জ্যোতিষবিদ্যা বা ভাগ্য গণনা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে জ্যোতিষবিদ্যা বা ভাগ্য গণনা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা পান।
জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান
জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিজ্ঞানের সঙ্গে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সম্পর্কে জন্য, জ্যোতিষশাস্ত্র ও বিজ্ঞান দেখুন।
জ্যোতিষশাস্ত্র
নতুন সহস্রাব্দের জ্যোতির্বিদ্যা লেখচিত্র
পটভূমি
জ্যোতিষশাস্ত্রের ইতিহাস জ্যোতিষশাস্ত্র বনাম জ্যোতির্বিদ্যাজ্যোতিষশাস্ত্র বনাম বিজ্ঞানSidereal and tropicalTraditions, types, and systems
ঐতিহ্য
ব্যাবিলনীয়হেলেনিস্টিকইসলামিকপাশ্চাত্যহিন্দুচীনা
শাখা
জন্মকালElectionalHorary
দেস
প্রাচীনকালে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান অভিন্ন বলে বিবেচিত হত (লাতিন: , )। পাশ্চাত্য সপ্তদশ শতকীয় দর্শনে ("যুক্তির যুগ") বিজ্ঞানীদের দ্বারা জ্যোতিষশাস্ত্র প্রত্যাখ্যাত হলে দু’টি বিদ্যা ক্রমে পৃথক হয়ে যায়। মধ্যযুগের পরবর্তী পর্যায়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে মনে করা হত সেই ভিত্তি যার উপর দাঁড়িয়ে জ্যোতিষবিদ্যার কাজ চলতে পারে।[১]
অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে দু’টি জ্যোতিষবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান জ্ঞানের সম্পূর্ণ পৃথক দুই শাখা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা এবং এই শাখার উপজীব্য বিষয় হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে অবস্থিত বস্তু ও ঘটনাবলির পর্যালোচনা।[২][৩][৪] এটি একটি বহুপঠিত বিষয়। অন্যদিকে জ্যোতিষবিদ্যা, যার উপজীব্য বিষয় মহাজাগতিক বস্তুগুলির আপাত অবস্থানের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ ঘটনাবলির অগ্রকথন, তা ভবিষ্যৎ কথন বিদ্যার একটি শাখা ও একটি ছদ্মবিজ্ঞান। এই বিদ্যার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।[৫][৬][৭]
সাধারণ বিবরণ[সম্পাদনা]
অধিকাংশ মধ্যযুগীয় বিশেষজ্ঞের কাছে আদি বিজ্ঞান, বিশেষত জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিজ্ঞান/জ্যোতিষশাস্ত্র () ছিল ঐশ্বরিক বিষয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীর এই পুথিটিতে কম্পাসকে ঈশ্বরের সৃষ্টিকার্যের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। কারণ, অনেকে বিশ্বাস করতেন যে স্বকীয়ভাবে দিব্য বা নিখুঁত কিছু একটা রয়েছে যা বৃত্তের মধ্যে পাওয়া যায়।
প্রাক্-আধুনিক যুগে অধিকাংশ সংস্কৃতিতে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করা হত না, বরং জ্ঞানের এই দুই শাখাকে এক গণ্য করা হত। জ্যোতিষের জন্য খ্যাত প্রাচীন ব্যাবিলনিয়ায় মহাজাগতিক ঘটনার পূর্বকথনকারী হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং সেগুলির ব্যাখ্যাদাতা জ্যোতিষীর পৃথক ভূমিকা ছিল না; একই ব্যক্তি দুই কাজ করতেন। এই সংযোগের অর্থ এই নয় যে সব সময়ই জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানকে এক ও অভিন্ন জ্ঞান করা হত। প্রাচীন গ্রিসে আনাক্সিমান্দার, জেনোফেনস, আনাক্সিমেনেস ও হেরাক্লিদেস প্রমুখ প্রাক্-সক্রেটিক