নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু আলোচনা কর
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু আলোচনা কর পান।
আবেগবাদ
আবেগবাদ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ নামে যে মতবাদটি দার্শনিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার অনুকূলে অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, নীতিদর্শনের ক্ষেত্রে নৈতিক পদের যৌক্তিক বিশ্লেষণের পক্ষে অনুরূপ সাড়া জাগিয়েছিল আবেগবাদ (Emotivism) নামের নৈতিক মতবাদটি। আবেগবাদকে তাই যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের নৈতিক রূপান্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। আবেগবাদী নৈতিক মতবাদের সূচনা করেন হাছিসন(Hutcheson) ও ডেভিড হিউম। কিন্তু আবেগবাদের মূল প্রবক্তা হচ্ছেন যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী মরিজ শ্লিক(Moritz Schlick), রুডলফ কারণাপ(Rudolf Carnap), এ.জে. এয়ার(A.J. Ayer) এবং আমেরিকান নীতি-দার্শনিক সি.এল. স্টিভেনসন(C.L. Stevenson) ও পল এডওয়ার্ডস(Paul Edwards)। তবে, ১৯২৩ সালে প্রকাশিত আই.এ. রিচার্ডস(I.A. Richards) ও সি.কে. ওডেন(C.K. Ogden)-এর The Meaning of Meaning গ্রন্থে আবেগবাদের সর্বপ্রথম পরিচয় ঘটে। আবেগবাদ নামক নৈতিক মতবাদে অনেকেই অবধান রাখলেও এয়ার, স্টিভেনসন এবং পল এডওয়ার্ডস বিখ্যাত।
আবেগবাদী মতবাদ অনুসারে নৈতিক অবধারণ হচ্ছে বক্তার আবেগ, অনুভূতি, ক্ষোভ ও উষ্মা(excitement) ইত্যাদির প্রকাশ মাত্র। নৈতিক বচনের মূখ্য উদ্দেশ্য বক্তার আবেগ, অনুভূতি ও মনোভাবকে প্রকাশ করা। আমরা যখন কোন কিছুকে নৈতিক গুণসম্পন্ন বলে অভিহিত করি তখন তার মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের অনুভূতিকেই প্রকাশ করি। নৈতিক অবধারণ বস্তু বা ঘটনার বর্ণনার উপর নির্ভরশীল নয়; বরং ব্যক্তি বা বক্তার আবেগ-অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। আর যেহেতু নৈতিক অবধারণ অনুভূতির প্রকাশ মাত্র, সেহেতু এ ধরনের অবধারণে সত্য বা মিথ্যা বলতে কোন কিছুর প্রমাণ করা যায় না। অতএব, আবেগবাদীদের মতে, বিষয়গত বা সার্বজনীন নৈতিক আদর্শ বলতে কিছুই নেই। আবেগবাদ সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, “Emotivism is a meta-ethical view that claims that ethical sentences do not express propositions but emotional attitudes.”১ যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী এয়ারের মতে, “নৈতিক মূল্যবোধ বা মান আমাদের মানসিক উচ্ছাসের বহিঃপ্রকাশ।