খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা পান।
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা - খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার, Khadde Vejal O Tar Protikar Rochona, খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকারের উপায় / করণীয়, খাদ্
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা - খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার | Khadde Vejal O Tar Protikar Rochona
by Education Master - June 18, 2021
আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত হতে ক্লিক করুন
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকারের উপায়
Khadde Vejal O Tar Protikar Rochona
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার রচনা
সূচনা : মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল হলাে খাদ্য । সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্যকে মৌলিক উপকরণ এবং ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্যকে জীবনের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশে আজ ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে তৈরি অথবা কাঁচা কোনাে খাদ্যদ্রব্যের ওপরই মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না । মাছ , মাংস , সবজি - তরকারি , ফলমূল ও বিভিন্ন বিপণির তৈরি খাবার , এমনকি শিশুখাদ্যে পর্যন্ত ভেজাল মেশাতে কার্পণ্য করছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে টিভিতে প্রতিনিয়ত আমরা রিপাের্ট হতে দেখছি এবং কিছু কিছু বিজ্ঞাপনের চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে খাদ্যে ভেজালের আসল রূপও আমাদের সামনে প্রকটিত হচ্ছে । কিন্তু জীবনসংকট বা স্বাস্থ্যসংকটকে আমলে নিয়েও একশ্রেণির মানুষ খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে যাচ্ছে ।Also read :সম্বন্ধ পদ কাকে বলে
খাদ্যে ভেজালের কারণ : খাদ্যে ভেজালের কারণটিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যালােচনা করলে দুটি বিষয় আমাদের দৃষ্টিগােচর হয় :ক , মনস্তাত্ত্বিক কারণ ও খ . সামাজিক কারণ ।
ক . মনস্তাত্ত্বিক কারণ : মনােবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের অপরাধ করার কিছু লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তাঁর মনােবিকলন তত্ত্ব ' নামক গ্রন্থে । তাঁর মতে , মানুষের অসমর্থতা বা অকৃতকার্যতা অথবা অযাচিত লােভ তাকে অপরাধ করার ইন্ধন জোগায় । লােভের বশবর্তী হয়েই মানুষ এ অপরাধ করে । সম্পদ লাভের অদম্য ইচ্ছা বা অসম প্রতিযােগিতা মানুষকে এই ধরনের কাজ করতে প্ররােচিত করে । যেহেতু খাদ্যদ্রব্য একটি অতি প্রয়ােজনীয় ও স্পর্শকাতর বিষয় , তাই এতে ভেজাল মিশিয়ে মানুষকে খুব সহজেই প্রতারিত করা সম্ভব । আর এ সুযােগটিকে গ্রহণ করে ঐ অসাধু গােষ্ঠী দিনের পর দিন মানুষকে মৃত্যুমুখী করছে ।খ . সামাজিক কারণ : খাদ্যে ভেজালের সামাজিক কারণটি অত্যন্ত বিস্তৃত । তার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে উত্তরােত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের মধ্যেকার অসম প্রতিযােগিতা । জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সীমিত খাদ্যের ওপর যখন চাপ বাড়ে তখন ভেজাল মিশিয়ে তার পরিমাণ বৃদ্ধি বা মেয়াদ বৃদ্ধি করার প্রবণতা লক্ষ করা যায় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিত্য প্রয়ােজনীয় খাদ্যদ্রব্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে । আর অসম প্রতিযােগিতার ফলে এসব খাদ্যদ্রব্যই চড়া মূল্যে বিক্রি হয় । এ কারণে ভেজালে সয়লাব হয়ে যায় বাজার , কিন্তু মানুষ তা টেরও পায় না বা পেলেও কিছু করতে পারে না ।বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খাদ্যে ভেজাল : সমগ্র বিশ্বে খাদ্যে ভেজালের একটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে । উন্নত দেশগুলাের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলােতে এ প্রবণতা অনেক বেশি । আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারসহ অন্যান্য প্রাণঘাতী অসুখসমূহের অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজাল খাদ্য । আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের দেশগুলােতে জনসংখ্যা অপরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে খাদ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং ভেজাল মেশানাের প্রবণতাও অধিকহারে বেড়ে যাচ্ছে । কিছুদিন পূর্বেই গণমাধ্যমের একটি খবরে আমাদের সবার চোখ আটকে গিয়েছিল । চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে যে শিশুখাদ্য বাংলাদেশে আসত ( বিশেষ করে গুঁড়াে দুধ ) তাতে ‘ মেলামিন ” নামক একটি উপাদানের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে তা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ । এছাড়া কিছুদিন পূর্বেই ভারতে বিশ্বখ্যাত ‘ নেসলে ব্র্যান্ডের ম্যাগি উপস্থিতি লক্ষ করে ভারতজুড়ে ম্যাগি নুডুলস নিষিদ্ধ করা হয় । এছাড়া কোকাকোলার মতাে সমস্ত বিশ্বে সুপরিচিত কোমল পানীয়তেও স্বাস্থ্যের ভয়াবহ হুমকি হতে পারে এমন উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়।Also read :ভাবাধিকরণ কাকে বলে
বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজালের প্রকৃতি : আমাদের দেশে বিচিত্রভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশানাে হয় । ফলে বিশ্বাস করে কোনাে খাদ্য কেনাই সম্ভব হয়ে ওঠে না । আম , আনারস , কলা , পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল ক্যালসিয়াম , কার্বাইড , ইথেল ও ইথালিন দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানাে হয় । আমদানিকৃত ফল ( আপেল , আঙ্গুর , নাশপাতি ইত্যাদি ) তাজা রাখার । জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয় । দুধের মাখন তুলে বা পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ বিক্রি হয় । আবার মহিষের দুধ পানি মিশিয়ে পাতলা করে গরুর দুধ বলে বিক্রি করা হয়ে থাকে । মুড়ি সাদা ও মচমচে করার জন্য ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া । তরমুজের ভেতরে সিরিঞ্জ দিয়ে রং প্রবেশ করানাে হয় দেখতে সুন্দর লাগার জন্য । পটল , করলা , লালশাকসহ অন্যান্য সজিতে টেক্সটাইল রং ব্যবহার করা হয় সুন্দর রাখার প্রয়ােজনে । মাছে মেশানাে হচ্ছে জীবন ধ্বংসকারী ফর্মালিন , ক্যালসিয়াম কার্বাইড , ইথেফেন , প্রােফাইল প্যারা টিটেনিয়াম পাউডারসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান । মাছ হিমায়িতকরণের জন্য বরফ পানিতে ফরমালিন মেশানাে হচ্ছে । যার ফলে ফরমালিন মাছের খােলসে মিশে যাচ্ছে । জিলিপি , লাডডু ও সন্দেশে আলকাতরা দিয়ে তৈরি মেটালিক ইয়ােলাে রঙ ব্যবহার করা হয় । সাদা রঙের রসগােল্লা মিষ্টিতে সাদা রঙের টিস্যু ব্যবহার করা হয় সুন্দর গড়ন দিতে । এছাড়াও চাল , ডালসহ শুকনাে খাদ্যশস্যে বালি , কাঁকর ব্যবহার করা হয় ওজন বৃদ্ধি করার জন্য । ঘি - এর সঙ্গে পশুচর্বি মেশানাে হয় । তিল বা নারকেলের তেলের সঙ্গে বাদাম তেল বা তুলাবীজের তেল মেশানাে হয় । কাঠের গুঁড়া ও ব্যবহৃত চায়ের পাতা নতুন । চায়ের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে ভেজাল তৈরি করা হয় । বিভিন্ন খােলা বা অনেক সময় নামিদামি কোম্পানির মশলার প্যাকেটেও ভেজাল মেশানাে হয় । মিনারেল ওয়াটার নামে যে পানি আমরা খাই তাতে বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে । প্রাণরক্ষাকারী ওষুধেও এখন ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে ।ভেজাল খাদ্য গ্রহণের প্রতিক্রিয়া : ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা । খুব সহজেই মারাত্মক অসুখসহ তাদের প্রাণের সংকট দেখা দিতে পারে । আবার প্রাণরক্ষা করতে যে ওষুধ শিশুদের দেয়া হয় তাতেও ভেজাল পরিলক্ষিত হয় । খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ নানাবিধ রােগে আক্রান্ত হচ্ছে । বিশেষ করে আমাশয় , অ্যাপেনডিক্স , রক্তচাপ , হৃদরােগ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার বাড়ছে । বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী দেশে ডায়াবেটিস , আলসার , অপুষ্টি , চর্ম ও কুষ্ঠরােগে মৃত্যুহারও উর্ধ্বমুখী । বাজারে সময় সময় ভেজালবিরােধী অভিযান চলছে বলে এখন পণ্য পরিবহনের ট্রাকেই ভেজাল মেশানাে হচ্ছে । বিশেষ করে লিচু ও আমের মতাে দ্রুত পচনশীল ফলগুলােতে উচ্চমাত্রার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে পচনরােধ করার জন্য । ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়ােটিক ব্যবহার করা হচ্ছে ।সূত্র : www.educationblog24.com
রচনা খাদ্যে ভেজাল ও প্রতিকার
Welcome to the largest educational community blog in Bangladesh.
রচনা খাদ্যে ভেজাল ও প্রতিকার
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার
খাদ্যে ভেজাল বর্তমান সময়ে মারাত্মক একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বাজারে এমন কোন পণ্য নেই যে তাতে ভেজাল মিশানো হচ্ছে না। দেশের জনগণের স্বার্থে অতি দ্রুত এর প্রতিকার করা উচিত। ভূমিকা মানুষকে আল্লাহ্ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের ভালো-মন্দ মানুষের ভালোমন্দের ওপরই নির্ভর করে। শুধু নিজের কল্যাণ সাধন নয় বরং …
বাংলা রচনা
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার | রচনা | ২৫ পয়েন্ট
Rimon Follow on Twitter Send an email
August 5, 2022Last Updated: August 5, 20220 9 minutes read
খাদ্যে ভেজাল বর্তমান সময়ে মারাত্মক একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বাজারে এমন কোন পণ্য নেই যে তাতে ভেজাল মিশানো হচ্ছে না। দেশের জনগণের স্বার্থে অতি দ্রুত এর প্রতিকার করা উচিত।ভূমিকা
মানুষকে আল্লাহ্ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের ভালো-মন্দ মানুষের ভালোমন্দের ওপরই নির্ভর করে। শুধু নিজের কল্যাণ সাধন নয় বরং অপরের কল্যাণে মনােনিবেশ করাই হচ্ছে মানবতার আদর্শ এবং মনুষ্যত্বের দাবি। কেবল নিজের সুখের জন্যে অন্যের অধিকার খর্ব করা, হীন স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায় মানবতা অপমানিত ও কলংকিত হয়। অর্থের লোভ মানুষকে আজ হিংস্র করে তুলেছে। অর্থের লোভ লালসার ফল মানবজাতির জন্যে যে কত বড় ভয়াবহ হতে পারে তা খাদ্যে ভেজালের পরিণাম দেখলেই উপলব্ধি করা যায়। যে কোন পণ্য দ্রব্যে ভেজাল দেয়া একটি কলঙ্কিত বিষয়। ভেজাল একটা ঘৃণিত সামাজিক অপরাধ।
খাদ্যে ভেজাল ও তার প্রতিকার | রচনা | ২৫ পয়েন্ট
Related Articles
রচনাঃ বিজয় দিবস (SSC HSC)
December 12, 2022
বইমেলা / গ্রন্থমেলা | রচনা [পিডিএফ]
November 5, 2022
ভেজাল কী?
