বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব পান।
সাতই মার্চের ভাষণ
সাতই মার্চের ভাষণ
স্থানাঙ্ক: ২৩.৭৩৩০৬৬° উত্তর ৯০.৩৯৮৪৩৭° পূর্ব
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
৭ই মার্চের ভাষণ
৭ই মার্চে রেসকোর্সে ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান
তারিখ ৭ মার্চ ১৯৭১
সময় ২:৪৫ অপরাহ্ন — ৩:০৩ অপরাহ্ন
ভেন্যু রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), পূর্ব পাকিস্তান
অবস্থান রমনা, ঢাকা
স্থানাঙ্ক ২৩.৭৩৩০৬৬° উত্তর ৯০.৩৯৮৪৩৭° পূর্ব
ধরন ভাষণ
স্বীকৃতি বিশ্ব স্মৃতির আন্তর্জাতিক নিবন্ধন
সাতই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।[১]এই ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণের একটি লিখিত ভাষ্য অচিরেই বিতরণ করা হয়েছিল। এটি তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক কিছু পরিমার্জিত হয়েছিল। পরিমার্জনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।[১] ১৩টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়। ১৩ তম হিসাবে মাহাতো নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়, যা নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষায় ১ম অনুবাদ।[২] ম্যাগাজিন শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে উল্লেখ করে।[] ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৩]
পটভূমি
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।[৪]
ভাষণ
বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে:
তিনি ভাষণে কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করেন:
সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা
পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত
সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো
অত্যাচার ও সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য বাঙালিদের আহ্বান জানানো
দাবী আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান
নিগ্রহ ও আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান এবং বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা
ভাষণ রেকর্ড
পাকিস্তান সরকার ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ভাষণটি প্রচার করার অনুমতি দেয় নি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৎকালীন পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একইসঙ্গে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাঁচ আসনে সংসদ সদস্য এম আবুল খায়ের ভাষণটি ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদের এ কাজে সাহায্য করেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের, যিনি ভাষণের ভিডিও ধারণ করেন। তাদের সঙ্গে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিবিদ এইচ এন খোন্দকার ভাষণের অডিও রেকর্ড করেন।[৫]
অডিও রেকর্ডটি এম আবুল খায়েরের মালিকানাধীন রেকর্ড লেবেল বিকশিত এবং আর্কাইভ করা হয়। পরে, অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের একটি অনুলিপি শেখ মুজিবকে হস্তান্তর করা হয় এবং অডিওর একটি অনুলিপি ভারতে পাঠানো হয়। সেই সাথে অডিওর ৩০০০ অনুলিপি করে তা সারা বিশ্বে ভারতীয় রেকর্ড লেবেল এইচএমভি রেকর্ডস দ্বারা বিতরণ করা হয়।[৫]
স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া
২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ভাষণটি সহ মোট ৭৭ টি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে একইসাথে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউনেস্কো পুরো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিলকে সংরক্ষিত করে থাকে। ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে (এমওডব্লিউ) ’ ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭ টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত হয়েছে।[৬]
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ‘ইতিহাসের প্রতিশোধ’ হিসেবে তুলনা করেছেন। কারণ স্বাধীন দেশে দীর্ঘসময় এই ভাষণের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।[৭]
শাবিপ্রবির শিক্ষক জাফর ইকবাল প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
বঙ্গবন্ধু নয় বরং ইউনেস্কোই এই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত হয়েছে। কারণ এখন তাদের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণটি আছে, এমনটা তারা বলতে পারবে।[৮]
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
"শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি। তার এই সতর্ক কৌশলের কারণেই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা করতে পারেনি।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব লিখ।?
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব লিখ।?