চিন্তাবিদগণ গ্রহ ও নক্ষত্রের প্রকৃতি ও সারবস্তুর বিষয়গুলি অনুমান করেছিলেন। ইউদোজাস (প্লেটোর সমসাময়িক) প্রমুখ জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রহীয় গতি ও চক্রগুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং একটি ভূকেন্দ্রিক বৈশ্বিক মডেল উপস্থাপনা করেছিলেন। এই মডেলটি গ্রহণ করেছিলেন অ্যারিস্টটল। এই মডেলটি অন্তত টলেমির সময়কাল অবধি স্থায়ী হয়েছিল। মঙ্গল গ্রহের পশ্চাদমুখী আবর্তনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য টলেমি এর সঙ্গে অধিচক্র যোগ করেন। (খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দ নাগাদ সামোসের অ্যারিস্টারকাস একটি প্রত্ন-সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব উপস্থাপনা করেন। কিন্তু অ্যারিস্টটলের ভূকেন্দ্রিক মডেলটির জনপ্রিয়তা বজায় থাকায় প্রায় কোপারনিকাসের আগে পর্যন্ত দুই সহস্রাব্দব্যাপী অ্যারিস্টারকাসের তত্ত্বটির পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি।) প্লেটোনিক ধারায় দর্শনের অঙ্গ হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা করা হল। কারণ, তাঁদের মতে মহাজাগতিক বস্তুগুলির গতি ছিল এক সুশৃঙ্খল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ মহাবিশ্বের পরিচায়ক। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রিসে ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষশাস্ত্র উপস্থিত হয়। আকাদেমিক সংশয়বাদী কার্নিদেস ও মধ্য স্টোইক প্যানেটিয়াস প্রমুখ হেলেনীয় দার্শনিকগণ জ্যোতিষশাস্ত্রের সমালোচনা করেছিলেন। যদিও মহাবর্ষ (যখন সকল গ্রহ একটি চক্র পূর্ণ করে এবং তাদের আপেক্ষিক অবস্থানে ফিরে আসে) এবং চিরন্তন পুনরাবর্তনের ধারণাগুলি ছিল স্টোইক মতবাদ, যা ভবিষ্যৎ কথন ও নিয়তিবাদকে সম্ভব করে তুলেছিল।
হেলেনীয় জগতে 'অ্যাস্ট্রোলজিয়া' ও 'অ্যাস্ট্রোনমিয়া' এই গ্রিক শব্দ দু’টি প্রায়শই পরস্পর বিনিময়ার্হে ব্যবহৃত হত। কিন্তু ধারণাগত দিক থেকে দু’টি একই অর্থ বহন করত না। প্লেটো 'অ্যাস্ট্রোনমিয়া' বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এবং বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলতেন যে, গ্রহীয় ঘটনাগুলিকে একটি ভূকেন্দ্রিক মডেলের মাধ্যমে বর্ণনা করা উচিত। প্রথম সমাধানটি প্রস্তাব করেন ইউডোজাস। অ্যারিস্টটল একটি ভৌত পদ্ধতি অবলম্বনের পক্ষপাতী ছিলেন এবং তিনিই 'অ্যাস্ট্রোলজিয়া' শব্দটি গ্রহণ করেন। উৎকেন্দ্রিক ও অধিচক্রকে কার্যকর কল্পনা মনে করা শুরু হয়। জনসাধারণের কাছে পার্থক্যের নীতিটি সহজবোধ্য হয়নি এবং সেই কারণে দু’টি শব্দই গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। ব্যাবিলনীয় কোষ্ঠীবিচার পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে শব্দ দু’টি নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত হত, সেগুলি হল 'আপোতেলেসমা' ও 'কাতারচে'। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে এটি অ্যারিস্টটলীয় পরিভাষায় 'অ্যাস্ট্রোলজিয়া' শব্দটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
