if you want to remove an article from website contact us from top.

    শবে বরাত সম্পর্কে আলোচনা

    Mohammed

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    এই সাইট থেকে শবে বরাত সম্পর্কে আলোচনা পান।

    শবে বরাত : কিছু ভ্রান্তি নিরসন

    শাবান-রমযান ১৪২৯   ||   আগস্ট ২০০৮

    শবে বরাত : কিছু ভ্রান্তি নিরসন

    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

    আলকাউসারের শাবান ১৪২৬ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় ‘বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত’ শিরোনামে, শাবান ১৪২৭ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৬ ঈ.) সংখ্যায় ‘উলামায়ে সালাফের উক্তির আলোকে শাবান শবে বরাত’ শিরোনামে এবং রজব ১৪২৮ হি. (আগষ্ট ’০৭ ঈ.) সংখ্যায় ‘অজ্ঞতা ও রসম-রেওয়াজের কবলে শাবান-শবে বরাত : নববী নিদের্শনাই মুক্তির উপায়’ শিরোনামে শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কথা পাঠকের সামনে এসে গেছে। ওয়াল হামদু লিল্লাহি তাআলা আলা যালিকা হামদান কাছীরা।

    এ সংখ্যায় শুধু কিছু ভুল ধারণা চিহ্নিত করে দিতে চাই। কেননা এগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।

    প্রশ্ন ১ : আমি এক কিতাবে পড়েছি যে, শবে বরাত বিষয়ক সকল হাদীস ‘মওযু’। ইবনে দিহয়ার উদ্ধৃতিতে কথাটা ওই কিতাবে লেখা হয়েছে।

    উত্তর : এটা একটা ভুল কথা। ইবনে দিহয়া কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। যিনি তার উদ্ধৃতিতে এ কথা লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। ইবনে দিহয়া শুধু এটুকু বলেছেন যে, শবে বরাতে বিশেষ নিয়মের নামায এবং  সে নামাযের বিশেষ ফযীলতের যে কথাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তা মওযু। তাঁর মূল আরবী বক্তব্য তুলে দিচ্ছি :

    أحاديث صلاة البراءة موضوعة

    ‘শবে বরাতের বিশেষ নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মওজু।’

    (তাযকিরাতুল মওজুআত, মুহাম্মাদ তাহের পাটনী পৃ. ৪৫)

    আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’

    আল্লামা শাওকানীও ‘আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ’ পৃ. ৫১)তে এই ভুল ধারণা সংশোধন করেছেন।

    প্রশ্ন ২ : একজন আলিমের কাছে শুনেছি যে, শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া ‘মাসনূন’ নয়। আর আজকাল যেভাবে এ রাতে কবরস্থানে মেলা বসানো হয় এবং মহিলারাও বেপর্দা হয়ে সেখানে গিয়ে ভিড় করে, তা তো একেবারেই নাজায়েয।

    প্রশ্ন এই যে, যতটুকু নাজায়েয তা তো অবশ্যই নাজায়েয, কিন্তু যদি মহিলারা বেপর্দা না হয় এবং কোনো গুনাহর কাজও সেখানে না হয় তবুও কি এ রাতে কবর যিয়ারত মাসনূন বলা যাবে না? হাকীমুল উম্মত ‘ইসলাহুর রুছূম’ কিতাবে একে ‘মাসনূন’ লিখেছেন।

    উত্তর : মহিলাদের জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে যাওয়া এমনিতেও নিষেধ। এরপর যদি পর্দাহীনতা ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। আর কবরস্থান যদি নিকটবর্তী হয় এবং মাযার না হয় আর সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কাজকর্ম না হয় তাহলে পুরুষের জন্য এ রাতে সেখানে গিয়ে যিয়ারত করার বিধান কী? হাকীমুল উম্মত রাহ. প্রথমে একে মাসনূন লিখেছিলেন। পরে আরো  চিন্তা-ভাবনা ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মত বিনিময় করার পর ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন এবং লেখেন যে, আমি কবরস্থানে যাওয়া থেকে বারণ করাকেই অধিক সতর্কতার বিষয় মনে করি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮) শরীয়তের নীতিমালার আলোকে হযরত থানভী রাহ-এর দ্বিতীয় মতই অগ্রগণ্য।

