সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর পান।
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো, সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি আলোচনা কর, সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে? সমাজবিজ্ঞানের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো
আরকে রায়হান 14 Jan, 2023
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করো
সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে? সমাজবিজ্ঞানের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সংক্ষেপে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাই মানুষের স্বভাব। আদিমকাল থেকেই মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সমাজকে জানতে চেয়েছেন।এর ফলশ্রুতিতেই সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, মানুষ সামাজিক জীব, যে মানুষ সমাজে বসবাস করে । সে হয় পশু না হয় দেবতা।
সমাজে মানুষ জন্মগ্রহণ করে, এখানেই তারা লালিত-পালিত হয়। সমাজের সাথে মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ক নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন। সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের জনক। তিনিই সমাজ বিজ্ঞানের জন্ম দেন।
সমাজবিজ্ঞানের শাব্দিক বিশ্লেষণ : সমাজবিজ্ঞানের ইংরেজি শব্দ Sociology। এটি ল্যাটিন শব্দ Socious এবং গ্রিক শব্দ Logos সমন্বয়ে সৃষ্টি। Socious শব্দের অর্থ হচ্ছে সমাজ আর Logos শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। সুতরাং আমরা বলতে পারি sociology শব্দের অর্থ হচ্ছে সমাজের জ্ঞান ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সময়ে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেন, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইমের মতে, “সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।”সমাজবিজ্ঞানী সিমেন বলেন, “সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা মানব সম্পর্ক অধ্যয়ন করে।”সমাজবিজ্ঞানী গিভিংস-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক ঘটনাবলি বিজ্ঞান।”সমাজবিজ্ঞানী কোভালেভস্কির মতে, “সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক সংগঠন এবং সমাজ পরিবর্তনের বিজ্ঞান।”স্পেন্সার-এর মতে, “মানবগোষ্ঠীর জীবনাচরণের পঠন পাঠনই সমাজবিজ্ঞান ।”সমাজবিজ্ঞানী Max Weber-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক কার্যাবলির অধ্যয়ন এবং সামাজিক কার্যাবলির মধ্যে একটি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে ব্যাখ্যা দান করা। ”সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে পাঠ করে ।”→ সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি : সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান। অন্যান্য বিজ্ঞানের মত সমাজবিজ্ঞানের নিজস্ব প্রকৃতি বিদ্যমান ।১. সমাজের অখণ্ড আলোচনা : সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা সমাজের সকল দিক আলোচনা করে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের ক্ষুদ্র বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে সমাজের বৃহৎ বিষয়বস্তু আলোচনা করে। তাই সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের অখণ্ড আলোচনাকারী বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।২. সমাজের গঠনপ্রণালি বিশ্লেষণ : সমাজ বিজ্ঞানের অন্যতম দিক হলো সমাজের গঠনপ্রণালি বিশ্লেষণ করা। সমাজ কিভাবে গঠিত হয়েছে।সমাজের গঠনপ্রণালি বিশ্লেষণ করা উৎপাদনের যৌক্তিক বস্তুনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করাই সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম ধরন। সমাজবিজ্ঞান এর মাধ্যমে সমাজের গঠনপ্রণালি সম্পর্কে জানতে পারি ।
৩. মানব সম্পর্ক নির্ণয় : সমাজবিজ্ঞান মানব সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। সমাজে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মানুষের সাথে গোষ্ঠীর সম্পর্ক, সমাজের সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সাথে সম্পর্ক নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে ।৪. বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা : সমাজবিজ্ঞান সমাজের সার্বিক দিকের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করে । সমাজ বিজ্ঞানের আলোচনার মূল বিষয় হলো বিজ্ঞানসম্মত পাঠদান করা।সমাজব্যবস্থা ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান দান করে । তাই সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয়।
৫. সমাজের বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা : সমাজবিজ্ঞান সমাজের বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা করে । সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা করে থাকে।সমাজবিজ্ঞান | সমাজে উদ্ভব কোন ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। কেন এর উৎপত্তি, | কিভাবে এটি দূর করা যায়। এসব প্রশ্ন নিয়ে সমাজবিজ্ঞান গবেষণা করে ও এই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে ।
৬. সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়ন : সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত।যেসব প্রতিষ্ঠান সমাজের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো হলো, পরিবার, বিবাহ, দল, গোষ্ঠী ইত্যাদি। সমাজবিজ্ঞান এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
৭. আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান দান : সমাজবিজ্ঞান সমাজে বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। তাই আমরা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের আচরণ সম্পর্কে অবগত হতে পারি। এছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিবাহ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ইত্যাদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে ।৮. সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা : সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। সমাজের এই পরিবর্তনের ফলে সমাজের কৃষ্টি কালচার পরিবর্তিত হয়। সমাজের এই বহমান স্রোতের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করে।৯. নিরপেক্ষতা : সমাজবিজ্ঞানকে নিরপেক্ষতার বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । সমাজবিজ্ঞান, সমাজের পরিবর্তনশীল ব্যবস্থাবলি ও গঠন কাঠামোবলি নিয়ে আলোচনা করলেও এটি সমাজের কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ, উচিত ও অনুচিত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে না। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষতার পরিচয় দেয়।শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি, পরিধি এবং সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি, সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি, পরিধি এবং সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক
0
Koushik Das September 22, 2021
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান
সমাজবিজ্ঞান'Sociology' শব্দটি এসেছে Latin শব্দ 'Socious' এবং 'Logos' থেকে। 'Socious' কথাটির অর্থ হল 'Society' (সমাজ) এবং 'Logos' শব্দটির অর্থ হল 'Science' (বিজ্ঞান)। সুতরাং 'Sociology' কথার আক্ষরিক অর্থ হল 'Science of Study'.
সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র। এতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। অগাস্ট কোঁৎ- এর Positive Philosophy গ্রন্থে প্রথম Sociology শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
Max Weber, এর মতে- সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব হল এমন একটি বিজ্ঞান যা সামাজিক কাজের উদ্ভাসনমূলক অনুধাবনের চেষ্টা করে যাতে সামাজিক কাজের গতি ও ফলাফলের কারণভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করা যায়।ম্যাকাইভার ও পেজ, এর মতে- সমাজবিদ্যা হল মানুষের সাথে মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও সামাজিক সম্পর্কের জালিকা বিস্তার নির্ধারণকারী শাস্ত্র।According to Duncan, Sociology is the scientific study of dynamic process of the interaction of person.
সুতরাং, উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণে বলা যায়, সমাজের মধ্যেকার ব্যাক্তির সম্পর্ক, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং গোষ্ঠীর কার্যাবলী নিয়ে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়ে থাকে, তাই হল সমাজবিজ্ঞান (Sociology)।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান (Educational Sociology)
শিক্ষাবিজ্ঞান হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা মানুষের আচরণ ধারায় পরিবর্তন আনে এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে অভিযোজনে সহায়তা করে। সামাজিক পরিবেশেরই একটি প্রধানতম উপাদান হলো মানুষ। সমাজের মধ্যে প্রত্যেকটি মানুষের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যেদিয়ে উপলব্ধি করতে শেখে এবং সেই উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে তার বোধের বিকাশ হয়। সমাজ এবং ব্যক্তির পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি নির্দিষ্ট বিষয়সূচি এবং বিষয়জ্ঞান, যাকে বলা হয় শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান (Educational Sociology)।
শিক্ষাবিজ্ঞান এবং সমাজতত্ত্ব হল দুটি পৃথক বিষয় বা শাখা। তবে আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে সকলেই যে শিক্ষা সমাজতত্ত্ব আর শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পার্থক্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন তা বলা যায় না। যারা দুটি বিষয়কে পৃথক বলে মনে করেন , তারা এর কিছু পার্থক্য নির্দেশ করেছেন যা শুধুমাত্র এর গুরুত্বের ভিত্তিতে।
শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব মিলিতভাবে যে বিদ্যা চর্চার সূচনা করেছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তার তিনটি ভিন্ন অভিমুখ দেখা যায়। যথা,-
শিক্ষার সমাজতাত্ত্বিক ভিত্তি (Sociological Foundation and Education)
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব (Educational Sociology)
শিক্ষা সমাজতত্ত্ব (Sociology of Education)
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা হিসাবে বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকদের বক্তব্য, শিক্ষার প্রশাসন ও প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্বের সাধারণ নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহের প্রয়োগ। এই অভিমুখ অনুযায়ী শিক্ষাকে একটি স্বতন্ত্র সামাজিক একক হিসাবে গণ্য করে সমাজতাত্ত্বিক নীতির প্রয়োগ করা হয়েছে।
Ottaway এর মতে, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারে মাধ্যমে সামাজিক বিষয়ের অধ্যয়ন করা হয়।
অধ্যাপক Brown বলেছেন, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করে।
Cook & Cook এর মতে, পার্থিব বিষয়বস্তু এবং মানবিক-সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও কৌশলের যে প্রয়োজন তাই হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব।
George Payne, "By educational sociology we mean that, the science which describes and explains the institutions, social groups and social processes, that is the social relationship in which and through which the individual gains and organizes his experience."সুতরাং শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব সম্পূর্ণ সমাজতত্ত্বের একটি বিশেষ দিক যা সামাজিক পটভূমিকায় শিক্ষা প্রক্রিয়ার গঠনগত ও গতিশীল বিষয়গুলি আলোচনা করে।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি (Nature of Educational Sociology)
শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব পরস্পর মিলিত ভাবে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব। এই শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের স্বরূপ বা প্রকৃতি নির্ণয়ে আমরা দেখতে পাই শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব একে অপরের দ্বারা পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট হয়ে গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি নির্ণীত হয়।