“২ নৈতিক বাক্য বা উক্তি, তার কাছে ছদ্ম-ধারণা (Pseudo-concepts) মাত্র এবং তাই অর্থহীন। স্টিভেনসনের মতে, “নৈতিকতা ব্যক্তির মানসিক মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। একই বস্তু এক ব্যক্তির কাছে ভাল এবং অন্য ব্যক্তির কাছে মন্দ হতে পারে এবং তা নির্ভর করছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।“৩ অতএব, আবেগবাদীদের মতে, নৈতিক বিষয়ে কোন বিষয়গত ও সার্বজনীন ধারণা ও বাক্যসমূহের যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং নৈতিক বাক্যের সাথে নৈতিক সিদ্ধান্তের যৌক্তিক সম্পর্ক নিরূপণই নীতি দর্শনের মূল কাজ।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
আড়াল করুন দেস নীতিশাস্ত্র আদর্শগত নীতিশাস্ত্র
পরিণামবাদমানমুক্ত নীতিশাস্ত্র কান্টীয় নীতিশাস্ত্রআবেগবাদসেবার নীতিশাস্ত্রঅস্তিত্ববাদী নীতিশাস্ত্রপরানীতিশাস্ত্রনৈতিক বিশেষত্ববাস্তবমুখী নীতিশাস্ত্রভূমিকা নীতিশাস্ত্রপুণ্য নীতিশাস্ত্র সর্বোচ্চ কল্যাণ
ফলিত নীতিশাস্ত্র
জীবনীতিশাস্ত্রসিদ্ধান্ত নীতিশাস্ত্রব্যবসায় নীতিশাস্ত্রঅধিবাচন নীতিশাস্ত্রপ্রকৌশল নীতিশাস্ত্রপরিবেশ নীতিশাস্ত্রআইনী নীতিশাস্ত্রগণমাধ্যম নীতিশাস্ত্রচিকিৎসা নীতিশাস্ত্রশুশ্রুষা নীতিশাস্ত্রপেশাদারী নীতিশাস্ত্রযৌন নীতিশাস্ত্রমাংস ভক্ষণের নীতিশাস্ত্রপ্রযুক্তির নীতিশাস্ত্র
পরানীতিশাস্ত্র
সংজ্ঞানবাদ নৈতিক বাস্তববাদ নৈতিক প্রাকৃতিকবাদনৈতিক অ-প্রাকৃতিকবাদনৈতিক ব্যক্তিনিষ্ঠবাদ আদর্শ পর্যবেক্ষক তত্ত্বঐশ্বরিক আদেশ তত্তাত্রুটি তত্ত্বঅ-সংজ্ঞানবাদ আবেগবাদঅভিব্যক্তিবাদপ্রায়-বাস্তববাদবিশ্বজনীন বিধানবাদনৈতিক বিশ্বজনীনবাদ মূল্যবোধ একত্ববাদ – মূল্যবোধ বহুত্ববাদনৈতিক নির্মাণবাদনৈতিক আপেক্ষিকবাদনৈতিক নাস্তিবাদনৈতিক যুক্তিবাদনৈতিক স্বজ্ঞাবাদনৈতিক সংশয়বাদ
ধারণা (সূচী)
স্বায়ত্তশাসনতত্ত্ববিজ্ঞানবিশ্বাসবিবেকসম্মতিসাম্যযত্নস্বাধীন ইচ্ছাভালো ও মন্দ ভালোমন্দসুখআদর্শব্যভিচারবিচারস্বাধীনতানৈতিকতাNormস্বাধীনতানীতিকষ্ট বা বেদনান্যস্ত ভারসহানুভূতিবিশ্বাসমূল্যপুণ্যবিশ্ব দৃশ্যভুলসম্পূর্ণ সূচী...
নীতিশাস্ত্রীয় দার্শনিক
লাওৎসিসক্রেটিসপ্লেটোঅ্যারিস্টটলদিওগেনেসতিরুবল্লুবরকিকেরোকনফুসিয়াসআউরেলিয়ুস আউগুস্তিনুসমেনকিউসমোৎসিশুনৎসিটমাস আকুইনাসবারুখ স্পিনোজাডেভিড হিউমইমানুয়েল কান্টফ্রিডরিখ হেগেলআর্থার শোপেনহাওয়ারজেরেমি বেন্থামজন স্টুয়ার্ট মিলসোরেন কিয়ের্কেগার্ডহেনরি সিজউইকফ্রিডরিখ নিচেজি. ই. মুরকার্ল বার্থপল টিলিচডিট্রিখ বোনহ্যোফারফিলিপা ফুটজন রল্সজন ডুয়িবার্নার্ড উইলিয়ামসজে. এল. ম্যাকিজি. ই. এম. আনস্কোম্বউইলিয়াম ফ্রাঙ্কেনাঅ্যালাসডেয়ার ম্যাকিন্টায়ারআর. এম. হেয়ারপিটার সিঙ্গারডেরেক পারফিটটমাস নেগেলরবার্ট মেরিহিউ অ্যাডামসচার্লস টেলরহোশে আসুরমেন্দিক্রিস্টিন কর্সগার্ডমার্থা নুসবাউমআরও...