MdSawnislam
Asked on April 28, 2021
2 Answers Md Jaber ahsan
Answered on November 18, 2020
Call
৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্বঃ: ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষনকে বাঙ্গালী জাতীর মূক্তির প্রাথমিক ভাষন বলা হয়। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করেন এবং বিকেল ৩টা ৩ মিনিট শেষ করেন। উক্ত ভাষণটি ছিল ১৮ মিনিট।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে কুক্ষিগত রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করলে তা ১লা মার্চ এক অধিবেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয় । এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।
“ তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান তার কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন যার ফলে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ চূড়ান্ত স্বাধীনতার ভাষন দেয়া মাত্রই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয় ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
এই ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী মানুষ, সচেতন নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবি, দেশপ্রেমী সাধারন জনতা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন ও দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এক দুঃসাহসিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তাই বলা যায় যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের জন্য ৭ই মার্চের ভাষন ছিল এক মূক্তির ভাষন।
Md Jaber ahsan ইমার্জেন্সি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে বিজিট করুন https://flamebd.com/
Answer 2480 Views Anonymous
Answered on November 18, 2020
Call
৭ই মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ বাঙালি জাতি এই ভাষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত হয় এবং তারা যুদ্ধ করার চরম শক্তি অর্জন করে।যার ফলে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।
Answer 2480 Views
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব
উত্তর : ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।এ ভাষণকে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৮৬৩ সালে প্রদত্ত বিখ্যাত গ্যাটিসবার্গ বক্তৃতার সাথে তুলনা করা হয়।
লিংকনের ভাষণের মতোই বঙ্গবন্ধুর ভাষণও জনগণের তীব্র স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে এবং ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করে।
এ ভাষণের মধ্যদিয়ে শেখ মুজিব বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের পথকে প্রশস্ত করেন এবং অসহযোগ আন্দোলনকে আরো বেগবান ও গতিশীল করে তোলেন।
তিনি তার ভাষণে স্বাধীনতার পরোক্ষ বাণীও জনগণের কাছে তুলে ধরেন। যার দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে স্বাধীনতাকামী জনগণ মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
→ বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব : ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ ভাষণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি স্বাধীনতার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে লিপ্ত হয়। নিম্নে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :১. মুক্তির দাবি উত্থাপন : পাকিস্তান সরকার এদেশের মানুষকে দীর্ঘ ২৩ বছর শাসন করেছে। তারা ভূমিকা পালন করেছে শাসকের এবং শাসিত হিসেবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষ।তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতিকে চারি দিক থেকে নানা চক্রান্তের ফাঁদ পেতে মারার যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, তা থেকে এ দেশবাসী মুক্তি চেয়েছে, বাঁচতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে এ মুক্তি আর বাঁচার বাণী প্রচার করেছেন।
তিনি বলেন, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।” তিনি আরো বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির দাবি তুলে ধরেন।
২. ভ্রাতৃত্ববোধের মর্মবাণী : বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধের মর্মবাণী জনগণের মধ্যে তুলে ধরেন। যার ফলে জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়।তিনি তার ভাষণে বলেন, “ভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবাই জানেন ও বোঝেন।”
তিনি বাঙালি জাতির সদস্যদেরকে ‘ভায়েরা আমার' বলে সম্বোধন করে ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৩. অসহযোগ আন্দোলনের ডাক : বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।দেশবাসীকে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এ অসহযোগ আন্দোলনকে আস্তে আস্তে সংগ্রামে পরিণত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিতে চাই, আজ থেকেই এই বাংলাদেশের কোর্টকাচারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।” এভাবে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতার প্রতি উৎসাহিত করেন।
৪. মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ : বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রত্যেক বাঙালি। নিরস্ত্র বাঙালির প্রস্তুতির বিপরীতে ছিল সুসজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ অবস্থা পূর্বেই অবলোকন করে ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন।
তিনি তার ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে বলেন, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ । ”
৫. দেশরক্ষার আহ্বান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জনগণকে দেশ রক্ষার আহ্বান জানান ।যার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণ দেশরক্ষার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশরক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মনে রাখবেন, বাঙালি-ননবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই।
তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের উপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়। কেননা শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। “তাই এসব শত্রুবাহিনীর কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি ।
৬. যুদ্ধের পরোক্ষ ঘোষণা : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ ঘোষণা ছিল। এখানে দেশকে মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।তিনি এ ভাষণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘোষণা না দিলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ ঘোষণার নির্দেশ দেন। যা মুক্তিকামী জনগণের জন্য ছিল একধরনের গ্রিন সিগন্যাল।
তিনি ভাষণে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি আরো বলেন, “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ।”
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?