ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের বিষয়বস্তু
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের বিষয়বস্তু পান।
ক্রীতদাসের হাসি
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্রীতদাসের হাসি
সময় প্রকাশন সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখক শওকত ওসমান কাজের শিরোনাম অনুবাদক কবীর চৌধুরী
দেশ পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
ভাষা বাংলা ধরন উপন্যাস প্রকাশনার তারিখ ১৯৬২
মিডিয়া ধরন ছাপা (শক্তমলাট)
পুরস্কার আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬)
বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত উপন্যাস। ১৯৬১ সালে রচিত উপন্যাসটি প্রথম ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়।[১] পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে সময় প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল।[২] তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়।[] এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী।[৩]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
↑ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা : সৌমিত্র শেখর। পৃষ্ঠা ৫৩৫: সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০২০
↑ দেবদাস চক্রবর্তী : মূর্ত জীবনের বিমূর্ত রূপকার
↑ , সেলিনা হোসেন[]
বিষয়শ্রেণীসমূহ: বাংলা ভাষার উপন্যাসবাংলা ভাষার বাংলাদেশী উপন্যাস১৯৬৩-এর বাংলাদেশি উপন্যাস
শওকত ওসমান এর ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস অবলম্বনের তাতারী চরিত্রটি আলোচনা কর। 211003
শওকত ওসমান বাংলাদেশের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন। তবে
অনার্স ১ম বর্ষ / বাংলা উপন্যাস-১
শওকত ওসমান এর ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস অবলম্বনের তাতারী চরিত্রটি আলোচনা কর। 211003
December 12, 2021 - by সালেক শিবলু
SHARETWEETPIN ITSHARE
শওকত ওসমান এর ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাস অবলম্বনের তাতারী চরিত্রটি আলোচনা কর।
শওকত ওসমান বাংলাদেশের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন। তবে কথাশিল্পী হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো- জননী, বনি আদম, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, বেড়ী, দুই সৈনিক, চৌরসন্ধি, জাহান্নাম হতে বিদায়, রাজা উপাখ্যান প্রভৃতি। ক্রীতদাসের হাসি ১৯৬৩) তাঁর অন্যতম উপন্যাস। এ উপন্যাস অবলম্বনে এখানে তাতারী চরিত্রটি আলোচনা করা হলো-
শওকত ওসমান এর উপন্যাসের কাহিনিসূত্রে যতটুকু জানা যায় যে, খলিফা হারুনর রশীদ আব্বাসীয় বংশের মানুষ। তার অনেক গোলাম, বাঁদী আছে। তাতারী তার মধ্যে অন্যতম। তাতারীর পরিচয় সম্পর্কে জুবায়দার উক্তিতে এতটুকু জানা যায় যে,‘ হাবসী গোলাম। কিন্তু সুন্দর সুঠাম দেহ নওজোয়ান।’ আর বাঁদী মেহেরজানের ভাষায়-‘মানুষ হিসেবে ও আরো সুন্দর’।
বেগম জুবায়দা মেহেরজানকে হাবশী গোলাম তাতারীর সঙ্গে বৈধভাবে শাদি দেয়। তারা গোপনে মিলিত হয়। খলিফা তাদের এ মিলন হাতেনাতে ধরে ফেলে। তখন তাদের শাদি মেনে নেয় নি। কারণ খলিফার আদেশ ছাড়া এ রাজ্যের কোন নারী পুরুষ শাদি পর্যন্ত করতে পারে না। এ অপরাধে খলিফা হারুনর রশীদ তাদের শাস্তি দেয় অত্যন্ত কৌশলে। তাতারীকে স্বাধীন করে দেয়, খলিফার ঘোষণা-‘আমি ঘোষণা করছি যে, এই মুহূর্ত থেকে হাবশী তাতারী কয়েক মুহূর্ত আগে যে গোলাম ছিল, বগদাদ শহরের পশ্চিমে আমার যে বাগিচা আছে সেই বাগিচা এবং তার যাতীয় গোলাম বান্দী, মালমত্তা, আসবাব সব কিছুর সে মালিক। তার সমস্ত লেবাস ও দিনগুজরানের খরচ আজ থেকে খাজাঞ্চিখানা বহন করবে’।
