহমদীয়া احمدیہ মোট জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন[১]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
ধর্ম
আহমদীয়া জামাত, লাহোর আহমদিয়া আন্দোলন,
ভাষা উর্দু, আরবি
আহমদীয়া; পূর্ণরূপে আহমদীয়া মুসলিম জামাত (উর্দু: احمدیہ مسلم جماعت; আরবি: الجماعة الإسلامية الأحمدية) একটি মুসলিম ধর্মীয় পুনর্জাগরণ অথবা মসিহবাদী আন্দোলন যার উদ্ভব হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্রিটিশ ভারতের কাদিয়ান এলাকার মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবী করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে আখেরী জামানায় প্রতিশ্রুত ও মুসলমানদের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ (যীশু বা ঈসা) উভয় হিসেবেই প্রেরণ করেছেন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় শান্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের প্রতীক্ষিত পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বদের মূর্ত করতে। নবী মোহাম্মদের বিকল্প নাম 'আহমদ' থেকে এই আন্দোলন ও সদস্যগণ ('আহমদী মুসলিম' বা সংক্ষেপে 'আহমদী') নিজেদের নামকরণ করলেও সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম কাদিয়ান এর নামে কাদিয়ানী হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আহমিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। সৌদি আরবে পুরো দেশে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের কেউ সেখানে গোপনে হজ পালন করতে গেলে তাকে আটক করা হয়।[২]আহমদীরা বিশ্বাস করে যে মির্যা গোলাম আহমদ ইসলামকে তার আসল প্রথমযুগীয় অবস্থায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কেতাবে উল্লেখিত যীশু বা ঈসার গুণবিশিষ্ট ইমাম মাহদী হয়ে এসেছেন ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করতে ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে এর নৈতিক ব্যবস্থা চলমান করতে। তারা আরও বিশ্বাস করে যে মির্যা গোলাম আহমদ ইসলামের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ(সা.) এর প্রদর্শিত পথে পাঠানো একজন “উম্মতী নবী”। তাদের মতে নবুয়াত খাতামান্নাবিঈন এর অর্থ নবুয়াত এর সমাপ্তি নয় বরং খাতামান্নাবিঈন মানে "নবীগনের মোহর" বা নবীগনের সত্যায়নকারী। তাদের মতে নবী মোহাম্মদ এর প্রকৃত অনুসরনে নতুন নবী আসতে পারবেন তবে তিনি হবেন ‘উম্মতী নবী’ ও তিনি কোনো নতুন শরীয়ত আনবেন না।[৩] আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বা সুন্নীদের মতে, এই ‘উম্মতী নবীর’ ধারণা কুরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয় এবং তারা তাদেরকে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত মানে না।[৪][৫] আহমদীয়াদের মতে যেহেতু তারা কালিমা তৈয়বা ‘লা ইলাহা ইলাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বলে তাদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করার অধিকার কারো নেই।[৬] আহমদীয়া মুসলিম জামাতের কার্যক্রম ক্রমবর্ধমান। পৃথিবীর ২১৩ দেশে আহমদীয়াদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্র লন্ডনে অবস্থিত। গোলাম আহমদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা খিলাফত প্রবর্তন করে এবং তাদের নির্বাচিত ৫ম খলিফা মির্যা মাসরুর আহমেদ লন্ডন থেকে এই সংগঠনের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।[৭] আহমদী বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডকে ‘আহ্মদীয়াত’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।[৮]
ইসলাম
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ
দেখান বিশ্বাস ও আদর্শ দেখান চর্চা ও জীবনপদ্ধতি দেখান গ্রন্থ ও বিধিবিধান দেখান মুহাম্মাদ ও ইতিহাস দেখান সমাজ ও সংস্কৃতি দেখান অর্থনীতি ও রাজনীতি দেখান সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী দেখান সম্পর্কিত বিষয়াবলী ইসলাম প্রবেশদ্বার দেস
ইতিহাস ও নামকরণ[সম্পাদনা]