সেভিলের ইসিডোর তাঁর সংকলন গ্রন্থ এটিমোলোগিয়া-এ স্পষ্টভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র শব্দ দু’টির পার্থক্য নির্দেশ করেছেন (এটিমোলজিয়া, তিন, ২৮)। পরবর্তীকালের আরব লেখকদের গ্রন্থেও একই পার্থক্য লক্ষিত হয়।[৮] ইসিডোর দু’টি বিষয়কেই জ্যোতিষ-সংক্রান্ত শাখায় বিজড়িত হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বিষয় দু’টিকে চিহ্নত করেন ও নামে।
মধ্যযুগীয় ইউরোপে জ্যোতিষশাস্ত্র বহুল চর্চিত হয়েছিল। এই সময় হেলেনীয় ও আরব জ্যোতিষীদের রচনা লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। পরবর্তী মধ্যযুগে এই বিদ্যার অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান নির্ভর করত ইউরোপের রাজ-দরবারগুলিতে এর অভ্যর্থনার উপর। ফ্র্যান্সিস বেকনের সময়কালেই প্রথম গবেষণামূলক অধিবিদ্যা হিসেবে জ্যোতিষশাস্ত্র প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তা শুধুমাত্র প্রায়োগিক পর্যবেক্ষণ হিসেবেই গৃহীত হয়। এরপর সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যে জ্যোতিষবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে বিভাজন ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সময় সেখানকার অভিজাত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি জ্যোতিষশাস্ত্রকে অতিপ্রাকৃত বিজ্ঞান বা কুসংস্কার হিসেবে দেখতে শুরু করেন। দুই বিদ্যার সুদীর্ঘ একক ইতিহাসের নিরিখে আজও কখনও কখনও দু’টির পার্থক্য সম্পর্কে ভ্রম সৃষ্টি হয়ে থাকে। অনেক সমসাময়িক জ্যোতিষী অবশ্য জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলে দাবি করেন না। বরং এটিকে তাঁরা আই-চিং শিল্পের মতো ভবিষ্যৎ কথনের একটি রূপ অথবা একটি আধ্যাত্মিক বিশ্বাস মনে করেন। এই ধারণাটি প্রভাবিত হয়েছে নব্য-প্লেটোনবাদ, নব্য-প্যাগানবাদ, থিওসফি ও হিন্দুধর্মের মতো মতবাদগুলির দ্বারা।
৩.২ জ্যোতিষ বিদ্যা ও ভাগ্যগণনা
৩.২ জ্যোতিষ বিদ্যা ও ভাগ্যগণনা | বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা | ইসলামহাউজ.কম
৩.২ জ্যোতিষ বিদ্যা ও ভাগ্যগণনা
শেয়ার ও অন্যান্য
আমাদের দেশে মানুষ ভবিষ্যত ভালো মন্দ জানার জন্য ভাগ্য গণনা করতে জোতিষবিদ ও গণকের কাছে গমন করে। অথচ অদৃশ্য বস্তু ও ভবিষ্যত বিষয় জানা একমাত্র আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলার জন্যই নির্ধারিত, আল্লাহ বলেন:
قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ [النمل: ٦٥] আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও যমীনের কেউ অদৃশ্যের সংবাদ জানেন না।[1]
অন্য কেউ এ বিষয়ে জানার দাবী করা, বা জানার চেষ্টা করা, মুলত: আল্লাহর সংরক্ষিত অধিকারকে খর্ব করার শামিল, যা মুলত: শির্কেরই অংশবিশেষ। আমাদের দেশে জ্যোতিষ বিদ্যা, রাশি নির্ণয়, ভাগ্য গণনা, পাখীর মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষার নামে যে সকল কাজ কর্মের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয়, তা ভবিষ্যত জানারই অপচেষ্টা মাত্র। এটি মুলত: শির্ক। বড় বড় সাইন বোর্ড টাঙিয়ে ভাগ্য গণনা ও রাশি নির্ণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। পত্রিকায় ঘটা করে রাশি নির্ধারণপূর্বক ভবিষ্যতবাণী করা হয়। কোথাও ভাগ্য নির্ধারণের জন্য যন্ত্রও বসানো হয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটে পাখি দিয়েও ভাগ্য নির্ধারণের মিথ্যা অপচেষ্টা চলে। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী অত্যন্ত পরিস্কার, তিনি বলেন:
«من أتى عرافا فسأله عن شيء، لم يُقبل له صلاة أربعبن ليلة»
যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে আসে এবং তাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে, ৪০ দিন পর্যন্ত তার কোনো সালাত কবুল হয় না।[2]
عن ابى هريرة رضى الله عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من اتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم
যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর কাছে আসলো এবং সে যা বলল তা সত্য মনে করলো, সে মূলত: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা অবিশ্বাস করলো।’’[3]
এর অর্থ হচ্ছে সে কাফির। আর তা এ জন্য যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিল হয়েছে যে, গায়ব কেবলমাত্র আল্লাহ ই জানেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে:
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ٥٠ ﴾ [الانعام: ٥٠]
বল, আমি বলছি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে, আমি গায়েবও জানি না। আমি তোমাদের এ কথাও বলছি না যে , আমি একজন ফেরেশতা। আমি অনুসরণ করি শুধু তাই যা আমার কাছে ওহী হয়ে আসে।[4]নির্দিষ্ট তারকা নির্ধারিত স্থানে উদিত হলে তার প্রভাবে এই এই কল্যাণ বা অকল্যাণ হতে পারে, নির্ধারিত মৌসুমের প্রভাবে বৃষ্টি বা ঝড় হতে পারে[5] প্রভৃতি যে সব কথা বার্তা আমাদের সমাজে অহরহ প্রচলিত রয়েছে তা পূর্বোল্লেখিত শির্কেরই অংশ বিশেষ।
>
[1] . সূরা নামল: ৬৫।
[2] . আল-ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আন-নিসাপূরী, সহীহ মুসলিম, আল-মাকতাবুল ইসলামিয়াহ, ইসতাম্বুল, তা.বি, ৪ খ, পৃ. ১৭৫১।
[3] . আবু দাউদ, সোলাইমান ইবন আশ’আছ, সুনান আবী দাউদ, দারুল জীল, বৈরুত ১৯৯২, ৪খ, পৃ. ১৪।
[4] সূরা আল আনআম:৫০।
[5] . প্র প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে:
জ্যোতিষশাস্ত্র বনাম জ্যোতির্বিজ্ঞান
নতুন বছরের শুরুতে অনেকেই হয়তো নিজের রাশিফলের দিকে একবার আলতো করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। ভাবছেন, বছরটা কেমন কাটবে? বছরের রাশিফল দেখতে গিয়ে হয়তো চোখ আটকাচ্ছে সেসব জিনিসেই, যেগুলো আপনার জন্য এ বছরে গুরুত্ববহ। যেমন ধরুন, আপনি যদি এ বছর পড়াশোনা শেষ করেন, তবে খুঁজছেন চাকরিপ্রাপ্তির সম্ভাব্যতা। যদি বড় কোনো পরীক্ষা থাকে, তবে সেটার ভবিষ্যদ্বাণীতে ঝুঁকছেন। যা-ই দেখুন না কেন, এসব কি সত্যিই কাজ করে?আকাশকে...
পদার্থবিজ্ঞান
জ্যোতিষশাস্ত্র বনাম জ্যোতির্বিজ্ঞান
ওমর ফারুক
আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০, ০৯: ১১
নতুন বছরের শুরুতে অনেকেই হয়তো নিজের রাশিফলের দিকে একবার আলতো করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। ভাবছেন, বছরটা কেমন কাটবে? বছরের রাশিফল দেখতে গিয়ে হয়তো চোখ আটকাচ্ছে সেসব জিনিসেই, যেগুলো আপনার জন্য এ বছরে গুরুত্ববহ। যেমন ধরুন, আপনি যদি এ বছর পড়াশোনা শেষ করেন, তবে খুঁজছেন চাকরিপ্রাপ্তির সম্ভাব্যতা। যদি বড় কোনো পরীক্ষা থাকে, তবে সেটার ভবিষ্যদ্বাণীতে ঝুঁকছেন। যা-ই দেখুন না কেন, এসব কি সত্যিই কাজ করে?