সম্পর্কিত নিবন্ধ
কূটতর্কখ্রিস্টান নীতিশাস্ত্রবর্ণনামূলক নীতিশাস্ত্রধর্মে নীতিশাস্ত্রবিবর্তনীয় নীতিশাস্ত্রনারীবাদী নীতিশাস্ত্রনীতিশাস্ত্রের ইতিহাসভাবাদর্শইসলামী নীতিশাস্ত্রইহুদী নীতিশাস্ত্রনৈতিক মনোবিজ্ঞানআইনের দর্শনরাজনৈতিক দর্শনজনসংখ্যা নীতিশাস্ত্রসামাজিক দর্শনদুঃখবেদনা-কেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্র
বিষয়শ্রেণী
বিষয়শ্রেণীসমূহ: নৈতিকতার তত্ত্ববিশ্লেষণী দর্শনঅধি-নীতিবিদ্যা
নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর
উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়া, ব্যক্তি, চরিত্রের সংরক্ষণ ইত্যাদি হচ্ছে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু। যা ইচ্ছাকৃত নয়, তার কোনাে নৈতিক মূল্য নেই। স্বেচ্ছায় অভ্যা
নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর
আগস্ট ১৭, ২০২২
প্রশ্নঃ নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নৈতিক অবধারণের সঠিক বিষয়বস্তু নিরূপণ কর।অথবা, নৈতিক অবধারণের প্রকৃত বিষয়বস্তু আলােচনা কর।অথবা নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু তুলে ধর।উত্তরঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়া, ব্যক্তি, চরিত্রের সংরক্ষণ ইত্যাদি হচ্ছে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু। যা ইচ্ছাকৃত নয়, তার কোনাে নৈতিক মূল্য নেই। স্বেচ্ছায় অভ্যাসলব্ধ ক্রিয়াও নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু, কেননা ঐচ্ছিক ক্রিয়া পুনঃপুন সংঘটিত হলেই তা অভ্যাসলব্ধ ক্রিয়ায় পরিণত হয়। মানব আচরণের ভালােত্ব-মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব, অন্যায়ত্ব, ঔচিত্য, অনৌচিত্য ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয় নৈতিক অবধারণের মাধ্যমে।নৈতক অবধারণের বিষয়বস্তু (Object of Moral Judgement): নিম্নে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-সুখবাদী মতঃ সুখবাদীরা মনে করেন, নৈতিক অবধারণ গঠিত হয় কাজের ফলাফলের উপর। কাজের উদ্দেশ্যের উপর নয়। তাই এ মত অনুযায়ী বলা যায়, কাজের ফলাফল যদি ভালাে হয়, তাহলে কাজটি ভালাে এবং কাজের ফলাফল, যাদ মন্দ হয়, তাহলে কাজটি মন্দ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন সুদক্ষ চিকিৎসক একজন রােগীকে রােগমুক্ত করার জন্য তার দেহে খুব সতর্কতার সাথে অস্ত্রোপচার করলেন। এতদসত্ত্বেও রােগীটি মারা গেল। এখানে উদ্দেশ্য ভালাে ছিল। কিন্তু ফল মন্দ হলে এখানে চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যায় না। কেননা তার উদ্দেশ্য ভালাে। কিন্তু ফল মন্দ হলাে। এখানে চিকিৎসকের কাজটিকে মন্দ বলা যায় না। কেননা তার উদ্দেশ্য ভালাে ছিল যদিও ফল মন্দ হয়েছিল। আবারও কখনও কখনও দেখা যায় যে, নৈতিক কর্তা ভার করতে চান নাই অর্থাৎ উদ্দেশ্য ভালাে ছিল না। কিন্তু কাজটির ফল ভালাে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. জনসনের বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন কোনাে কাজের নৈতিকতা নির্ভর করে উদ্দেশ্যের উপর, যে উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা কাজটি সম্পন্ন করে থাকি। বিরক্তি এড়াতে গিয়ে যদি আমি একজন ভিক্ষুককে