১৮৮৯ সালে পাঞ্জাব অঞ্চলে আহমদীয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হলেও 'আহমদীয়া' নামটি রাখা হয় আরও এক দশক পর। ১৯০০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি ইস্তেহারে গোলাম আহমদের ভাষ্যে নামটি নিজের নাম 'আহমদ'-কে ইঙ্গিত করছে। 'আহমদ' নামটি নবীজির মক্কী জীবনকালে তার খোতবার সৌন্দর্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এবং উদ্যম ও ধৈর্য বহন করে এবং 'মোহাম্মদ' ও 'আহমদ'-এর মধ্যে দ্বিতীয়টি বেশি মনোযোগ দখল করে। উপরন্তু তিনি বলেন বাইবেলের পুরাতন নিয়মে (নবী মুসার) বলে নবী মোহাম্মদের আগমনের উল্লেখ আছে এবং কোরআনে নবী ঈসা সেই নবীর ব্যাপারে ইঙ্গিত করেন 'আহমদ' নামটি দ্বারা। তাই 'মোহাম্মদ' নামটিকে নবী মুসার জুলুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামী কর্মকাণ্ড এবং 'আহমদ'-কে নবী ঈসার শান্তিপূর্ণ ধর্মোপদেশ কার্যের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন এবং মুসলিম বিশ্বে অন্যান্য আন্দোলন থেকে আলাদা করতে তিনি 'আহমদীয়া' নামটি বেছে নেনঃ
"যে নামটি এই আন্দোলনের সবচেয়ে উপযোগী এবং আমার ও আমার জামাতের জন্যে আমি পছন্দ করি তা হল 'আহমদীয়া বর্গের মুসলমানগণ'। তবে এটি 'আহমদী মাজহাবের মুসলমানগণ' হিসেবে উল্লেখ হলেও তা গ্রহণযোগ্য।" (মাজমু'আ ইশ্তেহারাত, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)
২৩ মার্চ ১৮৮৯ তারিখে পঞ্জাবের লুধিয়ানায় তার বাড়িতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার সহচারী অনুসারীদের কাছ থেকে (মুসলমানদের নেতা মাহদী হিসেবে) ইমামত বা খেলাফতের বায়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন। এর পূর্ব তিনি সুত্র অনুযায়ী তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওহী বা আপ্তবাক্য পেতে শুরু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তিনি নিজেকে মোজাদ্দেদ (মুসলিম বিশ্বে প্রতি একশত বছর পর আগত ইসলামের পুনরুদ্ধারকারী), রূপক অর্থে মসীহের পুনরাগমন এবং মুসলমানদের প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে দাবি করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশ (বর্তমানে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশ), পঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী লাভ করেন। তিনি ও তার অনুসারীরা দাবি করে যে নবী মোহাম্মদসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তার আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছে।
ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে ব্যাপক খ্রিষ্টান ও আর্য সমাজবাদী ধর্মপ্রচারের জবাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন হিসেবেই গড়ে ওঠে আহমদীয়া। কিন্তু পরবর্তীতে এটি ইংরেজ সরকারের পক্ষে অনেক গ্রন্থ রচনা করে এবং জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯১৩ সনের দিকেই আহমদীয়া জামাত বিদেশে তাদের প্রচার কর্ম শুরু করে (যেমন লন্ডনে ফজল মসজিদ নির্মাণ)। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে আহমদীয়া আমেরিকায় 'সিভিল রাইটস মুভমেন্ট' বা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত। এটি ১৯৫০ পর্যন্ত "আফ্রিকান-আমেরিকান ইসলামে তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়" হিসেবে বিবেচিত এবং বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে বিপুল একটি ধর্মমত।
বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]
মুসলমানদের প্রচলিত বিশ্বাসের সাথে আহমদীদের মতবাদের ভিন্নতা থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলধারার মুসলমানগণ প্রথম থেকেই আহমদীয়ার বিরোধিতা করে আসছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সরকার আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। পাকিস্তানের মত বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য আন্দোলন হতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আহমদী মুসলমানরা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন।
কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?
Home মির্যা কাদিয়ানী
কাজিবাতে মির্যা
কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?
