ভারত পাকিস্তান বিভক্ত করে কোন কমিশন
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত করে কোন কমিশন পান।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির কারন সমূহ
এই দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কংগ্রেস ও লিগ নেতৃত্ব ভারত বিভাজনকেই একমাত্র উপায় মনে করে। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির কারন সমূহ
Etc Bangla ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০২২
0
ভারত বিভাজনের কারন
মুসলিম লীগের মুসলিমের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার নীতি কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছিল?১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় মহমেডান এডুকেশন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই মুসলমানদের জন্য অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ নামক সংগঠন তৈরি হয়। ঐ সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের স্বার্থ ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি নজর রাখা। পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ছিল লিগের অন্যতম উদ্দেশ্য।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত মহমেডান এডুকেশন কনফারেন্সের সঙ্গেই লিগের কাজকর্ম চলতে থাকে। পরে অবশ্য সংগঠনদুটি আলাদা হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে যারা কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন তাঁরা লিগ তৈরির বিরােধিতা করেছিলেন। কিন্তু বিরােধিতায় বিশেষ কাজ হয়নি। বরং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মুসলিম লিগের প্রসার ঘটে।
হিন্দু মসলিম সম্পর্কের অবনতির জন্য হিন্দু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশকে কেন দায়ী করা হয়?সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দু ও মুসলমানের স্বার্থ যে পরস্পর বিরােধী সেই ভাবনা তৈরি হওয়ার পিছনে হিন্দু শিক্ষিত মধ্যবিত্তদেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। যেমন, বাংলায় হিন্দু ভদ্রলােক সম্প্রদায়ের মধ্যে মুসলমানদের সম্পর্কে অনেক সময়ই নেতিবাচক ও তাচ্ছিল্যের মনােভাব দেখা যেত। এমনকি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহাসিকদের বিবরণ সম্পর্কেও বিদ্বেষ প্রকাশ পেত হিন্দু ভদ্রলােকদের লেখাপত্রে। এসবের উপর স্বদেশী নেতৃত্ব তাদের হিন্দু ধর্মীয় প্রতীককেন্দ্রিক রাজনীতির মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বিভাজন আরও প্রকট করে তােলেন।
গান্ধিজি খিলাফৎ সমস্যাকে অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের অন্যতম দাবি রূপে অন্তর্ভুক্ত করেন। উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান জনগােষ্ঠীর মধ্যে কংগ্রেসের ভিত্তি প্রসারিত করা। গান্ধি ও খিলাফতিরা একযােগে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযােগিতার কর্মসূচি প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে খিলাফৎ আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।
১৯২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে কয়েকটি জায়গায় দাঙ্গা হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের মধ্যে ভাঙন ধরায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের খলিফা পদের অবসান ঘটে। তার ফলে খিলাফৎ আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যে ধর্মীয় ভাবাবেগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে মুসলিম লিগের কর্মসূচিতে ছাপ ফেলেছিল। পাশাপাশি সমানভাবে বাড়তে থাকে উগ্র হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। এই সময় মহাসভার মতাে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির শক্তি বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের সভাপতি মহম্মদ ইকবাল এবং পরে চৌধুরি রহমৎ আলি পঞ্জাবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে, বালুচিস্তান ও কাশ্মীর নিয়ে মুসলমানদের আলাদা ভূখণ্ড গঠন করার প্রস্তাব দেন। রহম আলি অস্পষ্টভাবে পাকিস্তান’-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড এর ঘােষণায় সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার কথা বলা হয়। সেই ঘােষণায় ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন ও শাসননীতিই প্রতিফলিত হয়েছিল।