মাথা ফাটানাের উদ্দেশ্যে তার দিকে একটা অর্ধ ক্রাউন ছুড়ে ফেলি এবং যদি ভিক্ষুকটি সেটি কুড়ে নিয়ে খাবার কিনে খেয়ে তার ক্ষুধা মেটায় তাহলে বাহ্যিক ফল ভালাে হওয়া সত্ত্বেও এখানে আমার কাজটি খুবই মন্দ। এখানে নিঃসন্দেহে কাজটি মন্দ। কেননা আমার উদ্দেশ্য মন্দ ছিল। যদিও ফলটি ভালাে ছিল। এটা দেখা যায় যে, কাজের ফলাফল দেখে সব সময় কাজের ভালােত্ব বা মন্দত্ব নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তাই অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যে ও বাহ্যিক ফলাফলের মধ্যে যখন অসঙ্গতি দেখা দেয়, তখন বাহ্যিক ফলাফলের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতেই কাজটির নৈতিক মূল্য নিরূপণ করা হয়।
বুদ্ধিবাদী মতঃ বুদ্ধিবাদীদের মতে, কাজের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে কাজের ভালােত্ব ও মন্দত্ব নিরূপণ করা হয়। কাজটির ফলাফলের উপর নির্ভর করে নয়। অর্থাৎ কোনাে কাজের উদ্দেশ্য যদি ভালাে হয়, তাহলে কাজটি ভালাে এবং উদ্দেশ্য যদি মন্দ হয়, তাহলে কাজটি মন্দ। কান্টের মতে সদিচ্ছা ব্যতীত এই জগতে বা এই জগতের বাইরে এমন কিছু নেই যাকে ভালাে বলা যায়। তাই উদ্দেশ্যের দ্বারাই কাজের ভালােত্ব-মন্দত্ব নিরূপণ করা হয়।
কেবল উদ্দেশ্য নয়, অভিপ্রায়ঃ বুদ্ধিবাদীরা মনে করেন যে, নৈতিক অবধারণ কেবল উদ্দেশ্যের উপর গঠিত হয়। কিন্তু বুদ্ধিবাদীদের এই মতবাদ সন্তোষজনক নয়। কেননা নিছক উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে নৈতিক-অবধারণ গঠন করলে তা ন্যায়সঙ্গত হয় না। উদ্দেশ্য ভালাে হলেও অনেক সময় উদ্দেশ্য সাধনের উপায় মন্দ হতে পারে এবং ফলে কাজটি মন্দ হতে পারে। ইংরেজ দস্যু রবিনহুডের উদ্দেশ্য ছিল ধনসম্পদ লণ্ঠন করে তা গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা এবং গরীবদের কষ্ট লাঘব করা। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য যে ভালাে ছিল, সে সন্দেহ পােষণ করার অবকাশ নেই। কিন্তু তার উদ্দেশ্য সাধনের উপায় মন্দ ছিল বলে তার কাজকে ন্যায়সঙ্গত বলা যায় না। আর এ থেকে এটা নিঃসৃত হয়ে যে নিছক উদ্দেশ্য নয় বরং অভিপ্রায় নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু। উল্লেখ্য যে, উদ্দেশ্য বলতে আমরা এক্ষেত্রে নির্বাচিত বস্তুর ধারণা এবং অভিপ্রায় বলতে নির্বাচিত বা কাম্যবস্তুর ধারণা ও উদ্দেশ্য সাধনের উপায়কে বুঝে থাকি। এখানে অভিপ্রায় উদ্দেশ্য থেকে ব্যাপকতর অর্থ বহন করে। অর্থাৎ অভিপ্রায় বলতে আমরা উদ্দেশ্য সাধনের উপায় ও কাজটির ঈপ্সিত বলতে বুঝে থাকি। এদিক থেকে উদ্দেশ্য অভিপ্রায়ের একটা অংশ বা দিক মাত্র। যারা বলেন যে, উদ্দেশ্য ভালাে হলেই কাজ ভালাে হবে, বা লক্ষ্যই উপায়কে সমর্থন করে বা যার শেষ ভালাে তার সব ভালাে, তাদের মতকে সমর্থন করা যায় না। তাই কেবল উদ্দেশ্য নয়, বরং অভিপ্রায় নৈতিক অবধারণের সঠিক বিষয়বস্তু।
