শবে বরাতের রোজা সম্পর্কে হাদিস
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে শবে বরাতের রোজা সম্পর্কে হাদিস পান।
শবে বরাত: মনগড়া মতে নয়, সুন্নাহর আলোকে
শবে বরাত: মনগড়া মতে নয়, সুন্নাহর আলোকে
Published by: BanglaTribune
ago
রমজানের আগের মাস শাবান। এ মাসের পনেরতম রাত, অর্থাৎ চৌদ্দ শাবান দিবাগত রাতটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ—ইবাদত ও রোজা দুটি কারণেই। তাই রমজানের আলোচনার সঙ্গে এই পবিত্র রজনীর আলোচনা জড়িয়ে আছে। হাদিসে এ রাতকে নির্দেশ করা হয়েছে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলে। আমাদের সাধারণ পরিভাষায় বলি- ‘শবে বরাত’। ক্ষমা ও মাগফিরাতের জন্য এবং গুনাহের কালিমা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য এ রাত বিশেষ মহিমাপূর্ণ।
বিশুদ্ধ হাদিসে শবে বরাতএ রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তবে রাতটি উদযাপনের বিশেষ কোনও পন্থা নির্ধারণ করা কিংবা সম্মিলিত উৎসব করা অনুচিত। বরং যথাসাধ্য ইবাদতে মশগুল থাকা কাম্য। এই রাতকে অন্যসব রাতের মতোই ভাবা এবং ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে ‘মওজু’ (বানোয়াট) বা ‘জয়িফ’ (দুর্বল) আখ্যা দেওয়া যেমন ভুল, তেমনি একে শবে কদরের মতো ফজিলতপূর্ণ ভাবাও ভিত্তিহীন। হাদিসে রয়েছে—মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন: আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং শিরককারী ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া অন্য সবাইকে ক্ষমা করেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান (১৩/৪৮১), হাদিস ৫৬৬৫)ইমাম মুনযিরি, ইবনে রজব, নুরুদ্দিন হাইসামি, কাসতাল্লানি, যুরকানি প্রমুখ হাদিস বিশারদ এ হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন। (মাসিক আল-কাউসার, সেপ্টেম্বর ’০৫ সংখ্যা।)
অন্য হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি নবীজিকে (বিছানায়) না পেয়ে খোঁজে বের হলাম। দেখি তিনি জান্নাতুল বাকিতে মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, আয়েশা, তুমি কী ভেবেছো আল্লাহ ও তার রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়েশা (রা.) বলেন, তা নয়, আমি ভাবলাম, আপনি হয়তো অন্য কোনও স্ত্রীর কাছে গেছেন। নবীজি বললেন, আল্লাহ তাআলা মধ্য-শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চেয়ে অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৯)।
শবে বরাতে রোজা রাখাঅনেকেই ভাবেন, শবে বরাতের রোজা মোট তিনটি— ১৪, ১৫ ও ১৬ শাবান। এটা ঠিক নয়। হাদিসে রয়েছে- এই রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৮)।
সুতরাং রোজা কেবল একটি এবং তিনটি বিশুদ্ধ হাদিসে প্রমাণিত নয়। রসুলের (সা.) সুন্নাত হলো, শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজান মাস ব্যতীত পূর্ণ কোনও মাস নবীজিকে আমি রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবানের তুলনায় ভিন্ন কোনও মাসে এত রোজা পালন করতেও দেখিনি। (বুখারি, হাদিস ১৯৬৯)।
তাই শেষের দুই দিন ছাড়া শাবানের মাসজুড়ে রোজা রাখা মুস্তাহাব। তা ছাড়া প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখাও প্রমাণিত। সেভাবে তিনদিন রাখলে সমস্যা নেই। (ইসলাহি খুতবাত, মাওলানা তাকি উসমানি)।
‘কেন শাবান মাসে নবীজি অধিক রোজা রাখতেন’—এই প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তরে রসুল (সা.) বলেন- রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার কারণে মানুষ এ মাসের ব্যপারে উদাসীন থাকে। অথচ এটা এমন মাস, যে মাসে রবের নিকট আমল তুলে ধরা হয়। আমি চাই যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল তার নিকট পেশ করা হোক। (ফাতহুল বারি (৪/২৫৩); নাসায়ি, হাদিস ২৩৫৭)।
শবে বরাতে ইবাদতশবে বরাতে রাত জেগে ইবাদত করা মুস্তাহাব। [(আব্দুল হাই লক্ষ্মৌভি,আল-আসারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মাওজুআ (৮০-৮৫)]।
আলি ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন- পনের শাবানের রাতটি তোমরা ইবাদতে কাটাও এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে আসেন এবং বলেন- কোনও ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি?—আমি ক্ষমা করবো। কোনও রিজিকপ্রার্থী আছে কি?—আমি রিজিক দেবো। এভাবে সুবহেসাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে বলে তাদের ডাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৪)।
তাই যত রাকাত ইচ্ছা নামাজ পড়া যেতে পারে—বিশেষ কোনও নামাজ নেই এবং বিশেষ কোনও পদ্ধতিও নেই। যেসব বর্ণনা ‘বিশেষ এবাদতের কথা পাওয়া যায়—তা সঠিক নয়। (শাওকানি, আল ফাওয়াইদুল মাজমুআ (৫১)।