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কংগ্রেস ভালাে ফল করে। কিন্তু, সাধারণভাবে এমনকি মুসলমান জনসংখ্যা-প্রধান অঞ্চলগুলিতে লিগ বিশেষ সাফল্য পায়নি। বরং বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এই নির্বাচনে খুবই সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু, নীতিগত সমস্যার কারণে আঞ্চলিক দলগুলির কয়েকটি ক্ষুন্ন হয়ে ক্রমে লিগের দিকে চলে যেতে থাকে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহাের অধিবেশনে মহম্মদ আলি জিন্নাহ সভাপতিত্ব করেন। ঐ অধিবেশনে মুসলমানদের পৃথক জাতি হিসেবে আলাদা একটি স্বশাসিত রাষ্ট্রের দাবি উঠে আসে।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাংলা, সিন্ধুপ্রদেশ ও পঞ্জাব বাদে প্রত্যেকটি প্রদেশে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এই ফলাফল লিগের মধ্যে আশঙ্কার জন্ম দেয়। ফলে লিগের দাবিতে বিচ্ছিন্নতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কংগ্রেস অন্তবর্তীকালীন সরকারে যােগ দিলেও, মুসলিম লিগ তাতে অসম্মত হয়। ১৬ আগস্ট থেকে পাকিস্তানের জন্য গণআন্দোলন আরম্ভ হয়। ঐ দিনে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ববঙ্গ বিহার, যুক্ত প্রদেশ, পঞ্জাব সরকারের প্রশাসনে অবস্থান বজায় রাখতে লিগ যােগ দিতে সম্মত হয়।
ভারত বিভাগ কি অনিবার্য ছিল
ভারতীয় গণপরিষদ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তার প্রথম সভা করে। কংগ্রেস পরিষদের সার্বভৌম মনে করলেও লিগ সেই মত মানতে অস্বীকার করে। এই পর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলতেই থাকে। এই দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কংগ্রেস ও লিগ নেতৃত্ব ভারত বিভাজনকেই একমাত্র উপায় মনে করে। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট অনুমােদন করে। সেই মােতাবেক ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৪ এবং ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত নামে দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
দেশভাগ ও দাঙ্গা
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বাধীনতার স্বাদ পেলেও দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছিল। দেশভাগের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক ফলশ্রুতি ছিল উদ্বাস্তু সমস্যা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়েছিল বাংলা ও পঞ্জাব প্রদেশে।
ভারত বিভাজন ও প্রশ্ন উত্তর
১. ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত করে কোন কমিশন? উঃ রাডক্লিফ কমিশন।২. ভারত পাকিস্তান কত সালে বিভক্ত হয়? উঃ ১৯৪৭ সালে।৩. কোন আইন দ্বারা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছিল? উঃ ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট।৪. ভারত স্বাধীনতা আইন পাস হয় কত সালে? উঃ ১৯৪৭ সালে।৫. ভারত বিভাজনের ভিত্তিতে রচিত একটি সিনেমার নাম লেখ? উঃ ১৯৯৪ সালে প্রকাশ পাওয়া ট্রেন টু পাকিস্তান।৬. পাকিস্তানের ধারণাটি কে প্রথম দেন? উঃ চৌধুরী রহমত আলী।৭. পাকিস্তান প্রস্তাব কোথায় গৃহীত হয়? উঃ ১৯৪০ সালে লাহোর অধিবেশনে।৮. পাকিস্তান প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন? উঃ এ কে ফজলুল হক।৯. মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে ১৪ দফা দাবি পেশ করা হয়? উঃ ১৯২৯ দিল্লি অধিবেশনে।
ভারত বিভাজন
ভারত বিভাজন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারত বিভাজন
ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রচলিত ধর্মসমূহ (১৯০১), যা ভারত বিভাজনের মূল ভিত্তি
তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৪৭
অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া
ফলাফল ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের ভারত ও পাকিস্তান অংশে বিভাজন এবং শরণার্থী সংকট
মৃত ২ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ,[১][ক]
১০০ লক্ষ থেকে ২০০ লক্ষ বাস্তুচ্যুত[২][৩][৪][৫][খ]
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজন বা দেশভাগ হল ব্রিটিশ ভারতকে[গ] দুটি স্বাধীন অধিরাজ্য ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত করার ঘটনা।[৬] ভারত অধিরাজ্য বর্তমান সময়ে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র; পাকিস্তান অধিরাজ্য বর্তমান সময়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসাবে পরিচিত। বিভাজনের ঘটনাটি জেলা-ভিত্তিক অমুসলিম বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশের বিভাজনের সাথে জড়িত ছিল। ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, রাজকীয় ভারতীয় নৌবাহিনী, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস, রেল ও কেন্দ্রীয় কোষাগারও বিভক্ত করে দেওয়া হয়। এই বিভাজনটি ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭-এ বর্ণিত হয়েছিল এবং এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ রাজ বা ক্রাউন শাসনের অবসান ঘটে। দুটি স্ব-শাসিত দেশ ভারত ও পাকিস্তান আইনত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অস্তিত্ব লাভ করে।