এত বিশাল বাগ-বাগিচা পেয়েও তাতারীর মনের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় নি। তাতারী পূর্বের মতোই নিজেকে গোলাম মনের করে। তাতারী মেহেরজানকে ভুলে যায় নি। তাতারী সব কিছু পেয়েও কোনকিছু গ্রহণ করে নি। এমনকি মোহাফেজের কাছ থেকে ‘জাহাপানা’ শব্দটিও গ্রহণ করে নি। বরং মোহাফেজের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকতে চায়। মোহাফেজকে ভাই বলে সম্বোধন করেছে। এ প্রসঙ্গে তাতারীর উক্তিÑ‘শোনো, মোহাফেজ। এসো হাতে হাত মেলাও। মনে রেখো, তুমি-ও যা, আমি-ও তাই’। মোহাফেজ তাতারীর কথা শুনে খুশি হয়, একথাগুলো মোহাফেজের কাছে বড় মধুর লাগে। আসলে তাতারী চরিত্রের মধ্যে এতটুকু অহংকার নেই। ভাই ভাই হয়ে এ সময়টা তাতারী কাটিয়েছে। বিনা পরিশ্রমে যা পাওয়া যায়, তার কোন মূল্য তাতারীর কাছে নেই। তাই তাতারীর উক্তি-‘যোগ্যতা, মেহনতের বাইরে থেকে হঠাৎ কিছু যদি আমাদের উপর ঝরে পড়ে, তাতে সুখ কোথায়? মগজ আর তাগদের জোরে কোন জিনিস না পেলে আমরা মজা পাই না। এই বাগ-বাগিচা আমার মেহনতের ফল নয়।’ তবে তাতারী মোহাফেজের কাছে জুবায়দার খাস বাঁদী মেহেরজানের খবর জানতে চায়। এই বিশাল বাগ-বাগিচার মালিক হয়েও তাতারী মেহেরজানকে একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলে যায় নি।
হাবশী গোলাম তাতারীর হাসি শোনবার জন্য খলিফা ব্যাকুল থাকতো। এ জন্য তাতারীকে কতনা কিছুই দান করেছে। বগদাদ নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ নর্তকী বুসায়নাকে তাতারীর কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু বুসায়না তাতারীকে হাসাতে ব্যর্থ হয়েছে। নর্তকী বুসায়না তার ভরা যৌবণ খোলাখুলিভাবে তাতারীর কাছে তুলে ধরেছে। তখন তাতারী বুসায়নাকে বলেছে যে, লেবাস দেহ আবরণের জন্য, উলঙ্গ করার জন্য নয়; তবুও বুসায়না তাতারীর কালো ঠোঁটে চুম্বনের জন্য এগিয়ে গেলে তাতারী অত্যন্ত বিনীতভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপর নর্তকী বুসায়না খোলা স্তন প্রদর্শন করলে তাতারীর মধ্যে কোন লোভ জাগ্রত হয় নি। বরং মাতৃত্ববোধ জেগে উঠেছে। তাতারী বুসায়নাকে খোলা বুক ওড়নায় ঢাকবার জন্য অনুরোধ করেছে। এরপর আমরা তাতারীর মুখে এক অসাধারণ দার্শনিক উক্তি শুনতে পাই। তাতারী বলছেÑ‘নারীর বিবসনা হওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু সে কেবল প্রেমে। নারীর নিলর্জ্জ হওয়ার অধিকার আছে; তাও শুধু প্রেমে।’ বাজিতে বুসায়না হেরে গেলে নিজেই আত্মহত্যা করে। এ খবর পেয়ে তাতারী হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। পাগলের মতো দৌড়ে ছুটে যায় গাছের নীচে, অনান্য গোলামের সাহায্যে গাছ থেকে লাশ নামিয়ে আনে। বোনের জন্যও কেউ এত কান্না করে না।
উপন্যাসের কাহিনিসূত্রে বোঝা যায় যে, খলিফার সব কিছু থাকলেও একটি জিনিস তার ছিল না। সেটা হলো মনের শান্তি। গভীর রাতে তাতারী আর মেহেরজানের হাসি শুনে খলিফা কিছুটা শান্তি পেয়েছিল হয়তোবা। তাই একটু শান্তির আশায় খলিফা তাতারীকে এতকিছু দান করে একটু হাসি শোনার জন্য। কিন্তু তাতারী হাসে নি, এমনকি একটি কথাও বলে নি।। তাই খলিফা তাতারীর উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় এবং অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। খলিফার তাতারীকে সময় দিয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। এ প্রসঙ্গে খলিফার উক্তিÑএকটি জবাব দাও…একটি জবাব….একটি হাসি…আচ্ছা, হাসি জাহান্নামে যাক, একটা জবাব দাও। আমি তোমার সব অপরাধ মাফ করে দেব। যা চাও তাই পাবে। সময় দিলুম..।’