    প্রশ্ন ৩ : সুনানে ইবনে মাজাহ-তে (হাদীস নং : ১৩৮৮) পনেরো শা‘বান রাত সম্পর্কে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে :

    قوموا ليلها وصوموا نهارها

    এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

    এই হাদীসটি থানভী রাহ. ‘খুতবাতুল আহকাম’-এ উল্লেখ করেছেন এবং ‘ইসলাহুর রুসূম’-এ পনেরো শাবান-এর রোযাকে মাসনূন বলেছেন। কিন্তু এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে মওযু বলেছেন। এরপর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তকী উছমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘ইসলাহী খুতবাত’-এ দেখলাম যে, সেখানে এই হাদীসটিকে ‘জয়ীফ’ লেখা হয়েছে এবং এই রোযাকে ‘সুন্নত’ মনে করা ভুল বলা হয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি বুঝে আসছে না। আশা করি সাহায্য করবেন।

    উত্তর : ইবনে মাজাহর উপরোক্ত হাদীসটি ‘মওজু’ তো কখনোই নয়। তবে সনদের দিক থেকে ‘জয়ীফ’। যেহেতু ফাযাইলের ক্ষেত্রে ‘জয়ীফ’ গ্রহণযোগ্য তাই আলিমগণ শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে এ হাদীস বয়ান করে থাকেন।

    শায়খ আলবানী ‘সিলসিলাতুয যয়ীফা’ (৫/১৫৪) তে এই বর্ণনাকে ‘মওজূউস সনদ’ লিখেছেন। অর্থাৎ এর ‘সনদ’ মওজূ। যেহেতু অন্যান্য ‘সহীহ’ বর্ণনা উপরোক্ত বর্ণনার বক্তব্যকে সমর্থন করে সম্ভবত এজন্যই শায়খ আলবানী সরাসরি ‘মওজূ’ না বলে ‘মওজূউস সনদ’ বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তথাপি শায়খ আলবানীর এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা এই যে, এই বর্ণনা ‘মওজূ’ নয়, শুধু ‘জয়ীফ’। ইবনে রজব রাহ. প্রমুখ বিশেষজ্ঞদের এই মতই আলবানী সাহেব নিজেও বর্ণনা করেছেন।

    এ প্রসঙ্গে আলবানী সাহেব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা এই যে, এ বর্ণনার সনদে ‘ইবনে আবী ছাবুরা’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তার সম্পর্কে হাদীস জাল করার অভিযোগ রয়েছে। অতএব এই বর্ণনা ‘মওজু’ হওয়া উচিত। তবে এই ধারণা এ জন্য সঠিক নয় যে, ইবনে আবী সাবুরাহ সম্পর্কে উপরোক্ত অভিযোগ ঠিক নয়। তার সম্পর্কে খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, জয়ীফ রাবীদের মতো তার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা ছিল। রিজাল শাস্ত্রের ইমাম আল্লামা যাহাবী রাহ. পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণেই তাকে জয়ীফ বলা হয়েছে।’ দেখুন সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/২৫০

    সারকথা এই যে, উপরোক্ত বর্ণনা মওজু নয়, শুধু জয়ীফ।

    পনেরো শাবানের রোযা সম্পর্কে থানভী রাহ. যে ‘মাসনূন’ বলেছেন তার অর্থ হল মুস্তাহাব। আর ইসলাহী খুতবাতের আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়া হলে দেখা যায় যে, তা এ কথার বিপরীত নয়। ওই আলোচনায় ‘জয়ীফ’ হাদীসের ওপর আমল করার পন্থা বিষয়ে একটি ইলমী আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। হযরত মাওলানা পনেরো তারিখের রোযা রাখতে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন যে, একে শবে বরাতের রোযা বলবে না। গোটা শাবান মাসেই শুধু শেষের দুই দিন ছাড়া, রোযা রাখা মুস্তাহাব। তাছাড়া প্রতিমাসের ‘আয়্যামে বীজ’ (চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ) রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দিনের রোযা রাখা হলে ইনশাআল্লাহ ছওয়াব পাওয়া যাবে।

    সূত্র : www.alkawsar.com

    শবে বরাত কী? পবিত্র কুরআন ও হাদিস অনুসারে শবে বরাতের গুরুত্ব

    সহিহ হাদিসে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কী, শবে বরাত কি বেদাত বা বিদআত? শবে বরাতের ইবাদত ও আমল কী?