By http://markajomar.org/ -
July 7, 2021 11005 0
বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম
কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়? তারা কেন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়? সংক্ষেপে জেনে নিন!
মির্যা কাদিয়ানীর রচনা
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে মির্যা কাদিয়ানীর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার সামান্য তালিকা তুলে ধরছি। যেমন, ১ . মুলহাম (তাযকিরাহ পৃ-০৬; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৬৮ ইং)। ২. বায়তুল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-২৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮১ ইং)। ৩. মুজাদ্দিদ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৪. মামুর মিনাল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৫. নাযীর (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৬. আদম, বিবি মরিয়ম, আহমদ (তাযকিরাহ পৃ-৫৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৩ ইং)। ৭. মুরসাল (তাযকিরাহ পৃ-৯৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৪ ইং)। ৮. মাসীলে মসীহ (তাযকিরাহ পৃ-১৪৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯১ ইং)। ৯. তাওহীদ এবং তাফরিদ (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)। ১০. কুন ফা-ইয়াকুন (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)। ১১. মসীহ ইবনে মরিয়ম (তাযকিরাহ পৃ-১৭৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৩ ইং)। ১২. ইমাম মাহদী এবং মসীহ ঈসা (তাযকিরাহ পৃ-২০৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৪ ইং)। ১৩. ইমামুয যামান (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-৪৯৫; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)। ১৪. খোদা দাবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-১০৩; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)। ১৫. নবুওয়তী প্রাসাদের সর্বশেষ ইট বা শেষনবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৬ পৃ-১৭৭-৭৮; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০০ ইং)। ১৬. কাশফ অবস্থায় নিজেকে একজন নারীরূপে খোদার সাথে সহবাস করার দাবী (ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট, নং ৩৪, পৃ-১৩; রচনাকারী কাদিয়ানীর ঘনিষ্ট সহচর কাজী ইয়ার মুহাম্মদখান)। ১৭. বুরুজি খাতামুল আম্বিয়া বা শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর অবতার। (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ১৮. জিল্লি মুহাম্মদ (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ১৯. জিল্লি, বুরুজি, উম্মতি নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ২০. শরীয়তবাহক নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-৪৩২ এবং খ-১৭ পৃ-৪৩৫-৩৬; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০২ ইং)। ২১. শ্রীকৃষ্ণের অবতার (রূহানী খাযায়েন খ-২২ পৃ-৫২২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০৭ ইং)।