Young বলেছিলেন, মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব। তাই শিক্ষাবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের প্রয়োগগত শাখারূপে তৈরি করেছে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব।শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের প্রকৃতিগত দিক হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া। অর্থাৎ সমাজজীবনে সামাজিক গোষ্ঠী, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাপেক্ষে যথার্থ সামাজিকীকরণে উন্নত করে তোলা। এই জন্য সমাজতত্ত্ব দিয়েছে তত্ত্ব এবং তথ্য ও শিক্ষাবিজ্ঞান দিয়েছে নীতি ও কৌশল। এই দুয়ের মিলিত প্রবাহে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব। তার ফলে সমাজ , শ্রেণি , মানুষ , গৃহ থেকে বিদ্যালয় বিদ্যালয় , বিদ্যালয় থেকে মহাবিদ্যালয় এবং মানুষের কর্মক্ষেত্রে সবই সুষম বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায়বিচার ও ন্যায়বোধ , বিচার ব্যবস্থা , সমান অধিকার , সকল ক্ষেত্রেই সম সুযোগ এবং পারস্পরিক মেলবন্ধন।
প্রয়োগমূলক শাখা: সমাজবিদ্যার একটি প্রয়োগমূলক শাখা হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা। শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ঘটে।
শিক্ষা ও সমাজের সম্পর্ক: শিক্ষার সাথে সমাজের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা আলোচনা করে থাকে।
সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়ন: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতি হল শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও বিকাশ সাধন।
সামাজিক প্রক্রিয়ার প্রয়োগ: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার সাহায্যে শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযথভাবে সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির সঠিক প্রয়োগ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলােচনা কর
ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে শেখে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, মানুষ স্বভাবত
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলােচনা কর
জুন ১১, ২০২২
প্রশ্নঃ সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলােচনা কর।
অথবা, একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের স্বরূপ আলােচনা কর।ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে শেখে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। যে মানুষ সমাজে বাস করে না, সে হয় দেবতা না হয় পশু। তাই সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ প্রথম থেকেই সমাজকে জানতে চেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৩৯ সালে আগস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেন এবং সমাজবিজ্ঞানের জন্ম দেন।সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞার মধ্যেই সমাজবিজ্ঞানের প্রতি নিহিত। সমাজবিজ্ঞানের মূল আলােচ্য বিষয় সমাজ; ব্যক্তি নয়। তবু যেহেতু ব্যক্তি নিয়েই সমাজ তাই সমাজকে জানতে হলে ব্যক্তিকে জানা অপরিহার্য। সমাজ বলতে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সম্প্রদায়, দল ইত্যাদির সমন্বিত রূপকে বুঝায়। প্রকৃতি শব্দের অর্থ স্বভাব বা চরিত্র। নিম্নে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি তুলে ধরা হলাে-(১) পূর্ণাঙ্গ পাঠঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন। বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞান যেখানে সমাজের এক একটা বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করে, সেখানে সমাজবিজ্ঞান গােটা সমাজকে নিয়ে অখণ্ড আলােচনা করে।
(২) সমাজের কাঠামােগত দিকঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের কাঠামােগত উপাদান এবং গঠনপ্রণালি নিয়ে আলােচনা করে। মানবসম্পর্ক হলাে সমাজকাঠামাের ভিত্তি। আর তাই সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, ব্যক্তির সাথে গােষ্ঠীর কিংবা ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক আলােচনা করে।(৩) বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ দানঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজকাঠামাের যুক্তিপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দান করে। মানুষের সামাজিক সম্পর্কগুলাে যুক্তিহীন, বিচ্ছিন্ন বা অনর্থক নয়। সমাজবিজ্ঞান যুক্তির প্রাধান্য দেয় এবং কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করে যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ দান করে।(৫) প্রায়ােগিক বিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান একটি প্রায়ােগিক বিজ্ঞান। সমাজস্ত মানুষের আচরণ বিধি ও কার্যাবলি কীভাবে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং কিভাবে এর চলমান প্রক্রিয়া বজায় থাকে তা নিয়ে আলােচনা করার জন্য সমগ্র সমাজের মধ্যে অনুসন্ধান করতে হয়। সমাজবিজ্ঞান এ অনুসন্ধান কাজে তার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়ােগ করে থাকে।