খলিফা অত্যন্ত নিষ্ঠুর মনের মানুষ। তার মধ্যে এতটুকু মানবিক অনুভূতি উদয় হয় নি। চাবুকের আঘাতে তাতারীর সমস্ত শরীর রক্তাক্ত হয়েছে, তবু হাসে নি; এমনকি একটি কথা ও বলেনি। তবে খলিফার প্রতি তাতারীর ঘৃণা জমে ছিল। খলিফা তাতারীর বিবাহিত বৈধ স্ত্রী মেহেরজানকে কেড়ে নিয়েছে এবং ভোগ করেছে। তাই তাতারী হাসতে পারে নি, হাসতে পারে না। তার পরিবর্তে খলিফার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। খলিফাকে তাতারী তুচ্ছার্থে তুই বলে সম্বোধন করেছে। এ প্রসঙ্গে তাতারীর উক্তিটি উল্লেখ্য-‘শোন, হারুনর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বন্দি কেনা সম্ভব! কিন্তু-কিন্তু- ক্রীতদাসের হাসি না-না- না-’। অর্থাৎ দীরহাম দিয়ে ক্রীতদাস কেনা গেলেও ক্রীতদাসের হাসি কেনা যায় না। তাতারী মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করেছে, তবুও খলিফার নিকট পরাজয় স্বীকার করে নি।
উপর্যুক্ত আলোচনা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় যে,শওকত ওসমান তাতারী চরিত্রের মধ্যে প্রেমের বিকাশ অসাধারণ। বিনা কষ্টের কোন জিনিস সে গ্রহণ করে না। ভালবাসার মূল্য তার কাছে আলাদা। ভালবাসা না থাকলে কোন নারীকেও তাতারী গ্রহণ করতে পারে না। তাই বুসায়নাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করেছে, কি›তু হার মানে নি। তবে শেষ সময়ে খলিফার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে নিজের ব্যক্তিত্ব যে খলিফার চেয়েও বড়- তা প্রমাণ করেছে। তাই এ রকম চরিত্র বাংলা সাহিত্যে অতুলনীয়।
ক্রীতদাসের হাসি
শওকত ওসমান রচিত উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি বইয়ের রিভিউ লিখেছেন নুসরাত জাহান
ক্রীতদাসের হাসি - শওকত ওসমান: মানব জীবনের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি | নুসরাত জাহান
হাসি, মানব জীবনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এমিলি ডিকিনসনের মতে 'হাসি নির্মলতার চিঠি'। জীবনে সুখ-দুঃখ আপেক্ষিক বিষয়। আর এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে হাসি-কান্না নামক অভিব্যক্তিতে। হৃদয়ে ধারণ কিংবা অন্তরে অনুভব করা ছাড়া এই অভিব্যক্তি যে কতটা দুষ্প্রাপ্য সেটা খুব বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮) রচিত 'ক্রীতদাসের হাসি' উপন্যাসে।
উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হাবশি গোলাম তাতরী। আব্বাসীয় খলিফা হারুণ অর রশিদের হাবসি ক্রীতদাস ও আর্মেনীয় দাসী মেহেরজানের প্রেমের স্বীকৃতি দেন খলিফার স্ত্রী জুবায়দা। খলিফার অজান্তেই রাজমহিষী তাদের দুজনের বিবাহ দেন। বিবি জুবায়দার অনুমতিক্রমেই প্রতি রাতে নির্ধারিত স্থানে তারা দেখা করত।
খলিফা হারুনুর রশিদ বাগদাদের অধিপতি। উজিরে আজম জাফর বার্মাকির হত্যার আদেশ কার্যকর হওয়ার পর তার মধ্যে মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়। একদিন রাতে এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে নির্মল হাসির শব্দ শুনতে পান তিনি। মুহূর্তেই তার হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে সেই হাসির শব্দ। এই হাসির উৎস খুঁজতে গিয়েই তিনি দেখতে পান গোলাম তাতারী ও তার স্ত্রী মেহেরজানের প্রণয়দৃশ্য এবং শোনেন তাতারীর প্রাণখোলা হাসি। ক্রীতদাস পল্লীতে চরম দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করলেও তাদের এই হাসি থামে না।