বিস্তারিত আলোচনা :কাদিয়ানীদের প্রচারপত্রে (আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত-এর পরিচিতি-তে) ‘আমাদের ধর্ম বিশ্বাস’ শিরোনামে ‘নূরুলহক’ (রচনাকাল ১৮৯৪ইং) বইয়ের উদ্ধৃতিতে তারা তাদের যে ‘ধর্মবিশ্বাস’ উল্লেখ করেছে তা তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের মত অনুসারে বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে বাতিল। কেননা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণকালে মির্যা কাদিয়ানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তিনি (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:) এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ আছে।” (দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১)। এখানে একদম পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মাঝে প্রত্যেকটি বিষয়ে বিরোধ রয়েছে। অর্থাৎ তাদের সাথে যে আমাদের বিরোধ আছে একথা নতুন নয়, অনেক আগেই তারা তাদের রচনাবলীতে স্বীকার করে লিখে গেছে। ধূর্ত কাদিয়ানী নেতারা সাধারণ মানুষকে তাদের দলে ভিড়ানোর উদ্দেশ্যে এগুলো ভুলেও প্রকাশ করেনা। অধিকন্তু মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো স্ববিরোধ কথাবার্তায় ভরপুর। ফলে মির্যার বইগুলো নিরপেক্ষভাবে পড়লে যে কারো পক্ষে ‘কাদিয়ানী জামাত’ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। এবার তাদেরই বিভিন্ন বই থেকে সংক্ষেপে তাদের মারাত্মক কিছু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস এখানে তুলে ধরছি। যেমন-
১। মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, “অতএব, যেমনটি বারাহীনে আহমদীয়াতে খোদাতালা বলেছেন, আমি আদম, আমি নূহ, আমি ইবরাহিম, আমি ইসহাক, আমি ইয়াকুব, আমি ইসমাইল, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা ইবনে মরিয়ম, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ বুরুজীভাবে।” (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫২১)।
এখন আমি নতুন কনভার্টেট কাদিয়ানীবন্ধুদের জিজ্ঞাস করতে চাই, কাদিয়ানী নেতারা যখন আপনাদেরকে কাদিয়ানীধর্মের দিকে দাওয়াত দিয়েছিল তখন কি মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত দাবীগুলোর সামান্য কিছুও আপনাদেরকে বলেছিল? ৯৯% শিউর যে, ওরা আপনাদেরকে এগুলো বলেনি। আচ্ছা, আপনারা শুধু একবার ভাবুন! মির্যা কাদিয়ানীর দাবী অনুসারে সে যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়, তখন কলেমার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর কী তাৎপর্য দাঁড়াবে? অতএব খুবই ভাবিয়ে দেখা দরকার।
এখন হয়ত জানতে চাইবেন যে, মুসলমানদের কলেমা’র “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থে কাদিয়ানীরা কী এমন বিকৃতি ঘটিয়েছে? উত্তরে বলব, জ্বী, অবশ্যই তারা বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। যেমন তাদেরই বইতে পরিষ্কার লিখা আছে, “আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কেননা মসীহে মওঊদ [মির্যা কাদিয়ানী] নবী করীম (সা:) থেকে ভিন্ন কেউ নন। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্তা তাঁর সত্তাতে পরিণত। এমনকি [তিনি এও বলতেন] যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদ মুস্তফার মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে চিনল, না আমাকে দেখল। এটি এইজন্য যে, আল্লাহতালার ওয়াদা ছিল, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন [মুহাম্মদ মুস্তফা]’কে দুনিয়াতে আরেকবার পাঠাবেন। যেমন ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট। সুতরাং মসীহে মওঊদ-ই স্বয়ং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। যিনি ইসলাম প্রচার করতে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করেছেন। তাই আমাদের [কাদিয়ানিদের] জন্য নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্থলে অন্য আর কেউ আসত তখনই কেবল [নতুন কলেমার] প্রয়োজন পড়ত।” (কালিমাতুল ফছল ৬৮, ষষ্ঠ অধ্যায়)। সবাই পড়ুন, নাউযুবিল্লাহ।
কাদিয়ানী
প্রকৃত ইসলাম
আমাদের পরিচয় >
কাদিয়ানী
ফির্কার নামঃ কাদিয়ানিসংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