    ইসলাম এপ্রিল ২৫, ২০২১

    শবে বরাত কী? পবিত্র কুরআন ও হাদিস অনুসারে শবে বরাতের গুরুত্ব

    সহিহ হাদিসে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কী, শবে বরাত কি বেদাত বা বিদআত? শবে বরাতের ইবাদত ও আমল কী?

    মোস্তাক আহ্‌মাদ

    শবে বরাত কী? পবিত্র কুরআন ও হাদিস অনুসারে শবে বরাতের গুরুত্ব | Photo by David Rodrigo on Unsplash

    শবে বরাত ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাত অর্থাৎ শবে বরাত নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানান রকম মত রয়েছে। কেউ শবে বরাতকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রায় দিয়েছেন বা অ্যাখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ শবে বরাত পালন করা বা শাবান মাসের এই রাতে ইবাদাত করাকে বেদাত বা বিদায়াত বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সবারই জানা দরকার শবে বরাত কী, কুরআন ও হাদিসে শবে বরাত নিয়ে কী বলা হয়েছে, শবে বরাত বেদাত/বিদায়াত কি না, শবে বরাতের ইবাদাত কী হবে। এই আর্টিকেলে শবে বরাতের গুরুতপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

    শবে বরাত নিয়ে আলোচনা

    শবে বরাতকী?

    পবিত্র কুরআনে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে

    শবে বরাতের তাফসির

    হাদিসে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে

    শবে বরাত কি বেদাত (বিদআত)?

    শবেবরাত বরকতময় রজনীর ইবাদত

    শবে বরাতকী?

    সহিহ হাদিসে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বা ‘শব-ই বারাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য; শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী বা বরকতময় রজনী অথবা কল্যাণময় রজনী। কুরআনের -‘লাইলাতুল মুবারাকা’র অনুকুলে এটি পালিত হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানান ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

    পবিত্র কুরআনে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে

    পবিত্র শবেবরাত, কুরআনে যাকে লাইলাতুল মুবারাকাতিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ৪৪ নম্বর সুরা ‘দোখানের’ ৩ নং আয়াতে ‘শবেবরাত বরকতময় রজনী’ উল্লেখ করার পূর্বে হা-মিম দিয়ে সুরাটির শুরু, যার অর্থ: হা- অর্থ হামদ, মিম দ্বারা মুহাম্মদ (সা.) অর্থাৎ ‘হামদে মুহাম্মদ (সা.)’ বা ‘চির প্রশংসিত মুহাম্মদ (সা.)’। যার পুরো অর্থ অনন্ত মুহাম্মদের প্রশংসিত সত্তার আত্মদর্শন। দ্বিতীয় আয়াতে ‘ওয়ালকিতাবিল মুবীন’ অর্থাৎ শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের উল্লেখ করে এর ওপর জোর প্রদান করা হয়েছে। সুরা দোখানের ১ ও ২ নং আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় অর্থাৎ অনন্ত প্রশংসিত মুহাম্মদের আত্মদর্শন করো আর শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।

    তারপর আল্লাহপাক শবেবরাতের কথা বললেন, ইন্না আনযালনাহূ ফী লাইলাতম্ মুবারাকাতিন্।

    নিশ্চয়ই আমি এটি বরকতময় রজনীতে অবতীর্ন করেছি। [সুরা- দোখান, আয়াতঃ ৩]

    আল্লাহর ঘোষণা হলো, নিশ্চয়ই এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এই উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে তামাশা করে। তবে অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে।

    [সুরা-৪৪ [৬৪] দোখান, রুকু: ১, আয়াত: ১-১০, পারা: ২৫, পৃষ্ঠা ৪৯৬-৪৯৭/১৪-১৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন, এখানে ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত্রি বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। করআনের প্রায় সকল তাফসিরেই এর বর্ণনা রয়েছে।

    শবে বরাতের তাফসির

    প্রসিদ্ধ সকল তাফসির মতে, ‘শবে বরাতে’ অর্থাৎ ভাগ্য রজনীতে সকল মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, আগামী এক বছরের জন্য।