আকাশকে আমরা দেখি একটা থালার মতো। যেন থালার মাঝে হাজার হাজার তারা এঁকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসল আকাশ দ্বিমাত্রিক নয়, ত্রিমাত্রিক। কোনো তারা অনেক দূরে, কোনোটা অল্প দূরে। এই অল্পটাও কিন্তু শত কিংবা হাজার আলোকবর্ষ। আকাশের এই থালাকে ভাগ করা হয়েছে ৮৮টা অঞ্চলে। এগুলোকে বলা হয় মণ্ডল।
আগে মণ্ডল ধরা হতো কয়েকটি উজ্জ্বল তারাকে ধরে একটা আকৃতি কল্পনা করে। এ ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিক, চীনা, আরবি, ভারতীয় জ্যোতির্বিদেরা প্রায় একই রকম চিত্রের কল্পনা করছেন, কিন্তু একেকটি মণ্ডলের সীমারেখায় খানিকটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। তাই ১৯২৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির উদ্যোগে মণ্ডলের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়।
পাশ্চাত্য জ্যোতিষশাস্ত্রে জন্মরাশি
পৃথিবী ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে, এটা সবারই জানা। কিন্তু সেটা আমরা দেখতে পাই না। দেখে আমাদের মনে হয়, সূর্যই বুঝি ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে। তাই এ উপবৃত্তকে অনেক সময় বলা হয় সূর্যপথ। পৃথিবীর সূর্যকে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে এক বছর। সূর্য বছরের একেক সময় একেক মণ্ডলে থাকে। বছরজুড়ে একবার পৃথিবী সূর্য ঘুরে আসতে আসতে মোট ১২টি মণ্ডলে থাকে। ৮৮টি মণ্ডলের মধ্যে রাশি হিসাবে ধরা হয় ১২টিকে। সেগুলো হলো মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন।
ভরদুপুরে যদি আপনি সূর্যের দিকে তাকান, তবে সূর্যের ওপারে আপনি কোনো তারা দেখতে পাবেন না। তার মানে এই নয়, ওপারে কোনো তারা নেই। আছে, সেগুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। সূর্যের পেছনে যদি তারাগুলোকে দেখা যেত, তাহলে নিশ্চয়ই সূর্যকে একটি মণ্ডলীতে দেখা যেত। সেটি কোন মণ্ডলী? উত্তর হলো বারোটি রাশির যেকোনো একটি। কারণ, পৃথিবী ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে।
নভেম্বর মাসের কথাই ধরুন। সূর্য নামের তারার যে পাশে পৃথিবী অবস্থান করে, সেদিকটায় অবস্থান বৃষমণ্ডলীর। এখন পৃথিবী থেকে আপনি যদি সূর্যের দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাওয়ার কথা তুলামণ্ডলীকে। তাই সূর্য তুলামণ্ডলীতে আছে বলে আপনার মনে হতো। এখন একজনের জন্মের সময় সূর্য যে রাশিটিতে থাকবে, তার রাশি হবে সেটিই।
ধরুন, কারও জন্মের সময় সূর্য ছিল সিংহমণ্ডলীতে, সে হবে সিংহ রাশির জাতক। সে হিসাবে জ্যোতিষীরা তার ভাগ্য গণনা করবেন, তার স্বভাবও নির্ণয় হবে সে অনুযায়ীই। সূর্য এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে যেতে সময় নেয় প্রায় এক মাস। তাই এই এক মাসের মধ্যে জন্ম নেওয়া সবাইকেই ধরা হয়ে থাকে এক রাশি।
রাশির সঙ্গে আছে জন্মলগ্ন
জ্যোতিষশাস্ত্রের একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, শুধু জন্মরাশি থেকেই একটা মানুষের গুণাগুণ নির্ণয় করা হয় না। জন্মলগ্নের হিসাবটাও করা হয়ে থাকে। জন্মলগ্নও ওই ১২ রাশির নামেই হয়। তবে হিসাবটা একটু ভিন্ন।