কাদিয়ানি একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করছে। মানুষ যে কোন ধর্ম মত গ্রহন করতে পারে এটা তার ধর্মীয় স্বাধীনতা। কিন্তু অন্যের নামে নিজের ধর্ম মত প্রচার করার অধিকার কারো নেই। আর এই অনধিকার চর্চা করেছেন মির্যা গোলাম আহ্মেদ কাদিয়ান। তিনি নিজে ধর্মমত আবিস্কার করে নাম দিয়েছর ইসলাম। আর অনুসারির নাম দিয়েছেন মুসলিম। তিনি স্ববিরোধী কিছু দাবীর মাধ্যমে নিজেকে ১৮৮৯ সালে আহ্মদিয়া মুসলিম জামাত নামক একটি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। তার দাবী মতে, তিনি একজন মুজাদ্দেদ (আধ্যাত্মিক সংস্কারক), প্রতিশ্রুত মসীহ, মাহদী এবং খলীফা। তিনি একজন উম্মতি নবী হিসেবেও নিজেকে দাবী করেন এবং তার সপক্ষে কুরআনের বহু আয়াত এবং ঘটনা পেশ করেন। তাঁর অনুসারীরা আহমদিয়া এবং কাদিয়ানি উভয় নামেই পরিচিত। ইতিহাসে খুজলে দেখা যাবে যুগে যুগে বহু জন বহু মতবাদ এনেছেন। পৃথিবীতে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার শিয়া, ওয়াছিল ইবনে আতার’ মুতাজিলা, সীসওয়াহর কাদরিয়া, মির্জা হোসেন আলী ইবনে আব্বাসের বাহাই সম্প্রদায় সহ অনেক মতবাদ এখনও অনেক মতবাদ দুনিয়াতে বিদ্যমান রয়েছে। তবে তারা কেউ কাদিয়ানীদের মত নবী, প্রতিশ্রুত মসীহ, মাহদী এবং খলীফা দাবি নিয়ে হাজির হয়নি। যার কারণে প্রতিটি সচেতন মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হয়নি। পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ৪৮ টি দেশ, রাবেতা ও ওআইসির কাদিয়ানীদের অমুসলিম ও স্বতন্ত্র ধর্মের অনুসারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। কাজেই মির্যা গোলাম আহ্মেদ কাদিয়ান জীবনী জানতে পারলেই কাদিয়ানি সম্প্রদায় সম্পর্কে জানা যাবে। কারন তার জীবনের বাকে বাকে সাজান আছে এই ধর্মমত।
মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী
কাদিয়ানী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী (Mirza Ghulam Ahmad) ১৮৩৫ সনের ১৩ই ফেব্রুয়ারী ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মির্জা গোলাম মুর্তজা ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা চিকিৎসক। তার মাতা চিরাগ বিবি। তিনি জমজ সন্তানের জন্ম দিলেও গোলাম আহমেদ ব্যতিত অপর সন্তানটি বাঁচেনি।
শৈশর ও পড়াশুনা: তিনি প্রথমিকভাবে আরবী ভাষা ও গ্রামার, কোরআন, দর্শন এবং ফারসী ভাষা শিক্ষা করেন গৃহশিক্ষক ফজলে এলাহির নিকট। অত:পর ১০ বৎসর বয়সের সময় তার শিক্ষক নিযুক্ত হন ফজল আহমেদ। আর ১৮-১৯ বৎসর বয়সের সময় তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন গুল আলী শাহের নিকট। বাল্যকাল থেকেই মির্জা গোলাম আহমেদ খুবই সাধারণ ছিলেন। জাগতিক কোন বস্তু তাকে আকর্ষণ করত না। তিনি খুব অন্যমনস্ক ও ভুলোমনা ছিলেন।
তার পারিবারিক: ১৮৫৩-৫৪ সনের দিকে গোলাম আহমেদ পারিবারিকভাবে বিবাহ করেন হুরমত বিবিকে। এই স্ত্রী ছিলেন তার জ্ঞাতিগুষ্ঠিরই একজন। তার গর্ভে দু’টি সন্তান (মির্জা সুলতান আহমেদ ও মির্জা ফজল আহমেদ) জন্মলাভ করে। ১৮৯১ সনে গোলাম আহমেদ তার এই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। অবশ্য ইতিপূর্বে তিনি ১৮৮৪ সনে দিল্লীর নবাব মীর নাসির উদ্দিনের কন্যা নূসরত জাহান বেগমকে বিবাহ করেছিলেন। এই স্ত্রীর গর্ভে গোলাম আহমেদ তিনটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। এরা হলেন যথাক্রমে-মির্জা বশির উদ্দিন মাহমুদ, মির্জা বশির আহমেদ ও মির্জা শরীফ আহমেদ।
