হিয়াল মতি গাছ
Mohammed
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?
এই সাইট থেকে হিয়াল মতি গাছ পান।
নিষিদ্ধ হরিবালা
নাগরিক পথ। পথ মানে বড় কোনো সড়ক নয়। আবার ঘুপচি গলিও নয়। মাঝে মাঝে মাছি-ভনভন-করা এঁদো খানাখন্দ। আসা-যাওয়ার অসচ্ছল এক ব্যবস্থা মাত্র। প্রচণ্ড কোলাহল নেই। মানুষের যাওয়া-আসা আছে। তবে সীমিতই […]
নিষিদ্ধ হরিবালা
Home > ছোট গল্প > নিষিদ্ধ হরিবালা
August 31, 2022 0 Comments ছোট গল্প ছানোয়ার হোসেন
নাগরিক পথ। পথ মানে বড় কোনো সড়ক নয়। আবার ঘুপচি গলিও নয়। মাঝে মাঝে মাছি-ভনভন-করা এঁদো খানাখন্দ। আসা-যাওয়ার অসচ্ছল এক ব্যবস্থা মাত্র। প্রচণ্ড কোলাহল নেই। মানুষের যাওয়া-আসা আছে। তবে সীমিতই বলা চলে। চঞ্চল পায়ে চলতি মানুষগুলি কেউ কাউকে চেনে বলে মনে হয় না। যেন অচেনা অন্যরকম মানুষ। বড় যানবাহন তেমন চলে না ওপথে। রিকশা-ইজিবাইক চলে সন্তর্পণে।
রাস্তার দু-পাশে বিচিত্র বর্জ্যরে স্তূপ। কিছু বেওয়ারিশ কুকুর ময়লা ঘেঁটে বিশ্রী গন্ধ ছড়াচ্ছে। ড্রেনের দুর্গন্ধ বয়ে চলা বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যারা এই রাস্তায় চলছে তাদের নাকে-মুখে কোনো রুমাল নেই। চোখে-মুখে কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। জানি না তাদের হৃদয়ের ধূপদানিতে কি এমন সুরভি রয়েছে যা ভেদ করে ওই বাজে গন্ধ সুবিধা করতে পারছে না।
প্রবেশদ্বারের পাশেই নগর কর্তৃপক্ষের একটি ছোট্ট অফিসঘর। তারই পাশে অযত্নে জন্ম নেওয়া আমগাছটি নতুন তামাটে পাতায় যেন নবীনকে আহ্বান জানাচ্ছে। গাছকে সীমানা ধরেই ছোট ছোট ঘর। গলির ভেতর গলি। দূর থেকে নির্জন মনে হলেও ভেতরটা বেশ ফুর্তির ফুলকিতে জাঁকালো। ছোট ছোট দোকানে নানা ধরনের প্রসাধনী। সারি সারি ঝুলে আছে গর্ভনিরোধকের প্যাকেট। পরিবেশ জমজমাট করে তুলতে বাজছে ছোট ছোট সাউন্ড বক্সে শরীর-মন উতলকারী বাদ্য-বাজনা। পাশেই পঞ্চাশোর্ধ্ব বিগতযৌবনা এক হরিবালা ক্ষয়িষ্ণু শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে নেশার ঘোরে নেচে নেচে গেয়ে চলছে, হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো … পার করো আমারে।
তৈরি পোশাকের দোকানের ডামি পুতুলের মতো রাস্তার পাশে অথবা দোকানে হেলান দিয়ে সাধ্যমতো রঙে নিজেকে রাঙিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে আছে রঙ্গিলারা। বিভিন্ন বয়সী এসব রঙ্গিলা অপেক্ষা করছে রসিকজনের আশায়। কারো বা জুটছে, কারো বা দিনভর খররোদে দাঁড়িয়ে আশার ঘাম ঝরানোই সার। পোড়া কপাল আরো পুড়ে যায় যেন তাদের।