এই বিভাজনটি ধর্মীয় ভিত্তিতে ১ কোটি থেকে ২ কোটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত অধিরাজ্য দুটিতে অতিমাত্রায় শরণার্থী সংকট তৈরি করে।[২][৩][৪][৫] বিভাজনের অব্যবহিত পূর্বে ও পরে প্রাণহানির ঘটনা সহ বড় আকারে সহিংসতা হয়, বিতর্ক সাপেক্ষে মনে করা হয়, সহিংসতায় ১ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।[১][ঘ] দেশ বিভাজনে সহিংসতার প্রকৃতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতা ও সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা আজ অবধি তাদের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে।
শব্দটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতা বা ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসন থেকে বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) ও সিলনের (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে না।[ঙ] এই শব্দটি দুটি নতুন আধিরাজ্যের মধ্যেকার দেশীয় রাজ্যসমূহের রাজনৈতিক সংহতকরণকেও, বা দেশীয় রাজ্য হিসাবে হায়দ্রাবাদ, জুনাগড় এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সংযুক্তি বা বিভাজনের বিরোধের বিষয়টিকেও অন্তর্ভুক্ত করে না, যদিও কিছু ধর্মীয় ধারায় দেশীয় রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি ১৯৪৭–১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে ফরাসি ভারতের ছিটমহল ভারতে অন্তর্ভুক্ত করা বা ১৯৬১ সালে গোয়া ও পর্তুগিজ ভারতের অন্যান্য জেলাসমূহকে ভারতের দ্বারা অধিগ্রহণ করার বিষয়টকেও অন্তর্ভুক্ত করে না। এই অঞ্চলে ১৯৪৭ সালের অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক সত্ত্বা, সিকিম রাজ্য, ভুটান রাজ্য, নেপাল রাজ্য ও মালদ্বীপ বিভাজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।[চ]
দেশীয় রাজ্যসমূহে প্রায়শই শাসকদের সম্পৃক্ততা বা আত্মতুষ্টির সাথে সহিংসতা অত্যন্ত সংঘবদ্ধ ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে শিখ রাজ্যে (জিন্দ ও কাপুরথালা ব্যতীত) মহারাজারা মুসলমানদের জাতিগত নির্মূলকরণে আত্মতৃপ্ত ছিলেন, যখন পাতিয়ালা, ফরিদকোট ও ভরতপুরের মহারাজারা তাদের আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে জড়িত ছিলেন। কথিত আছে যে, ভরতপুরের শাসক তাঁর জনগণের জাতিগত নির্মূলকরণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন, বিশেষত দীঘের মতো স্থানসমূহে।[১০]
প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]
বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)[সম্পাদনা]
১৯০৯ সালে হিন্দুদের শতকরা হার
১৯০৯ সালে মুসলমানেদের শতকরা হার
১৯০৯ সালে শিখ, বৌদ্ধ ও জৈনদের শতকরা হার
১৯০৫ সালে তাঁর দ্বিতীয় কার্যকালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম প্রশাসনিক বিভাগ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিকে রাজনৈতিক ভাবে দ্বিখণ্ডিত করেন। এই বিভাজনের ফলে গঠিত হয় মুসলমান-প্রধান পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্র, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি বিভাগ) এবং হিন্দু-প্রধান বঙ্গপ্রদেশ (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রেসিডেন্সি ও বর্ধমান বিভাগ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্য)।[১১]
কারো কারো মতে কার্জনের বঙ্গভঙ্গ প্রশাসনিক দিক থেকে খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সময় থেকে এই ধরনের প্রশাসনিক সংস্কারের কথা অনেক বার ভাবা হলেও তা বাস্তবায়িত করা হয়নি। যদিও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এই ঘটনার ফলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তেমনটি আগে ঘটেনি।[১১] বাঙালি হিন্দু উচ্চবিত্ত গোষ্ঠী বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করেন। এঁদের অনেকেরই পূর্ববঙ্গে জমিদারি ছিল এবং সেই জমিদারির প্রজারা ছিলেন মুসলমান কৃষক। বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত বা ভদ্রলোক সমাজও নবগঠিত বঙ্গপ্রদেশে বিহারি ও ওড়িয়াদের দিয়ে বাঙালিদের সংখ্যালঘু করে দেওয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার জন্যই কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।