উৎকৃষ্ট পণ্যের সাথে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পণ্যদ্রব্য মিশিয়ে দেয়াকে ভেজাল বলে। ভেজাল অর্থাৎ গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করা ভাল দ্রব্যের সাথে খারাপ দ্রব্য মিশিয়ে ক্রেতাকে ঠকানাে। বর্তমানে নকল পণ্যে বাজার ভরে গেছে। একেতো দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি সেই সাথে যোগ হয়েছে খাদ্যে ভেজাল। বাজারে খাঁটি শব্দটাই এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। বাজারে অনেক পণ্যেই খাঁটি শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। আসলে নকল-ভেজালের দৌরাত্ম্যে খাঁটি কথাটাই কথার কথায় পরিণত হয়েছে। সকলেই জানে খাঁটি মোটেও খাঁটি নয়।
ভেজাল একটি অপরাধ
ভেজাল গর্হিত সামাজিক অপরাধ। ভেজালের ফলে খাদ্যদ্রব্য দৃষিত হতে পারে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য আহার করে অনেক সময় জীবন বিপন্ন হয়। যে কর্মকাণ্ড সমাজের অধিকাংশ মানুষের জন্যে ক্ষতিকর জনগণ যেটাকে ক্ষতিকর হিসেবে মনে করে, জনগণ যার দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে এবং যে কর্মপ্রক্রিয়া মানুষের জন্যে ক্ষতিকর সেটাই সামাজিক অপরাধ।
পণ্যদ্রব্য ও ভেজাল
বাংলাদেশের পণ্যের সাথে ভেজালের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ আমরা বিবেক-বােধের স্বাভাবিক স্তর থেকে অনেক নীচে নেমে এসেছি। তাই ভেজাল ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ যেন আর কিছুই বােঝে না! ভেজাল ছাড়া পণ্যদ্রব্য পাওয়াই আজ মুশকিল হয়ে পড়েছে। দি ইন্সস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ’-এর খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষাগারের এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, ১ ৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৬,৮৪৩টি খাদ্যদ্রব্যের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৪৩%-ই ভেজাল অর্থাৎ ১১,৩১৭টি দ্রব্যই ভেজালপূর্ণ। এসব ভেজালের কারণে বিভিন্ন অর্থকরী পণ্য আন্তর্জাতিক বাজার দারুণভাবে মার খাচ্ছে এবং দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে চরমভাবে।
খাদ্যে ভেজালের ইতিহাস
খাদ্যে ভেজাল কখন থেকে শুরু হয়েছে এর সঠিক সন ও তারিখ নির্ধারণ করে বলা সম্ভব নয়। যতদূর জানা যায়, দুই সহস্রাধিক বছর পূর্বে প্রাচীন কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ভেজালকারীদের তৎপরতার কথা উল্লেখ আছে। ব্রিটিশ শাসনামলে তাে বটেই, বিগত তিরিশ দশকেও ভেজালের তৎপরতা ছিল। সে সময় এমন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীগােষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল, যারা ভেজালকেই ব্যবসায়ের কৌশল বলে জ্ঞান করতাে। ভেজাল করতে গিয়ে তারা সরিষার তেলে শিয়ালকাটা মিশাতে থাকে। এতে দেশজুড়ে বেরিবেরি কৌশল বলে জ্ঞান করতাে। এরপর থেকে সরকারিভাবে ভেজাল প্রতিরােধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় ভেজালবিরােধী বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু নীতি-নৈতিকতাহীন কতিপয় কর্মকর্তার কারণে আজও ভেজাল প্রতিরােধ করা সম্ভব হয়নি। বরং ভেজালের পরিধি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বাজারে এমন কোনাে দ্রব্য নেই যাতে ভেজাল মিশানাে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের পরিশ্রমলব্ধ অর্থ দিয়ে মনের অজান্তে বিষ কিনছে এবং তা খেয়ে ক্রমেই জীবনীশক্তি হারাচ্ছে।
ভেজালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও চালচিত্র
বর্তমানে বাংলাদেশে ভেজালের চিত্র ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। মানুষের দৈনিক চাহিদার এমন কোন পণ্য নেই যে যা ভেজাল মুক্ত। ভয়ের কথা যে ভেজালের আওতার মধ্যে প্রতিনিয়তই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। মূলত নিত্য নতুন প্রক্রিয়া ও উপাদান বা পদার্থ ব্যবহার করে যেভাবে খাদ্যদ্রব্য ভেজাল করা হচ্ছে তা নির্ণয় করার ব্যবস্থা ও উদ্যোগ না থাকায় প্রকৃত ভেজালের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা প্রতিনিয়ত বাজার থেকে কিনে যেসব খাদ্যদ্রব্য খেয়ে থাকি এদের মধ্যে কত শতাংশ ভেজাল তা নির্দিষ্ট করে বলা বেশ মুশকিল। তবে ভয়ের কথা যে ভেজাল মিশানোর পদ্ধতি কৌশলগত ও আধুনিক যে তা অনুমান করাও মুশকিল।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এক সূত্র থেকে জানা যায়। রাজধানীতে বিক্রীত খাদ্যসামগ্রীর শতকরা ৮০ শতাংশ ভেজালযুক্ত। অন্যদিকে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ-এর সূত্র মতে, দেশের ৭০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্যই ভেজাল মিশ্রিত করে বিক্রি করা হয়। তবে ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাইশ হাজার সাতশ উনিশটি খাদ্যদ্রব্য বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করে তারা দেখেছে যে, ওই সব খাদ্যদ্রব্যের প্রায় পঞ্চাশ (৪৯.২২%) শতাংশ ভেজাল। এদিকে কনজুমার এসােসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর হিসেবেও বাজারে বিক্রয় হচ্ছে এমন খাদ্যদ্রব্যের পঞ্চাশ শতাংশ ভেজাল।
খাদ্যে ভেজালের নমুনা
বর্তমান যুগে মানুষ একদিকে যেমন উন্নত হচ্ছে অন্যদিকে বিচার বিবেকর অবনতি ঘটছে। যে খাদ্য খেয়ে মানুষ জীবন ধারণ করছে, সে খাদ্যে মিশানো হচ্ছে মরণঘাতি কেমিক্যাল। নিচে ভেজালের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলঃ
মাছ ও সব্জিতে ফরমালিন
সামান্য কিছু বাড়তি মুনাফার আশায় ইউরিয়া, ফরমালিনসহ নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে মাছকে বিপজ্জনক বিষে পরিণত করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে কেমিক্যালমুক্ত মাছ পাওয়া অনেকটাই কঠিন এর মধ্যেই ক্ষতিকর পিরহানা মাছ, রাক্ষুসে মাগুর, জীবনহানিকর পটকা মাছের দেদার বাজারজাত চলছে। শুধু মাছ নয় অবাধে কেমিক্যাল মেশানাে হচ্ছে সবুজ সবজিতেও।
বেকারির অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য
শহরের গলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মধ্যে গড়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর বেকারি কারখানা। কারখানার ভেতরে-বাইরে কাদাপানি, তরল ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নােংরা পরিবেশ। আশপাশেই নর্দমা ময়লার স্তুপ। মশা-মাছির ভনভন আর একাধিক কাঁচা-পাকা টয়লেটের অবস্থান। দম বন্ধ হওয়া গরম থাকে রাত-দিন গরমে ঘামে চুপসানাে অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা দলিত মথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লােভনীয় খাদ্যপণ্য। ভেজাল আটা, ময়দা, ডাল, তেল, পচা ডিমসহ নিন্ম মানের উপাদান দিয়ে এইসব খাদ্য প্রস্তুত করা হয়।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?