মনের চোখে তাকালেই নিঃস্ব ত্বকে শুধু মরীচিকার বেদনা ঝংকার দিয়ে কেঁদে উঠছে। ওদের ঝাঁকড়া চুলগুলো যতই বাহারি সাজে সাজানো হোক না কেন, দেখাচ্ছে ধুলোমাখা পাটের আঁশের গোছার মতো। তার ভেতর থেকে ভুরভুর করে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র সুগন্ধ। কেউ বা খোঁপায় পরেছে রকমারি কৃত্রিম ফুল। কারো নাকে নোলক, কারো বা মাথায় সিঁদুর। হেলেদুলে হাঁটছে। হাঁটাতেও বাহারি ঢং। চোখের পাতার স্পন্দনে যে-ভাষাই থাকুক না কেন চোখের আলোয় কেবল খুঁজছে নিধুবনে নিধুয়া বন্ধুকে। নিমন্ত্রণের নিপুণ আহ্বানে যেন কামানল জ্বালিয়ে তোলা সারাক্ষণ। এরই মধ্যে রসিকতা হাসি-তামাসা-ঠাট্টারও কমতি নেই। যতই রসে রসে রসের ফোয়ারা উছলে উঠুক, চোখ কেবল ফিরে ফিরে খোঁজে রসিকজন।
আসা-যাওয়ার মানুষগুলি চেনা-অচেনায় মেশামেশি। হঠাৎ নতুন মুখের উদয় দেখলেই হার-হাভাতের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওরা ঝাঁকবেঁধে। টানা-হেঁচড়া আর পরস্পরের প্রতি খিস্তি-খেউড়ের ঝংকার তোলে। যেন জীবনের শেষ লড়াই। অথচ ভালোবাসা নেই, কোনো প্রেমের আকর্ষণ নেই, নেই কোনো আবেগ, তবুও নিজ ঘরে তোলার ধূর্ত বিস্ময়কর এক প্রতিযোগিতা। অবশেষে লড়াই থেমে যায়। একজন মাত্র রায়বাঘিনী শিকার কব্জা করে। তখন চারদিকে হঠাৎই যেন ঝড়-থেমে-যাওয়া শান্ত পরিবেশ। পেছন থেকে কেউ একজন উচ্চকণ্ঠে রস করে বলে – ‘যাও গো দুলাভাই যাও, বুবুর কমলাই খাও।’ এ এক বিস্ময়কর বাঁচার লড়াই। বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করছে ওরা। এমন দক্ষতা ওরা পেল কোথা থেকে? পশুর সন্তানেরা যেমন প্রকৃতি থেকেই সব শেখে, হয়তো ওরা এই জটিল পরিবেশ থেকেই অর্জন করে এমন কৌশল।
হঠাৎ ওপাশে শুরু হয় হরিবালার প্রেতনৃত্য। রক্তাভ ক্রুদ্ধ চোখের গোলক তার। অগণিত কালনাগিনীর ফণার মতো উচ্ছৃঙ্খল কেশরাশির উত্থান-পতন। ত্রস্ত করাতির করাত টানার মতো একবার এগোয়, একবার পিছিয়ে আসে। ও অমন কেন করছে? কেন এমন রুদ্রমূর্তি তার? সবাই যে যার অবস্থানে বিস্ময়ে স্থির। এমন উটকো দৃশ্য অবাক হয়ে দেখছে সবাই। অবসাদে অবসন্ন ভাঙা শরীরে সে কী তেজ হরিবালার! কাঁধে ঝোলা। পরিপাটি চুল। সুশোভন সাজপোশাক। হরিবালার প্রবল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নিতান্ত এক ভদ্রলোক। কে এই ভদ্রলোক? দেখে মনে হয় সে এই কুঞ্জবনের মধুকুপি নয়। তবে কেন এসেছে এখানে? কী চাই তার? জীর্ণ শরীরের বিগত যৌবনের মøান আলোয় তীব্র তীক্ষè অশ্রাব্য বাক্যবাণ নিক্ষেপ করছে হরিবালা তার দিকে। লোকটি যেন নিরীহ অপরাধী প্রজার মতো। মহারানীর রোষানল নিবারণে অনুনয়ে স্তুতি করছে। ‘খালা খালা’ বলে আপন পরিচয় বোঝাতে চেষ্টা করছে। তবু মহারানী বলেই চলেছে।