কেবল চরিত্র নয়, অভিপ্রায়ঃ আবার অভিপ্রায়কে মানুষের চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে চরিত্রকে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু বলে মনে করা হয়। ম্যাকেনজীর মতে, নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে, প্রত্যক্ষভাবে হােক বা পরােক্ষভাবে হােক, নৈতিকতার চরিত্রকেই নৈতিক অবধারণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার মতে যে কাজটি করা হয়েছে। কেবল তার উপরে নয় বরং যে কাজটি করছে তাকেই সর্বদা নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু বলে মনে করা হয়। চরিত্র অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ বলে চরিত্রকে নৈতিক অবধারণের বিষয়বস্তু মনে করা হলে অসুবিধাও সৃষ্টি হয়। কেননা অনেক সৎ চরিত্রের লােকের অভিপ্রায় মন্দ হতে পারে। বা অসৎ, চরিত্রের লােকের অভিপ্রায় ভালাে হতে পারে এবং ফলে সৎ -চরিত্রের লােকও মন্দ কাজ এবং অসৎ তাদের চরিত্র ও অভিপ্রায়ের মধ্যে অসঙ্গতি থাকতে পারে। আর এদিক থেকে অভিপ্রায়কে নৈতিক অবধারণের সঠিক বিষয়বস্তু বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ঐচ্ছিক ক্রিয়া ও স্বেচ্ছালব্ধ কাজের নৈতিক মূল্যায়নকেই নৈতিক অবধারণ বলা হয়। কাজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সাধনের উপায়, কাজের ফলাফলের ভিত্তিতে নৈতিক অবধারণ মূল্যায়ন করা হয়।Tags: দর্শন নবীনতর সুখবাদ কী? পূর্বতন
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক আলােচনা কর
সূত্র : www.banglalecturesheet.xyz
নীতিবিদ্যার পরিধি আলোচনা কর
যে নৈতিক নিয়মগুলো পালন করলে মানুষ তার জীবনের পরম কল্যাণকে লাভ করতে পারে সে নিয়মগুলো নির্ধারণ করার চেষ্টা করে নীতিবিদ্যা।
নীতিবিদ্যার পরিধি আলোচনা কর | নীতিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় কি
School Of Beginners আগস্ট ২৪, ২০২২
নীতিবিদ্যা মানবজীবনের পরম কল্যাণ লাভে সহায়ক নৈতিক নিয়মগুলো নির্ধারণ করে। যে নৈতিক নিয়মগুলো পালন করলে মানুষ তার জীবনের পরম কল্যাণকে লাভ করতে পারে সে নিয়মগুলো নির্ধারণ করার চেষ্টা করে নীতিবিদ্যা। নৈতিক ধারণার ব্যাখ্যা ও ভাষাগত বিশ্লেষণসহ নৈতিক পদের সাথে নৈতিক বচন বা সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিরূপণ করাই এর কাজ।
নীতিবিদ্যার পরিধি ও বিষয়বস্তু
নিম্নে নীতিবিদ্যার পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো। নিচের ১০ টি বিষয়বস্তু-ই নীতিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়।১. নৈতিক মূল্য ও আদর্শ
মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য ও আদর্শ নির্ধারণ করা নীতিবিদ্যার কাজ। নীতিবিদ্যায় মানুষের আচরণ বলতে মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে বুঝানো হয়। নীতিবিদ্যা শুধু মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া বিচার করে। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্বরূপ, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার সাথে অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার পার্থক্য, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার ধাপ, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার উৎস, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় প্রভৃতি নীতিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত।
২. নৈতিক নিয়ন্ত্রণ