(৬) নিরপেক্ষ বিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ হওয়া সত্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব না করে বরং নিরপক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান প্রত্যয়।(৭) সামাজিক বিষয়াবলীর অধ্যয়নঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের গতিশীলতা, স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংগঠন। সামাজিক অসমতা, বিশ্বায়ণ, নগরায়ণ, নাগরিক জীবনসহ সকল সামাজিক বিষয়াবলির বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়নের পথ প্রদর্শন করে। সামাজিক বিষয়াবলীর যথাযথ অধ্যয়নের মাধ্যমে নাগরিকগণ সচেতন নাগরিক পরিনত হয়।
(৮) গতিশীল বিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানগুলাের মধ্যে অন্যতম প্রধান গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত। কারণ সমাজবিজ্ঞান সমাজকে নিয়ে আলােচনা করে। আর মানবসমাজ সবসময় গতিশীল। তাই সমাজবিজ্ঞান মানব সমাজের গতিশীল বিষয়সমূহের আলোচনার করার কারণে একটি গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।(৯) বস্তুবাচক নয়, বিমূর্ত বিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান একটি বিমূর্ত বিজ্ঞান। এটি বস্তুগত বিজ্ঞান নয়। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান যেসব বিষয় নিয়ে আবর্তিত হয় তার কোনােটিই বস্তুবাচক নয়, সবই বিমূর্ত প্রত্যয়। যেমনঃ সমাজ, সম্প্রদায়, দল, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
(১০) সামাজিক আচরণ বিশ্লেষণঃ সমাজ হচ্ছে অসংখ্য মানুষের সমষ্টি, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আচরণের সমন্বয় দেখা যায়। বিভিন্ন বর্ণ ও গােত্রের মানুষ তাদের নিজেদের তৈরি আচরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজ এ সকল সকল মানুষের আচরণগত পার্থক্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি সমন্বয়সাধন করে। যার ফলে আমরা পরস্পরে আচরণগত সম্পর্কে অবগত হই।(১১) স্বতন্ত্র সামাজিক বিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে আলাদা। এর রয়েছে নিজস্ব বিশেষ অধ্যায়ণ পদ্ধতি, গবেষণা পদ্ধতি, বস্তুগত বিশ্লেষণ, বস্তু নিষ্ঠ ব্যাখ্যা, যা এটিকে অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে স্বতন্ত্রতা দান করেছে। সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে উদ্ভুত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃত্ত্বিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও বিশ্লেষণে সমাজবিজ্ঞান ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
(১২) সামাজিক কাঠামাে বিশ্লেষণঃ প্রত্যেকটা সমাজেরই একটা তাত্ত্বিক কাঠামাে থাকে। যা ঐ সমাজ ব্যাবস্থার ভিত্তি স্বরূপ। প্রত্যেকটি সমাজেরই সমাজ কাঠামাে তাদের মৌলিক সম্পদ। আর সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর সমাজ কাঠামাের বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রদান করে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন জাতি গােষ্ঠীর সামাজিক কাঠামাে সম্পর্কে অবগত হতে পারে।(১৩) যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞান-ভিত্তিক অধ্যায়ণঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজ, সভ্যতা, সমাজ কাঠামাে, সামাজিক অসমতা, সামাজিক স্তর বিন্যাস, দারিদ্র্য, সামাজিক গতিশীলতা, গােষ্ঠীগত আচরণ, সমাজের গঠন প্রণালী ও নৈতিক আচরণাবলি ইত্যাদির যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এসকল বিষয়কে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে।
(১৪) সামাজিক পরিকল্পনার বিশ্লেষণঃ সমাজবিজ্ঞান সামাজিক পরিকল্পনার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণনির্ভর বিজ্ঞান। এটি সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি নির্ধারণ, সম্ভাব্য ফলাফল, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে। এ ছাড়া সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নে গৃহীত বহুবিধ পরিকল্পনার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও এর প্রধান কাজ।পরিশেষঃ আলােচনার স্বল্প পরিসরে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হলাে সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক বা বস্তুনিষ্ঠ অধ্যয়ন। ব্যক্তি এবং সমাজজীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র এতে স্থান পেয়েছে, তাই এর প্রকৃতি অত্যন্ত ব্যাপক। সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় তথা মানুষের যাবতীয় মানবীয় আচরণ সম্পর্কে জানতে হলে প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?