‘হুন হুন, কথা কম। খালা! কিয়ের খালা। জানি জানি কোনো হালাই মামা অয় না। ঘরে যাবি চল। আমার পেটে খিদা আছে, তোর খাই খাই আছে। সব খিদা মিটাইতেই টেহা লাগে। আগে দেও। তারপর চল ঘরে যাই। বুঝছি তুই সাংবাদিক। আরে কত সাংবাদিক দেখলাম। রিপোর্ট লেখব কইয়া ডর দেহায়। কাম কইরা টেহা না দিয়াই যায়গা। সরকারি লোক কামও হাসিল করে আবার ঘরে যা থাহে তাও নিয়া যায়। ভদ্দরলোক! পুরুষ মানুষ আবার বালা মানুষ হয় নাকি! ইডা আমারে কবার আইছোস। কাইট্টা পর, নাইলে টেহা আগে দিয়া ঘরে চল। এহনও আমার গতরের রস ফুরায় নাই। আরো ঘন হইছে।’
হরিবালার কথায় তার জীবনসংগ্রামের গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে ভেসে আসছে বুভুক্ষু শ্বাপদের বর্বর চিত্র। সত্য যে কঠিন। কঠিনেরে ভালোবেসেই হরিবালাদের জীবন। লোকটি কিছু খাবার নিয়ে আসে। খাদ্যের গন্ধে চিত্তের বরফ গলতে শুরু করে। ক্ষুধায় কাতর হরিবালার পেট যেন জ্বলে যাচ্ছে। খাবার খেতে হলে আচরণে শালীনতা চাই। ভোল পাল্টায় হরিবালা। পরিবেশ শান্ত হয়। চারপাশে যারা দর্শক ছিল তারা যে যার মতো সরে পড়ে। লোকটি হরিবালার জীবনের গল্প শুনতে চায়। হরিবালা খাবারসমেত লোকটিকে নিয়ে পাশের এক বেঞ্চিতে বসে পড়ে। খেতে খেতে কথা শুরু করে হরিবালা।
‘আমার নাম আছিল জরিনা। তহন আমার বয়স কত অব – তেরো কি চইদ্দ। কামলা বাপ খাওন দেয় কুনোমতে। কাপড় দিবার পারে না। চায়ে-চিন্তে নিয়া আসে। ছিঁড়া-মিরা দিয়ে বুকটুক বাইর অয়ে যায়গা। কেছরা কেছরা গোলামেরা ইডা-ওডা কয়। বিয়ার ঘরও আইছে দুই-একডা। অভাবে পুইড়া পুইড়া খাইতেছে এহাবারে। এর মইদ্যে একদিন বিল থেইকা হাঁস নিয়া বাড়ি আইতাছি। বেলা যায় যায়। পরচিম মুহি চাইয়ে দেহি আসমানের বুকের মইদ্যে বেইলডা যেন টকটকা লকেটের নাহাল ঝুলতাছে। এইডা না দেইখা মুনডার মইদ্যে চিরিক দিয়া উঠল। যেন নাখে নাখে পোর্জ্জাপতি ঝিলকাইয়া উইড়েল দিয়া উঠল। আমার বিয়ার কথা মনে অইছিল।
শেখ লুৎফরের গল্প : শিকার
শেখ লুৎফরের গল্প : শিকার
জুন ১৭, ২০১৫
চড়াদামে হাইব্রিড ধানের বীজ কিনবে কি কিনবে না, এই দ্বিধায় দুলতে-দুলতে বুড়ো মুন্তু সার-বীজের দোকানের কাছে এসেও থপ্ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই সকাল থেকে তার সারা শরীর জুড়ে কেমন একটা ল্যপ্টা-ঝ্যাপ্টা অসাড়তা। মাঝে-মধ্যে তার কানের কাছে কে যেন চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে বলে যায়- সংসারটা মিছে, সত্যি-সত্যিই মিছে।
দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে মুন্তু ভুস করে একটা দম ছাড়ে। চোখে ভাসে অকর্মা ছেলে দুটোর মুখ আর তাতেই মুন্তুর মন-মর্জি আরও বিগড়ে যায়। কার জন্য সে খাটবে, কার জন্য এই হাইব্রিড ধানের বীজ? যেন-তেন করে তার জীবনের বাকি দিনগুলো কেটে গেলেই তো হয়।
মানুষটা তার নিজের অজান্তে হাত দুটো কুলের ওপর ভাঁজ করে রেখে দুটো চোখের চাউনি চিলের মত সরু-শাণিত করে বাজারের চারপাশটা দেখে; কী গোপন আমোদেই না অঘ্রাণের এই দুপুরটা উড়াল দিতে চাইছে!