[১১] কার্জনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুই-বারের কংগ্রেস সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ দ্রব্য বয়কট। ইচ্ছাকৃতভাবে না হলেও কখনও কখনও আন্দোলনকারীরা রাজনৈতিক সহিংসতার আশ্রয় নিতেন। যার ফলে সাধারণ নাগরিকরা আক্রান্ত হতেন।[১২] সহিংস আন্দোলন কার্যকরী হয়নি। কারণ, সেগুলি ব্রিটিশরা প্রতিহত করেছিল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেগুলি ব্যর্থ হয়েছিল।[১৩] উভয় ধরনের আন্দোলনের প্রধান শ্লোগান ছিল ‘বন্দেমাতরম্’। এটি ছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি গানের শিরোনাম। গানটি একাধারে বঙ্গজননী, ভারতমাতা ও হিন্দু দেবী কালীর উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছিল।[১৪] কলকাতার ইংরেজি-শিক্ষিত ছাত্ররা যখন কলকাতা থেকে তাদের গ্রাম বা মফঃস্বলে যান, তখন আন্দোলন বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।[১৫] ‘বন্দেমাতরম্’ শ্লোগানটির ধর্মীয় উন্মাদনা ও বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদ যুগান্তর ইত্যাদি দলের অধীনে যুবকদের একত্রিত করে। এঁরা সরকারি ভবনে বোমা বিস্ফোরণ, সশস্ত্র ডাকাতি,[১৩] ও ব্রিটিশ আধিকারিকদের হত্যা করতে শুরু করে।[১৪] কলকাতা যেহেতু সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, তাই এই রাজনৈতিক আন্দোলন ও ‘বন্দেমাতরম্’ শ্লোগানটি জাতীয় স্তরে পরিচিত ও স্বীকৃত হয়।[১৪]
ভারত
ইতিহাস
ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি ও সীমানা নির্ধারণ কমিশন
By Md Mamunur Rashid
May 11, 2020 0
আপনাদের মনে কি কখনও এরকম প্রশ্ন এসেছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিলো? আজকে আমরা ভারত-পাকিস্তান এর সীমানা নির্ধারণের কমিশন গঠন সম্পর্কে জানবো।
১৯৪০ সালে লাহোর মুসলিম লীগ সম্মেলনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষে কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাব কে ‘লাহোর প্রস্তাব’ নামে অভিহিত করা হয়। যদিও পরে এই লাহোর প্রস্তাব পরে দ্বিজাতি তত্ত্বের সাথে এক করে জিন্নাহ পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করে বসেন। জিন্নাহ ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র গঠন হবে না বলে জানিয়ে দেন। শেরে বাংলার উপস্থাপিত লাহোর প্রস্তাবের সাথে দ্বিজাতি তত্ত্বের মিল ঘটিয়ে পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করা হয়। যার সাথে লাহোর প্রস্তাবের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই পূর্ববঙ্গের মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান প্রস্তাবের পক্ষে না গিয়ে তিনি ‘স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা’ গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব দেন। তার এই অবিভক্ত বাংলা গঠনে তখন কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু সহমত পোষণ করেন এবং এই অবিভক্ত বাংলা গঠনের জন্য তারা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দুই দলই তাদের এই প্রস্তাব কে ফিরিয়ে দেন।
এছাড়া সাধারণ জনগণ এই অবিভক্ত বাংলা গঠনে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করে নি। কংগ্রেস ও মুসলিমলীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু, আবুল হাশিম, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, শঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বখশী এই কয়জন ছাড়া বাংলার আর তেমন কোনো রাজনৈতিক নেতা অবিভক্ত বাংলা আন্দোলনে যোগ দেন নি। এছাড়া ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, কংগ্রেস ও মুসলিমলীগের ঐক্য মত ছাড়া ‘স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা’ এর প্রস্তাব মানা হবে না। তাই আর স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা তৈরি হলো না। যখন অবিভক্ত বাংলার পক্ষে পূর্ববঙ্গে ভোট হয় তখন ১০৬/ ৩৫ ভোটে অবিভক্ত বাংলার পক্ষে রায় যায়। অন্যদিকে পশ্চিম বঙ্গ ৫৮/২১ ভোটে বাংলা ভাগের পক্ষে ছিল। ফল স্বরুপ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশ ও পশ্চিমবঙ্গ ভারতে অংশ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে তখন প্রশ্ন দাঁড়ালো যে, এই রাষ্ট্র দুটির সীমানা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে?