কর্ম জীবন: ১৮৬৪ সনে মির্জা গোলাম আহমেদ তার পিতার ইচ্ছানুসারে শিয়ালকোটে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তার বড় ভাই মির্জা গোলাম কাদিরও একজন সরকারী কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু ১৮৬৮ সনে তিনি তার পিতার ইচ্ছানুসারে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন এবং পৈত্রিক সম্পত্তি দেখাশুনোর ভার নেন। পাঞ্জাবে গোলাম আহমেদের দাদা গুল মুহম্মদের বিশাল জমিদারী ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তৎকালীন পাঞ্জাবের শিখ সরকার তাদের সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন করে নেয়। তাদের অধীনে ছিল কেবল কাদিয়ান গ্রামটি। পরবর্তীতে শিখ সরকার ঐ গ্রামটিও রাষ্ট্রীয় অধিকারভূক্ত করে নেয় এবং মির্জা পরিবারকে সেখান থেকে উৎখাত করে। কিন্তু শেষ পাঞ্জাব শিখ সরকার রণজিৎ সিং তার শাসনের শেষ বৎসরে মির্জা গোলাম মুর্তজা কাদিয়ানে ফিরে এলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাকে পাঁচটি গ্রাম ফিরিয়ে দেন। অত:পর এই ভূ-সম্পত্তি দেখাশুনোর জন্যে তিনি পুত্র গোলাম আহমেদকে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে গ্রামে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
গবেষনা: নিজ গ্রামে ফিরে এসে নিজের অখন্ড অবসরে গোলাম আহমেদ নিয়মিত প্রত্যাহিক এবাদতে, কোরআন পঠন ও তার তফসীর পর্যালোচনা ও অন্যান্য বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকাদি পাঠে মনোযোগ এবং নানাবিধ সমাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তাছাড়া তিনি তার পিতার সংগৃহীত চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থাদি পঠনেও এসময় মনোযোগী হয়েছিলেন। তিনি অনেক বই লিখেন।
তার ধর্মমতের উত্থান: ১৮৮০ থেকে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে একজন তুখোড় তার্কিক। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় পন্ডিতদের সাথে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন এবং নিজের জ্ঞান ও মেধার পরিচয় দিয়েছেন।
এরই মাঝে ১৮৮৬ সানে তিনি সিদ্ধিলাভের জন্যে হোসিয়ারপুরে ধ্যানে বসেছিলেন, কিন্তু শারীরিক কারণে ৪০ দিবস ও রজনীর ঐ কঠোর ব্রত তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি।
আওলিয়া হিসাবে প্রকাশ ও ঐষিবাণী পাওয়ার দাবি: ১৮৮৯ সন তিনি জনগনের নিকট থেকে বায়াআত গ্রহন শুরু করেন ও নিজেকে উম্মতের আওলিয়া দরবেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন। (সিরাতুল মাহদি ১ম খঃ পৃঃ ১৪, ৩১, ও ৮৯)।
এবং এ বছরই মির্জা গোলাম আহমদ ঘোষণা করেন যে, তিনি একটি ঐষিবাণী পেয়েছেন, যাতে তাঁকে এ মতবাদে বিশ্বাসীদের আনুগত্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তিনি তার দৈব প্রাপ্ত ধর্মমতের প্রচার শুরু করেন।
ঈশা ইবনে মারইয়াম হওয়ার দাবি: ১৮৯১ সনে মির্জা গোলাম আহমেদ নিজেকে 'ঈশা ইবনে মারইয়াম' হিসেবে ঘোষণা দেন এবং তার দাবীর পিছনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নানা যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তার রচিত 'Jesus in India' গ্রন্থটি তথ্য, তত্ত্ব, যুক্তি দিয়া নিজেকে ‘ঈশা ইবনে মারইয়াম’ প্রমাণে আপ্রান চেষ্টা করেন। ঈশা ইবনে মারইয়াম হিসেবে ঘোষণা দেবার পর গোলাম আহমেদ তার মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে সমগ্র ভারতবর্ষ চষে বেড়াতে লাগলেন। মির্জা গোলাম আহমেদ নিজেকে ঈশা ইবনে মারইয়াম দাবী করলে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট থেকে আপত্তি, নিন্দা ও তীব্র বাঁধার সম্মুখিণ হলেন। এ সময় "আহলে হাদিস" পত্রিকার সম্পাদক মওলানা সানাউল্ল্যা অমৃতসরী তাকে সরাসরি মিথ্যেবাদী আখ্যায়িত করে তার পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় তার ভন্ডামি উপস্থাপন করতে লাগলেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। (হাকিকাতুল ওয়াহয়ী পৃঃ ১৪৯, সিরাতুল মাহদি পৃঃ ৩১, ৮৯)।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?