-হুঁ...
মুন্তু হুঁ বলে কিসের জন্য যেন নিজেকে তৈরি করে।
একহারা পিচ রাস্তাটা দু-পাশের ফসলভরা মাঠের মাঝে হঠাৎ হেঁচকি মেরে গজিয়ে ওঠা বাজারটাকে দু-ফালা করে সোজা নাক বরাবর ছুটে গেছে।
অঘ্রাণের এই আমেজি দুপুরে বাজারের দোকানগুলোর ঝাঁপ খোলা থাকলেও লোকজন তেমন একটা নেই। শুধু সার-বীজের একমাত্র দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আশ-পাশের গেরামের কয়েকটা চাষা। সেও ওদের দলেরই একজন কিন্তু তার মন-মর্জিটা কোনোকালেই ওদের মত হল না।
মুন্তুর শরীরটা কেমন টাল-মাটাল; উদগারের আগে যেমন হয়। তবু সে মাথা তুলে ফের বাজারের সবটা পরখ করে--আজ কতদিন! কতদিন...তার কোনো প্রাপ্তি নেই, সুখ নেই। অর্জনহীন নিষ্ফলা জীবন লবন-লঙ্কা ছাড়া পান্তা-ভাতের মত।
হঠাৎ মুন্তু চমকে ওঠে, বাজারের দক্ষিণ দিকের সেলুনটায় বসে; ও কে? দুই হাত মুঠো করে মুন্তু শিশুর মত চোখ দুটো কচলায়। নজরের জেল্লা অনেক আগেই ভোঁতা হয়ে গেছে। কয় হাত দূরের মানুষের মুখ চিনতে কেমন বেজান বেজান লাগে। সেলুনে বসে ক্ষুরের নিচে গাল পেতে আছে; মানুষটা ক্যাডা...হবিবুল্লা না? চমক-খাওয়া মুন্তুর কোটরাগত চোখ দুটো ঝলকে ওঠে। অনেক দিন আগে শুনা একটা কিচ্ছার মত তার যেন কী মনে পড়ে। আর মুন্তু এও লক্ষ করে, সেলুনে বসে হবিবুল্লা খুব মৌজ করে আলাপ করছে। তার মনে হল; এক্ষণে হবিবুল্লা শুধু আলাপ করছে না, বহুত ক্যারদানি মারছে। গত ক-বছরে ও শালার শরীরের চেকনাই একটু একটু করে বাড়ছে আর সাথে সাথে গপ্পের যোশটাও বেশ লায়েক হয়েছে। আজ-কাল হবিবুল্লা বেশ গুছিয়ে আলাপ চালাতে পারে।
মুন্তু পুচ করে থুথু ফেলে। আঁত-নাড়ির গভীর থেকে তেতু ঢেকুর আসছে। সেই কখন ল্যাড়ের মত পাতলা কয় চামচ ঝাউ খেয়েছে, তাতেও এখনো তার পেটটা টকটক বিস্বাদে ভরে আছে। শাকচুন্নির মত তার বুড়ি মাগীটা খালি কথায় কথায় বিষ ঢালে। ঘরে মুহূর্তের জন্যও মুন্তু টিসকিতে পারে না। আর তার জোয়ান পুলা দুটো...
ছেলেদের কথা মনে পড়তেই মুন্তুর হাত দুটো শিরশির করে ওঠে। কু-পুত্রের রক্তে যদি তার হাত দুটো ভেজাতে পারতো! কিন্তু তা কি-করে হয়?