নৈতিক নিয়ন্ত্রণ কী? নৈতিক নিয়ন্ত্রণের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়?-এসব বিষয় নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয় । নৈতিক ক্রিয়া, অনৈতিক ক্রিয়া, ইচ্ছা, অভিক্ষা, আচরণ, চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয়।
৩. নৈতিক বাধ্যতাবোধ
ঔচিত্য ও অনৌচিত্যবোধের সাথে নৈতিক বাধ্যতাবোধ বিশেষভাবে জড়িত। কান্ট (Kant) বলেন, “যে ঔচিত্যবোধের সাথে বাধ্যতাবোধ জড়িত নয়, সেই ঔচিত্যবোধের কোনো অর্থ নেই।” নৈতিক বাধ্যতাবোধের স্বরূপ কী? উৎস কোথায়?-এসব প্রশ্ন নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয়।
৪. নৈতিক বিচার
নীতিবিদ্যা নৈতিক বিচারের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। নৈতিক বিচারের কর্তা কে? নৈতিক বিচারের যথার্থ বিষয়বস্তু কী? নৈতিক বিচারের স্বরূপ কী? এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে নীতিবিদ্যা।
৫. নৈতিক বিচারের মানদণ্ড
নৈতিক বিচারের মানদণ্ড নির্ধারণ করা নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক বিচারের সময় এ মানদণ্ডকে সামনে রাখতে হয়। এ মানদণ্ড অনুযায়ী যে কাজ করা হয় তাকে ভালো কাজ বলা হয়। আর এ মানদন্ড অনুযায়ী যে কাজ করা না হয় তাকে মন্দ কাজ বলা হয়।
৬. অধিকার ও কর্তব্য এবং সততা ও অসদাচার
নৈতিক অধিকার ও কর্তব্য এবং সততা ও অসদাচার নীতিবিদ্যার আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। নৈতিক আদর্শ অনুযায়ী যে কাজ আমাদের করা উচিত তা হলো কর্তব্য। অধিকার ও কর্তব্য অনেক সময় একত্রে চলে।
৭. নৈতিক অবধারণের স্বীকার্য সত্য
প্রতিটি বিজ্ঞানেরই কতকগুলো স্বীকার্য সত্য রয়েছে। নীতিবিদ্যারও কতকগুলো স্বীকার্য সত্য রয়েছে। ইচ্ছার স্বাধীনতা, আত্মার অমরত্ব, ঈশ্বরের অস্তিত্ব হচ্ছে নৈতিক অবধারণের স্বীকার্য।
৮. নৈতিক আদর্শ ও প্রগতি
নীতিবিদ্যার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির মধ্যে একটি নৈতিক ভাব গড়ে তোলা। তাই নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শ ও প্রগতি সম্পৰ্কীয় বিষয় নিয়েও আলোচনা করে।
৯. নৈতিক মানদণ্ড ও মতবাদ
নৈতিক আদর্শ বা মানদণ্ড অনুসারে মানুষের ক্রিয়াকলাপের ভালোত্ব বা মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব বা অন্যায়ত্ব ইত্যাদি নিরূপণ করা হয়।
১০. শান্তির নৈতিক ভিত্তি
কোনো ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রের বিপক্ষে নীতিবিরুদ্ধ কাজ করলে সে অপরাধী হয় এবং এ অপরাধের জন্য তার শাস্তি পাওয়া উচিত। শাস্তির নৈতিক ভিত্তি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন মতবাদগুলো নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের বা ঐচ্ছিক ক্রিয়ার নৈতিক মূল্য বিচার করে। এটি মানুষের জীবনের পরমকল্যাণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান আর পরম কল্যাণের ব্যাখ্যা দেওয়াই নীতিবিদ্যার অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।
Related Posts:
কর্তব্য কী এবং কর্তব্য কত প্রকার ও কী কী | ব্যাখ্যাসহ আ...
অধিকার কি | অধিকারের বিভিন্ন সংজ্ঞা | অধিকারের শ্রেণীবি...
নীতিবিদ্যা কত প্রকার ও কী কী
নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা কী | আলোচনা ও ব্যাখ্যা
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?