    পবিত্র কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসীর গুলো থেকে রেফারেন্স পৃষ্ঠা নম্বরসহ শববরাতের দলিল উল্লেখ করা হলো:

    তাফসীরে কাবীরে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযি (রহ.) সুরা দুখানের তাফসীর করতে গিয়ে ৯ম খন্ডে বিভিন্ন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বলতে শাবানের ১৫ তারিখ শবেবরাত বলে উল্লেখ করেছেন।

    অপর এক তাফসীরে রুহুল মাআনিতে আল্লামা আলূসী (রহ.) ২৫-২৬তম খন্ডে ১৪৮ পৃষ্ঠায় বৈরুত ছাপায় তিনি বিশিষ্ট তাবেয়ী হজরত ইকরামা (রহ.) ও তাবেয়ীনদের এক বিরাট দলের মত উল্লেখ করে হাদিসের বর্ণনায় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের বর্ণনা দেন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রজনীতে শবেবরাত বলে উল্লেখ করেন।

    অপর এক তাফসীর তাফসীরে কাশশাফ চতুর্থ খন্ড ১৫৩ পৃষ্ঠায় একই বর্ণনা পাওয়া যায়।

    অপর এক তাফসীর, কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসীর আল জামিউল আহকামে ইমাম কুরতুবী (রহ.) তাঁর তাফসীরের ৮ম খন্ড ৪৩২ পৃষ্ঠায় শবেবরাত সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন সুরা দোখানের লাইলাতুন মোবারাকাত প্রসঙ্গে।

    হাদিসে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে

    শাবান মাসের ১৪ তারিখকের দিবাগত রাতকে সহিহ হাদিস অনুসারে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ‘শবে বরাত’- কুরআনের যে আরবি শব্দটির অনুকূলে পালিত হয়ে আসছে তা হলো-‘লাইলাতুল মুবারাকা’। আমি পূর্বেই যার উল্লেখ করেছি। আবারও উল্লেখ করছি-

    إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى” لَيْلَةٍ مُّبَٰرَكَةٍۚ” إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

    অর্থ: নিশ্চয় উহা মোবারকময় একটি রাত্রির মধ্যে অর্থাৎ বরকতময়, কল্যাণময় বা বর্ধিষ্ণুতা দানকারী রাত্রির মধ্যে নাযিল করেছি।

    হাদিস শরিফে যাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। এই মধ্যদিবস শাবান মাসের ১৫ তারিখ।

    সিহা সিত্তার হাদিসে ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি শরিফের উদ্ধৃতি থেকে পবিত্র শবেবরাত সম্পর্কে লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫ তারিখ শবেবরাত উল্লেখ করে বেলায়েতের সম্রাট মাওলা হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (আ.) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মধ্য শা’বানের রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায়, ইবাদত-বন্দেগী করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কেউ কোন রিযক প্রার্থনাকারী আমি তাকে রিযক দান করবো। আছে কেউ কোন বিপদে আরোপিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থতা দান করবো’। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। [ইবনে মাজাহ, বায়হাকী শরীফ]

    সূত্র : www.bishleshon.com

    শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত

    শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’

    ইসলাম

    ধর্ম

    ধর্ম শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত

    শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২১, ০৬: ৩০

    শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

    কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)।

    হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)।

    নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন’

    হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

    হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)।

    রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।

    এ ছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোজা তো আছেই, যা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামেবিদের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)।

    এ ছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয় এবং শবে বরাতের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মুমিনিনগণ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এভাবে নফল রোজা রাখা শুরু করতেন, মনে হতো, তিনি আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। (মুসলিম)।

    মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com

    ইসলাম থেকে আরও পড়ুন

    শবে বরাতলেখকের কলামশাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    মন্তব্য করুন

    শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী নিয়ে আরও পড়ুন

    বরকতময় শাবান মাসের করণীয় আমল

    শবে মিরাজ: মানবজাতির কল্যাণময় উপহারপ্রাপ্তির রাত

    কিয়ামতে আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন যাঁরা

    সূত্র : www.prothomalo.com

    আপনি উত্তর বা আরো দেখতে চান?
    Mohammed 23 day ago
    4

    বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?

    উত্তর দিতে ক্লিক করুন