মুন্তু খক করে বড় একটা কফের দলা ফেলে ফের সেলুনটার দিকে তাকিয়ে আড়ে-আড়ে হবিবুল্লাকে দেখে। বর্তমানে গেরামের অনেকেই হবিবুল্লার মত নগদ মালপানিতে ঝিলঝিলা। মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া আর আরবের টাকা এখন তার আশপাশেও কড়-কড় করে নাচে।...আর এই মুহূর্তে সে ঐ টাকার কথা ভাবতে-ভাবতেই কি কিঞ্চিত ভড়কে গেলো? সে কী যেন ভাবছিল...। একটা জটিল স্রোত সময়কে যেন ঠেলা দিয়ে হড়কে যায় আর তাইতো মুন্তুর ভেতরটাও এলোমেলো হয়ে ওঠে। সে আবার হবিবুল্লাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে--হবিবুল্লার দু-দুটো পোলা আরব দেশে, আর ছোটটা ঢাকার কোন ফ্যাক্টরির পিও না এমও পোস্টে। সকাল থেকে সন্ধ্যা তক হবিবুল্লা পাক দিয়ে পাক দিয়ে বাজারে ওঠে। ফিনফিনা পাঞ্জাবির পরতে-পরতে ক্যারদানি ফোটে থাকে। মুন্তু যেন ভেতরে-ভেতরে কিসের একটা তাড়া বোধ করে। কী একটা জিনিস যেন আউলা-ঝাউলা হয়ে আছে; একটু সিযিল করতে হয়।
মানুষটাকে লোকে আগে হাইব্ব্যা বলেই ডাকতো কিন্তু হাতে মাল্পানি আসতে-না-আসতেই সে এখন হবিবুল্লা।
সালামালাইকুম-- মুন্তু সালাম দিয়ে হবিবুল্লার সামনে দাঁড়ায়। তাহলে মুন্তু ট্যাং-ট্যাং করে হাঁটতে-হাঁটতে তার ভাবনার পরিধি ধরতে পেরেছে--এমন চিন্তায় সে মনে-মনে খুশি হয়।
সদ্য চুলদাড়ি-ছাঁটা হবিবুল্লা ঝেড়ে-ঝোড়ে সাফ হচ্ছে; সালামের শব্দে একটু তড়িতে মাথা তুলে মুন্তুকে দেখে। দোমড়ানো শরীরের মুন্তু তিন বেঁকা দিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে আলাপের গলা বাড়িয়ে আছে দেখে হবিবুল্লা প্রথমে একটু অবাক হয়। মন্তু একটু ধীরিক ধরে জিজ্ঞেস করে-
-কেমুন আছেন?
-ভালাই আছি কিন্তুক তুমি এই দিকে ক্যা?
-না,কয়ডা হাব্রিড বীজ কিনতে আইছিলাম।
-হ, অহনত হাইব্রিডেরই যুগ..., ফলন বেশি, সার বেশি...সব বেশি বেশি লাগে।
হবিবুল্লা লুঙ্গি ঝাড়া দিয়ে মাথা তোলে। আর এই ফাঁকে সেলুনের আয়নায় মুন্তুর নিজের মুখাবয়ব চোখে পড়ে; ভূত দেখার মত সে চমকে ওঠে।
-ক্যাডা এইডা?