সীমানা চিহ্নিতকরণদেশ বিভক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত যখন চূড়ান্ত তখন সীমানা গঠন কীভাবে হবে, তা প্রধান বিষয় হয়ে যায়। আর এই বিষয় সামনে রেখে লর্ড মাউন্টব্যাটেন সীমানা গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একটি আলোচনার আহ্ববান করেন। তখন তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও কংগ্রেসের কিছু নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। সীমানা গঠনের ক্ষেত্রে ‘সীমানা কমিশন’ কেমন হবে সেই বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। এই সীমানা গঠনে ক্ষেত্রে দুই দেশ তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত উপস্থাপন করবেন কিন্তু মাউন্টব্যাটেন গ্রহণযোগ্য মত টি গ্রহণ করবেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘সীমানা কমিশন’ গঠনের ক্ষেত্রে বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশের সীমানা কমিশনের প্রতিটিতে বিচার বিভাগীয় কমিটির পিভি কাউন্সিলরের ৩ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। তখন মাউন্টব্যাটেন ভারতের গরম সহ্য করতে পারবে না বলে এই মতকে বাদ দিয়ে দেন। জিন্নাহ আরেকটি প্রস্তাব পেশ করেন। সেটি হলো- জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নিয়োগ দিতে বলেন এবং প্রতি কমিশনে ৩ জন করে থাকবে যাদের সবাই অভারতীয়। কিন্তু জিন্নাহর এই মতকেও মাউন্টব্যাটেন অস্বীকৃতি জানান। কারণ ব্রিটিশ সরকার ১৫ আগষ্টের আগেই সীমানা নির্ধারণ শেষ করতে চায়। যার কারণে এই প্রস্তাবও মানা হয়নি। কারণ এই প্রস্তাবের প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ। এরপর নেহেরু একটি প্রস্তাব পেশ করেন যে, উভয় দল থেকে প্রতি কমিশনে ২ জন করে লোক নিয়োগ ও নিরপেক্ষ একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এই প্রতিনিধিগণ হবেন বিচার বিভাগীয়। এই প্রস্তাব ব্রিটিশ ও মুসলিমলীগ মেনে নেয়। নেহেরুর এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত অনেক কিছু যোগ বিয়োগ করে উভয় দলের একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব তৈরি করা হয়। নেহেরুর এই প্রস্তাবকে ‘নেহেরু কমিশন’ নামে ডাকা হয়। ‘নেহেরু কমিশন’-এর খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয় ১৯৪৭ সালের ১২ই জুন।
আমাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
সীমানা কমিশনের ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহনেহেরু কমিশনের খসড়া প্রস্তাব পেশ করার পরের দিনই দুই দলের একটি যৌথসভা ডাকেন মাউন্টব্যাটেন। এই সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত হলো, সীমানা কমিশনের একজন নিরপেক্ষ চেয়ারম্যান হবেন। একটি সীমানা কমিশন উভয় দলের দুইজন করে বিচার বিভাগীয় লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। পাঞ্জাব কমিশনের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের একজন শিখ প্রতিনিধি এই কমিশনে থাকবেন। দুই দলের প্রধানগণ গভর্নরের নিকট তাদের প্রতিনিধিদের নাম জমা দিবে। প্রতিটি সীমানা কমিশন একজন নিরপেক্ষ প্রতিনিধির নাম জমা দিবেন। তারা ব্যর্থ হলে দুই দল নির্ধারন করে দিবে একজন নিরপেক্ষ সভাপতির নাম। নেহেরুরের এই মত গ্রহণ করা হয় ‘ট্রামস অব রেফারেন্স’ এর উপর ভিত্তি করে।
জিন্নাহ পরে সীমানা কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগের ব্যাপারে তিনি একজন ব্রিটিশ বিচারক কে থাকার ব্যাপারে অভিমত দেন। তখন কংগ্রেস তাদের এই সীমানা চেয়ারম্যান হিসেবে ব্রিটিশ বিচারক র্যাডক্লিফ কে নিযুক্ত করেন এবং জিন্নাহও পাঞ্জাব ও বাংলার নিরপেক্ষ চেয়ারম্যান হিসেবে র্যাডক্লিফ এর নাম ঘোষণা করেন। পরে ২৬ ও ২৭ জুন দুই দল তাদের কমিশনের নাম গভর্নরের কাছে জমা দেন।
কংগ্রেস কর্তৃক সীমানা কমিশনের নাম – বিচারপতি সি. সি বিশ্বাস ও বিচারপতি বিজন কুমার মুখার্জি।
মুসলিম লীগ কর্তৃক সীমানা কমিশনের নাম – বিচারপতি আবু খ্রিষ্টাদ্বেহ মোহাম্মদ আকরাম ও বিচারপতি এস. এ রহমান।
বাংলার সীমানা নির্ধারণ কীভাবে হয়েছিল, তা পরের পর্ব আলোচনা করা হয়েছে।
Feature Image: en.wikipedia.org
Md Mamunur Rashid
Related Articles
অন্যান্য
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়
ভ্রমণ
মালদ্বীপ ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশিকা
ভ্রমণ
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?