বাইহাকি, শুআবুল ঈমান (৩/৩৮২-৩৮৩) হাদিসে আছে, আয়েশা (রা.) বলেন- একবার রাসুল (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদাহ করেন যে, ধারণা হলো তিনি মারা গেছেন। আমি ওঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম—আঙুলটি নড়লো। সুতরাং তিনি সেজদাহ থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে বললেন- তুমি কি জানো এটা কোন রাত? এ হলো মধ্য-শাবানের রাত। আল্লাহতায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন, প্রার্থনাকারীকে ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীকে অনুগ্রহ করেন এবং বিদ্বেষ পোষণকারীকে ছেড়ে দেন আপন অবস্থায়।
বোঝা যায়, এ-রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া—যাতে সেজদাহ দীর্ঘ হবে—শরিয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। এটাও অনুমিত হয়, এ-রাতের নফল আমল সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত। এভাবে নফল আমল উপলক্ষে দলে দলে মসজিদে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদিসে নেই, সাহাবিদের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকিম (২/৬৩১-৬৪১)।
শবে বরাত সম্পর্কে মনীষীদের বক্তব্যসালফে সালেহিন থেকে নিয়ে পূর্বসূরি বিভিন্ন বুজুর্গ আলেম শবে বরাতের আমলে উৎসাহ দিয়েছেন এবং বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন।
ইবনে তাইমিয়া (৭২৮ হি.): তিনি বলেন, পনেরো শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক ‘মারফু’ হাদিস ও ‘আসারে সাহাবা’ বর্ণিত রয়েছে। সালফে সালেহিনের অনেকেই তাই নফল এবাদতে যত্নবান হতেন বলে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলিতে রয়েছে। অবশ্য এই দিন বা রাতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা এবং সাজসজ্জা করা বিদআত ও ভিত্তিহীন। (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম (২/৬৩১-৬৩২)।ইমাম ইবনে রজব রহ. (৭৯৫ হি.): তিনি লিখেছেন, ‘শাবান মাসের পনেরো তারিখে রোজা নিষেধ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে সঠিক কথা হচ্ছে, এ রাতের ইবাদত ব্যক্তিগতভাবে করা উচিত। মসজিদে ভিড় করা বা মাহ্ফিল করা মাকরুহ। একজন মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে জিকির ও দোয়াও জন্য পুরোপুরি অবসর হওয়া। প্রথমে খাঁটি মনে তওবা করবে; এরপর মাগফেরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে; বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া করবে এবং নফল নামাজ পড়বে। সেসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, যা এ রাতের বিশেষ ফজিলত থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। যেমন: শিরক, হত্যা, ব্যভিচার, হিংসা ইত্যাদি। (লাতায়িফুল মাআরিফ (১৫১-১৫৭)।ইবনুল হাজ্জ রহ. (৭৩৭ হি.): তিনি বলেন, এ রাত যদিও শবে কদরের মতো নয়; কিন্তু এর অনেক ফজিলত ও বরকত রয়েছে। আমাদের পূর্বসূরি পুণ্যাত্মারা এই রাতের যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন এবং এর যথাযথ হক আদায় করতেন। কিন্তু আজ সাধারণ লোকেরা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টো করে ফেলেছে। তারা রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের পেছনে পড়ে (মনের অজান্তেই) এর খায়ের বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। (আল-মাদখাল (১/২৯৯-৩১৩)।শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত
শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা। শবে বরাত কত তারিখে?/শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বো?/শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কিভাবে রাখতে হয় ?/শবে বরাতের আমল ও ফজিলত
ইসলাম ও জীবনফজিলত Trending
শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত
Rimon Follow on Twitter Send an email
1 week agoLast Updated: March 7, 20232 24,635 3 minutes read
শবে বরাতের নামাজ, রোজা, আমল ও ফজিলত
“শবে বরাত” মূলত ফার্সি শব্দ। তবে হাদিসের ভাষায় বলা হয় ‘লাইলাতু নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী । তাফসিরের ভাষায় এটাকে ‘লাইলাতুস সাক’, ‘লাইলাতুর রাহমাহ’ ও ‘লাইলাতুল বারাআত’ বলা হয়।
শবে মানে হচ্ছে রাত আর বরাত মানে হচ্ছে মুক্তি। অর্থাৎ শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। কারন এ রাতে আল্লাহ্ তার অগনিত বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।
হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা (র) বলেন, রাসূল (সঃ) তাকে বলেছেন,
এই রাতে আল্লাহ ভেড়া বকরীর পশমের সংখ্যার পরিমানের চেয়েও বেশি সংখ্যা পরিমাণ গুনাহ্গারকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি – ৭৩৯)
আরও পড়ুন ঃ
যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ্ অবশ্যই তা কবুল করবেন
দোয়া কবুলের ২০ টি উত্তম সময়
শাবান মাস আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার নির্ধারিত ১২ মাসের একটি অন্যতম মাস। এ মাসের রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। এ মর্যাদার কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন।
শবে বরাত কত তারিখে?
শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ, ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল শবে বরাত।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বো?
শবে বরাতে নির্দিষ্ট পরিমান নামাজের কথা কোনো হাদিস এবং কুরআনে উল্ল্যেখ নেই। তবে হাদিসে পাওয়া যায়, রাসূল (সঃ) বলেন,
যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদাত করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ট ইবাদাত হল নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হল নফল নামাজ। (ইবনে মাজাহ – ১৩৮৪)
তাই দুই রাকাত করে যত খুশি নামাজ পড়তে পারেন। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। এখন নিয়ত করবেন কিভাবে? বলবেন আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার। এইভাবে নিয়ত করলে আপনার নামাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে আপনি চাইলে আরবিতে এইভাবেও করতে পারেন।
নাওয়াইতু আন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা-আলা- রাকা’আতাই ছলা-তি লাইলাতিল বারায়াতিন্ নাফ্লি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
নামাজে সূরাতুল ফাতিহা পড়ার পর তিন বার সূরা ইখলাস বা সূরা ওয়াকিয়াহ পড়তে হবে এমন কোন কথা হাদিসে নেই। রাসূল (সঃ) সুস্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি। আপনি পবিত্র কুরআনের যেকোনো সূরাই পড়তে পারেন।
শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কিভাবে রাখতে হয় ?
হাদিস শরীফে শবে বরাতের রোজার বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায়। রাসূল (সঃ) বলেনঃ ১৫ শাবানের রাতে তোমরা নফল ইবাদাত করো এবং পরদিন রোজা রাখো। এই হাদিস দিয়ে শবে বরাতের একটি নফল রোজা রাখা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে তিন দিন তিনটি রোজা রাখতেন এবং তিনি নফল রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। সে হিসেবে শাবান মাসে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে।
এ বিষয়ে অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত উম্মে সালমা ও হযরত আয়েশা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অধিকহারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা শাবান মাসেই রোজা রাখতেন। (তিরমিজি – ১৫৫, ১৫৬, ১৫৯)
সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অধিক সওয়াবের কাজ।
শবে বরাতের আমল ও ফজিলত
শবে বরাতের আমল অনেক ফজিলতপূর্ণ। আসুন জেনে নেই শবে বরাতে কি কি আমল করা যেতে পারে। এশার নামাজের পর নির্জনে (বাসায় নফল নামাজ পড়া উত্তম) দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে থাকবেন। কত রাকাত পড়লেন তা মুখ্য নয় বরং কতটা মনোযোগ ও দীর্ঘ্য করলেন সেটাই মুখ্য বিষয়।
হাদিস শরীফে আছে, হজরত আয়েশা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একবার রাসূল (সঃ) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এতো দীর্ঘ্য সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল নাড়া দিলাম। এরপর তিনি সিজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন:
হে আয়েশা তুমি কি আশঙ্খা হয়েছে? আমি বললাম ইয়া রাসূল (সঃ) আপনার দীর্ঘ্য সিজদা দেখে আমার আশঙ্খা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবী (সঃ) বললেনঃ তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) ভালো জানেন।
তখন রাসূল (সঃ) বলেনঃ এটা হলো মধ্য শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন। ক্ষমা পার্থনকারীদের ক্ষমা করে দেন। অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ঈমান তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৩৮২)
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে নামাজে অত্যন্ত মনোযুগী হতে হবে। এবং বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে আল্লাহ দুই ধরণের ব্যক্তি ছাড়া বাকিদের ক্ষমা করে দেন। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শিরক করে এবং অন্ন ব্যক্তি হলো যে হিংসা করে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন এই দুই ব্যক্তিদের মধ্যে পরে না যাই।
হযরত আলী (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ ১৪ই শাবান দিবাগত রাত যখন আসে তোমরা এই রাতটি ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এই দিনে আল্লাহ সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি যাদের আমি ক্ষমা করবো? কোনো রিযিক প্রার্থী আছো কি যাদের আমি রিযিক দিবো? আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত যাদের আমি উদ্ধার করবো? এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ আহ্বান করতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ (হাদীসটি ইবনে মাজাহ তে বর্ণিত আছে)
এ রাতে কাজা হয়ে যাওয়া নামায পড়তে পারেন। তবে শুধুমাত্র ফরজ ও বিতির নামাজের কাজা পড়বেন।
শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারেন। যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়।
বেশি করে তাওবা ও ইস্তেগফার করা।
বেশি করে দুরূদশরীফ পাঠ করা।
বেশি করে তসবিহ পাঠ করা (সুবহানাল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহুআকবার)
বেশি করে দান-সদকা করা। গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করা।
ফজর নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
প্রতিবছরই শবে বরাত আসে। আসে মুক্তি ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে। আল্লাহর ভয়ে কম্পমান হৃদয়ে এ রাতে তাওবার উদ্রেক হয়। তাওবাকারীর জন্য ক্ষমার সওগাত নিয়ে আসে শবেবরাত। পাপ আক্রান্ত মন এ রাতে পরিশুদ্ধ জীবনে ফেরার তাগিদ অনুভব করে।
আজ পবিত্র শবে বরাত > রোজা কয়টি, নামাজ, দোয়া, আমল ও ফজিলত ২০২৩
আজ পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাতের রোজা কয়টি, নামাজ, দোয়া, আমল ও ফজিলত ২০২৩ - এসব ব্যাপারে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আজ ৭ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে
ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা
আজ পবিত্র শবে বরাত > রোজা কয়টি, নামাজ, দোয়া, আমল ও ফজিলত ২০২৩
Last updated: 07/03/2023 11:15 PM
এডু ডেইলি ২৪
Published 07/03/2023
15 Min Read Share
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - করণী ও বর্জনীয় - Sabe barata salat rules
Ads
আজ পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাতের রোজা কয়টি, নামাজ, দোয়া, আমল ও ফজিলত ২০২৩ – এসব ব্যাপারে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আজ ৭ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিই হলো শবে বরাতের রাত। ফার্সি শব্দ শবে বরাতের মানে হলো- মুক্তির রজনী। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারকাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে।এক নজরে ...
পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ এর তারিখ / শবে বরাত কবে ২০২৩
শবে বরাত অর্থ কি
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ
শবে বরাতের ফজিলত / শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
শবে বরাতের নফল নামাজ
শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়
ইসলামি তমদ্দুন তথা মুসলিম কৃষ্টিতে যেসব দিবস ও রজনী বিখ্যাত, এর মধ্যে ৫টি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো- দুই ঈদের রাত, শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদর। যাঁরা রাতের ইবাদতের গুরুত্ব অনুধাবন করেন, তাঁরা প্রতিটি রাতকে শবে বরাত বানিয়ে নেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন।
Ads
পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ এর তারিখ / শবে বরাত কবে ২০২৩
সভায় ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আজ ২৯ রজব ১৪৪৪ হিজরি, ৮ ফাল্গুন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
এমতাবস্থায়, আগামী ৯ ফাল্গুন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ বুধবার থেকে ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাস গণনা শুরু হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৪ শাবান ১৪৪৪ হিজরি, ২২ ফাল্গুন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৭ মার্চ ২০২৩ খ্রি. মঙ্গলবার দিনগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।
Ads
শবে বরাত অর্থ কি
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতেই হলো ‘শবে বরাত’। ফার্সি শব্দ শবে বরাতের মানে হলো- মুক্তির রজনী। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারকাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানান ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম / শবে বরাতের নামাজ
ইসলামি তমদ্দুন তথা মুসলিম কৃষ্টিতে যেসব দিবস ও রজনী বিখ্যাত, এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো- দুই ঈদের রাত্রিদ্বয়, শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদর। যাঁরা রাতের ইবাদতের গুরুত্ব অনুধাবন করেন, তাঁরা প্রতিটি রাতকে শবে বরাত বানিয়ে নেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন।
Ads
তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। [সুরা-৪৪ (৬৪) দুখান, রুকু: ১, আয়াত: ১-১০, পারা: ২৫, পৃষ্ঠা ৪৯৬-৪৯৭/১৪-১৫]। মুফাসসিরিনগণ বলেন, এখানে ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত্রি বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)।
শবে বরাতের ফজিলত / শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)!
Ads
আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।
Ads
শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?