আয়নায় চোখ রেখে মনে মনে তালাশ করতে-করতে সে ধরতে পারে মানুষটা কে। তাহলে এই সে! কত বছর, কত যুগ পর সে নিজেকে নিজে দেখে ভেতরে ভেতরে খান খান হয়ে যায়। হলুদ কেঁতুরভরা চোখ দুটোর মাঝে শকুনের ঠোঁটের মত নাকটা। চুল-চামড়া আর শরীরের যা অবস্থা তাতে সে একটা নিখাদ ভিক্ষুক, না একটা শকুন, না, না--একটা উপমাও তার মনমত হলো না; এক নজরে সে আয়নায় যে মূর্তিটা দেখেছে, আসলে সেটা একটা বুড়ো সাপ: ক্রোধহীন বিদ্বেষে ক্লান্ত।
সারবাঁধা দোকানের সামনে দিয়ে হবিবুল্লা বাজারের উত্তর দিকে হাঁটে। একটু বে-ভুলা ছন্দে ডাশ মাছির মত হুলে বিষ ও তৃষ্ণা নিয়ে মুন্তুও পেছন পেছন ট্যাং-ট্যাং করে হাঁটে। কানাইয়ের স্টলের সামনে এসে হবিবুল্লা অপেক্ষা করে, দক্ষিণ থেকে একটা ট্রাক মাটি কাঁপিয়ে আসছে। গাইয়ের পিছে বাছুরের মত সাথে একটা টেম্পুও। উড়ন্ত ধূলা থেকে রক্ষা পেতে হবিবুল্লা বাঁ হাতে নাক চেপে ধরে। মন্তুর কোনো প্রস্তুতি নেই। সে ঝিম মেরে আছে। আসলে বুড়োটা ভিত্তে-ভিত্তে দাঁত ধারাচ্ছে, যা তার নিরীহ মুখ দেখে কেও কস্মিনকালেও ভাবতে পারবে না। হবিবুল্লার ঘাড়ে একটা মাঝারি ভাঁজ পড়েছে; যদিও একটাই তার বর্তমান সুখি জীবনের একমাত্র সাইনবোর্ড নয় কিন্তু মন্তুর কাছে আপাতত এটাই বেশি বিপজ্জনক। হবিবুল্লার এই অর্জনটি যেন চারপাশের গ্রামগুলোর সব মন্তুদেরকে সারাক্ষণ টিটকারি দেয়, আর নিজের সুখের বিস্তর বয়ান করে।
-অ-মন্তু খাড়ায়া রইলা ক্যা, বও।
-জে, জে।
-তোমার পোলারা অহন কোনডা কোন দিকে?
হবিবুল্লার কথায় মন্তু কানাইয়ের স্টলের টুলে বসতে-বসতে চোখ দুটোতে ঝামরি কেটে তীক্ষ্ণ-সচেতন হয়ে ওঠে।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রায় দুই দশক আগে ড. নওয়াজেশ আহমদ-এর লেখা 'Wild Flowers of Bangladesh' গ্রন্থের প্রচ্ছদে শিয়ালকাঁটা ফুলের মনোমুগ্ধকর ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২৩ । ০৮:৩৮ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২৩ । ০৮:৪৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি
কাতার সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফেরেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাতার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এলডিসি-৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টে যোগ দেন। সেসব অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি, প্রবাসী শ্রমিকদের ইস্যুসহ দুই দেশের দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে আলাপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সাবা কোরোসি, কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেইখা মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আরও পড়ুন
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় ক্রিকেট দলকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
তারা সবসময় চায় একটা অসাংবিধানিক সরকার থাকুক
মধ্যরাতে জাবির তিন হলে ঢুকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত
‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে জয়ী করতে হবে’
Download Samakal App
Subscribe Youtube মন্তব্য করুন
রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে ইরান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২৩ । ০৮:০২ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২৩ । ০৮:১১
রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সুখোই-৩৫ কিনছে ইরান। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরান মিশনকে উদ্ধৃত করে সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবি এমন তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,জাতিসংঘে ইরান মিশনকে উদ্ধৃত করে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি জানায়, সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কারিগরিভাবে ইরানের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং এই যুদ্ধবিমান কেনার জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেছে ইরান।
ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ইরানি ড্রোন ব্যবহার নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে ইরানের যুদ্ধবিমান কেনার খবর সামনে এলো।
আইআরআইবির প্রতিবেদনে অবশ্য যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তির বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য ছিল না। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরান মিশন আরও কয়েকটি অজ্ঞাত দেশ থেকেও সামরিক উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন
ইরানের স্কুল ছাত্রীদের বিষ প্রয়োগের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০০
কঠিন সমীকরণের ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে নেই শামসুন্নাহার
সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় 'সম্মত' সৌদি আরব ও ইরান
স্কুল ছাত্রীদের বিষপ্রয়োগের ঘটনা ‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’: খামেনি
Download Samakal App
Subscribe Youtube মন্তব্য করুন
বন্ধুরা, কেউ কি উত্তর জানেন?