সে হিসাব বোঝার আগে একটা জিনিস জানা দরকার, সূর্যের মতো অন্য সব তারাও কিন্তু পূর্ব দিকে উদয় হয়। অস্ত যায় পশ্চিম দিকে। এখন কারও জন্মের মুহূর্তে পূর্ব আকাশে যে রাশি উদয় হচ্ছে, সে রাশিই হবে তার জন্মলগ্ন। কারও যদি জন্ম হয় সূর্যোদয়ের সময়, তবে হিসাবটা সোজা। সূর্য তখন যে মণ্ডলীতে আছে, সেটি তার রাশি। আর সূর্যের সঙ্গে যেহেতু সে মণ্ডলটাও উদয় হচ্ছে, তাই তার জন্মলগ্নও হবে একই। যদি সূর্য একটুখানি মাথার ওপর উঠে যাওয়ার পর কারও জন্ম হয়? তবে তখন নিশ্চয়ই অন্য একটি মণ্ডল পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছে। তখন সেটিই হিসাব করা হবে তার জন্মলগ্ন হিসেবে। আর রাতের বেলা কারও জন্ম হলে সেটা হিসাব করা আরও অনেক সোজা। জন্মের মুহূর্তে পূর্ব দিগন্তে যে রাশিটিকে উদয় হতে দেখা যায়, সেটিই তার জন্মলগ্ন।
মোট রাশির সংখ্যা ১২টি। প্রতিটি রাশি যেহেতু ক্ষেত্রফলে বেশ বড়, অনেক তারা নিয়ে গঠিত, তাই একটা রাশি উদয় হতে মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক সময় নেয়। এই দুই ঘণ্টার মধ্যে যারা জন্ম নেয় জ্যোতিষশাস্ত্রে সবার জন্মলগ্ন ধরা হয় একই।
চাঁদের হিসাবে রাশি
ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে রাশির হিসাব করা হয় চাঁদের হিসাবে। চাঁদের হিসাবে রাশি বের করার উপায়টাও সূর্য দিয়ে হিসাব করার মতোই। কারও জন্মের মুহূর্তে চাঁদ যে রাশিতে অবস্থান করে, তাকে সেই রাশির জাতক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। চাঁদ এক রাশি থেকে আরেক রাশিতে যেতে সময় নেয় আড়াই দিন। তাই পাশ্চাত্য হিসেবে যেখানে এক মাসের ব্যবধানে জন্ম নেওয়া সবাই এক রাশির হয়, এই হিসাবে প্রতি আড়াই দিনে জন্ম নেওয়া সবাই এক রাশির হবে। এখন চাঁদ কোন রাশিতে আছে চাঁদ আকাশে থাকলে সহজেই দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু বছরজুড়ে একই সময় তো একই জায়গায় থাকে না। চাঁদ কখন কোথায় আছে, সেটা অবশ্য পঞ্জিকায় লেখা থাকে। পঞ্জিকা দেখে বের করা যায় কোন মুহূর্তে চাঁদের রাশি। আর এখন নানা সফটওয়্যার দিয়েও বের করা যায় চাঁদের অবস্থান।
জ্যোতিষশাস্ত্র আর জ্যোতির্বিদ্যা
ভাগ্যরাশি হিসাব করা হয় চাঁদ, সূর্য ও তারাদের দিয়ে। আসলে একসময় চাঁদ-তারাও যে পৃথিবীর মতো বস্তু দিয়ে তৈরি, মানুষ তা ভাবতে পারেনি। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান আসার আগে এদের নিয়ে গল্পগাথা বানানোটা তাই স্বাভাবিক ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় প্রথম তারাদের অবস্থান ও গতির সঙ্গে ভাগ্যকে যুক্ত করে জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা শুরু হয়। প্রাচীনকালে দুটোই একসঙ্গে চর্চা হতো। সত্যি বলতে আধুনিক বিজ্ঞানের আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানের যতটা গবেষণা হয়েছে, তার প্রায় পুরোটাই ভাগ্য জানার উদ্দেশ্যে। মানুষের পথ চলতে তারার কিছুটা প্রয়োজন হতো বটে। সেটার গুরুত্ব বেশি ছিল না। জোহানেস কেপলারসহ আগের অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই ছিলেন একই সঙ্গে জ্যোতিষী। কারণ একটাই, জ্যোতিষশাস্ত্রকে ঘিরেই বেড়ে উঠেছে জ্যোতির্বিজ্ঞান। জ্যোতিষীরা যেহেতু ভাগ্য বলতে পারেন, তাই তাঁদের দাম ছিল সমাজে। চর্চা হতো সে কারণেও।
বিজ্ঞানে প্রমাণিত, একজন মানুষের স্বভাব হবে তার জেনেটিক গুণাবলি আর বেড়ে ওঠা পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে। সেখানে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের কোনো বাহাদুরি নেই। যদি তা-ই হতো তাহলে পৃথিবীর তাবত মানুষের ভাগ্য ও চরিত্র মাত্র ১২টা ভাগে ফেলা যায়। মানুষের মধ্যে এত বৈচিত্র্য কেন?
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?