বাদশাহ হারুন রূপবতী দাসী মেহেরজানকে রানীর মর্যাদা দিয়ে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। তাতারীকে একটি রাজ্যের রাজত্ব দেয়া হলো। অন্য আরো সুবিধা দিয়ে বলা হলো এর বিনিময়ে খলিফা প্রাণখোলা হাসি শুনতে চান কিন্তু তাতারী আর হাসে না। তাতারীর প্রাণখোলা হাসির উৎস ছিল প্রিয় মেহেরজান। সে এখন খলিফার রানী। প্রিয়া বিরহে তাতারী প্রাণখোলা হাসি তো দূরের কথা, সামান্য হাসিও হাসতে পারে না। এতে খলিফা অপমানিত বোধ করেন। হাসি শোনানোর জন্য তাতারীকে বারংবার সময় দেয়া হয়। বাগদাদের সবচেয়ে সুন্দরী ও আবেদনময়ী নর্তকীকে তাতারীর মহলে পাঠানো হয়। কিন্তু সে তাতারীকে উপভোগ করতে ব্যর্থ হয়। বরং তাতারীর নৈতিকতার কাছে পরাজিত হয়ে সে আত্মহত্যা করে। এ আত্মহত্যাকে হত্যা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে তাতারীর ওপর এর দায় চাপানো হয়। তার বিচার হয়।
সাহিত্যে সমাজের অনিয়ম, অনাচার ফুটে ওঠে। আর এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন লেখক, কবি, সাহিত্যিকেরা। এখানেও খলিফার নির্দয়তায় আপত্তি তোলেন কবি নওয়াস। ফলে তাকে রাজদরবার থেকে বহিষ্কারও হতে হয়।
তাতারীকে হাসাতে ব্যর্থ হয়ে খলিফা তার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। তাতেও কাজ হয় না। সকল প্রকার অত্যাচার নির্যাতনে সে নীরব থাকে। অতঃপর সর্বশেষ কৌশল হিসেবে মেহেরজানকে তাতারীর কাছে নিয়ে আসা হয়।
কিন্তু মেহেরজান এখন তাতারীর প্রেমিকা নেই, এখন সে খলিফার রানী। প্রথমে মেহেরজান তাতারীকে চিনতেই পারে না। পরে চিনতে পারলেও প্রাক্তন প্রেমিককে সে কোনো কথাই বলাতে পারেনি। শত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে খলিফা হারুন দুঃখে, ক্ষোভে চরম উত্তেজিত হয়ে তাতারীকে চাবুক মারার আদেশ দেন। মেহেরজান চলে যাওয়া শুরু করলে তাতারী মুখ খোলে। মেহেরজানকে পিছু ডাক দেয় এবং খলিফাকে বলে-
শোন, হারুনর রশিদ। দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব! কিন্ত ক্রীতদাসদের হাসি না।
এ উক্তিই উপন্যাসের জীবনদর্শন। এ পর্যায়ে কবি নওয়াস প্রবেশ করে মন্তব্য করেন-
আমিরুল মোমেনিন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।
কবি নওয়াসের কণ্ঠে অসাধারণ এ উক্তিটির মাধ্যমে উপন্যাসটির সমাপ্তি ঘটে।
'ক্রীতদাসের হাসি' উপন্যাসটি আরব্য রজনী আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা-এর শেষ গল্প 'জাহাকুল আবদ'- এর অনুবাদ। ভূমিকা অংশের পরেই পান্ডুলিপি আবিষ্কারের ঘটনার খুব চমৎকার বর্ণনা দেওয়া আছে। রচনা এবং প্রকাশকাল অনুযায়ী ধারণা করা হয় এ উপন্যাসে রূপকারের আইয়ুবি স্বৈরশাসনের স্বরূপ এবং পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের অন্তর্সত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে উপন্যাসটি যেন মানব জীবনের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
জীবনবাদী কথাশিল্পী শওকত ওসমানের রূপকধর্মী এ উপন্যাসটি ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। সময় প্রকাশন - এর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ কর্তৃক প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। ৮০পৃষ্ঠা সংবলিত এ বইটির বাজারমূল্য ১০০টাকা মাত্র।
নবীনতর
আব্দুল ওদুদের "কোলাজ" বই নিয়ে দু' চারটে সামান্য কথা: ইয়াসির আরাফাত
পূর্বতন
আদেল পারভেজের লাইফব্লাড ফিকশন উপন্যাস 'অসম্পূর্ণ সত্তা' - মরিয়ম মেরিনা
আরও পড়ুন__
AN EXPATRIATE - শাহাজাদা বসুনিয়ার একটি সামাজিক উপন্যাস : নুসরাত জাহান
শেহেরজানের অসমাপ্ত গল্প, মূল: হারুকি মুরাকামি, ভাষান্তর: আসাদুল লতিফ
হোয়াইট ম্যাজিক - নিমগ্ন দুপুর
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?